সিলেটে বিদ্যুৎ, গ্যাস সমস্যা সমাধানে চিঠি দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ আগস্ট ২০২৩, ৬:২৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
লাগাতার লোডশেডিংয়ে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে সিলেটের জীবনযাত্রা। থমকে যাওয়ার উপক্রম সবকিছু। এই অবস্থায় পানি সংকটও তীব্র আকার ধারণ করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যও স্থবির। দুটি বিসিক শিল্পনগরীতেও খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে হাঁপিয়ে উঠেছেন সিলেটের মানুষ। দিনে ও রাতে সমানতালে লোডশেডিং। শহরের চেয়ে গ্রামের পরিস্থিতি ভয়াবহ। বিষয়টি নজর এড়ায়নি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের এমপি ড. একে আব্দুল মোমেনের। পরিস্থিতির উন্নতি করতে দুটি বিষয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী (বীর বিক্রম)-এর কাছে এ চিঠি দিয়েছেন তিনি।
ওই চিঠিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধানের অনুরোধ করেছেন মন্ত্রী। গত সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আগে সিলেটের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিকই ছিল।
কিন্তু নির্বাচনের পর থেকে শুরু হয় লোডশেডিং। দেড় মাস ধরে লোডশেডিংয়ে নাকাল সিলেটের মানুষ। শুধু লোডশেডিংই নয়, মাঝে মধ্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ওই কেন্দ্র থেকে সিলেট বিভাগের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। গত ১৫ দিনে ওই কেন্দ্রে দু’দফা গোলযোগ ঘটেছে। এতে করে গোটা বিভাগে কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় ধীরে ধীরে ক্ষোভও বাড়ছে সিলেটে। এই অবস্থায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তরফ থেকে গত ৩০শে জুলাই প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী (বীর বিক্রম)-এর কাছে চিঠি দেন। এতে চিঠিতে বিদ্যুতের বিষয়টি ছাড়াও গ্যাসের মিটার স্থাপনে টাকা গ্রহণের অভিযোগের প্রসঙ্গটিও তুলে ধরেছেন।
চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন- সিলেট সদর উপজেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় সম্প্রতি বিদ্যুৎ ও পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে অসহনীয় দুর্ভোগে আছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তীব্র লোডশেডিংয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে মন্দাভাব। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বিপাকে পড়েছেন শিশু ও রোগীরা। বিদ্যুৎ বিড়ম্বনায় ফ্রিজ, ট্রান্সফরমার বিকল হচ্ছে। রাতে বিদ্যুৎহীনতায় বেড়েছে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই। লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজের কারণে বাসা-বাড়িতে দেখা দিয়েছে তীব্র পানির সংকট। লো-ভোল্টেজে নষ্ট হচ্ছে পানির পাম্প। এতে মানুষ নেতিবাচক মন্তব্য করছেন এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ অবস্থায় দ্রুত সংকট নিরসনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
চিঠিতে মন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি সিলেটে প্রচারণা চালানো হচ্ছে প্রত্যেক বাসা-বাড়িতে গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করতে হবে এবং প্রত্যেক মিটারধারীকে ২০ হাজার টাকা করে দিতে হবে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা এবং ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য উদ্দেশ্যমূলক ভাবে এই প্রচারণা চালানো হচ্ছে কিনা সরকারের পক্ষ থেকে তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এদিকে- পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠির পরও সিলেটের লোডশেডিংয়ের পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নগরে সরবরাহ করা হয় পাম্প হাউজে মোটরের সাহায্যে তোলা পানি। কিন্তু অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কারণে পানির পাম্পগুলো কাজ করতে পারছে না। এতে করে কোনো কোনো সময় পানি সংকট তীব্র হয়।
অনেক সময় জ্বালানি তেল দিয়ে পানি তুলে সেটি সরবরাহ করা হচ্ছে। সিলেট বিদ্যুৎ বিভাগের সূত্র মতে- সিলেট বিভাগে প্রতিদিন সাড়ে ৫শ’ থেকে ৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন। কিন্তু এক- তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ কম সরবরাহ করা হচ্ছে। এ কারণে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। কখনো কখনো পিক আওয়ারে আরও বেশি লোডশেডিং দিতে হয়। গ্যাস-বিদ্যুৎ গ্রাহক কল্যাণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব মকসুদ হোসেন জানিয়েছেন- লোডশেডিংয়ের কারণে মানুষের দুর্গতি ও জীবন জীবিকায় প্রচ- প্রভাব পড়েছে। এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। পাশাপাশি সরকারের গৃহীত মহা-উন্নয়ন কর্মকা- ম্লান করে দিচ্ছে।