ঢাকা থেকে ফিরে অ্যাকশনে আরিফ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জুলাই ২০২৩, ৫:১২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
ক’দিন ধরে সিলেটে সমালোচনা হচ্ছিলো দুই মেয়র থাকার পরও নগর দেখার কেউ নেই। নগর ভবনের কর্মকর্তারা নিশ্চুপ। ক্ষমতার চেঞ্জ ওভারের সময়ে কেউ দায়িত্ব নেন না- এমনটাই ধরে নিয়েছিলেন নগরের মানুষ। নগরে রাস্তা ছিল হকারের দখলে। কোনো নিয়মই মানছিলেন না কেউ। যানজট লেগেই থাকে। সিটির কর্মকর্তাদের দেখা নেই। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল ঢাকা থেকে সিলেটে এসেই অ্যাকশনে নামেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। দুপুরের পর নগরের চৌহাট্টা রাস্তা থেকে হকার উচ্ছেদ ও নগরে সাঁটানো ব্যানার, ফেস্টুন অপসারণ শুরু করেন। এ সময় দুটি ট্রাকসহ সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা সঙ্গে ছিলেন।
মেয়রের নির্দেশ মতো তারা সাঁটানো ব্যানার, বিলবোর্ড অপসারণ করে গাড়িতে তোলেন।
মেয়রকে দেখে মালামাল নিয়ে পালাতে থাকেন হকাররা। যারা পালাতে পারেনি তারা অভিযান চলাকালীন সময়েই মালামাল সরিয়ে ফেলেন। চৌহাট্টা থেকে বন্দরবাজার পর্যন্ত অভিযান চালান আরিফুল হক চৌধুরী। এ সময় শত শত হকার মালামাল নিয়ে সরে যান। গত ২১শে জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নিজের দল বিএনপি বয়কট করায় এ নির্বাচনে অংশ নেননি আরিফুল হক চৌধুরী। সিটি নির্বাচনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
তিনি গত ৩রা জুলাই পরিষদকে নিয়ে শপথ নিয়েছেন। কিন্তু শপথ নিলেও নভেম্বরের আগে নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দায়িত্ব পাচ্ছেন না। ফলে এখনো দায়িত্ব পালন করছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তবে- নির্বাচনের পর থেকে আরিফুল হক চৌধুরী প্রথমে দলীয় এবং পরে দাপ্তরিক কারণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। দলীয় কারণের মধ্যে ছিল গত ৯ই জুলাই সিলেটে তারণ্যের সমাবেশ। এ সমাবেশ সফল করতে তিনি ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। এরপর দাপ্তরিক কাজে চলে যান ঢাকায়। প্রায় ১১ দিন তিনি ঢাকায় অবস্থান করেন। এই অবস্থায় সিলেট নগর অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছিলো। নগরের ফুটপাথ চলে যায় হকারদের দখলে। রাস্তায় ছিল যানজট। কোনো শৃঙ্খলাই ছিল না। নাগরিক সেবা নেমে আসে শূন্যের কোঠায়। নগর ভবনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করেন। অবশেষে গতকাল থেকে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী অভিযানে নামায় স্বস্তি ফিরেছে।
এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মেয়র আরিফ। তিনি জানিয়েছেন- ‘১১ দিন দাপ্তরিক কাজে ঢাকায় ছিলেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের উন্নয়নসহ নানা বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে তার কাজ ছিল। এ কারণে তিনি ঢাকায় অবস্থান করেন। স্বাভাবিকভাবে তিনি এখনো মেয়রের দায়িত্বে রয়েছেন। সুতরাং নবনির্বাচিত মেয়রকে এ ব্যাপারে দোষারোপ করে লাভ নেই। তিনি যেহেতু দায়িত্বে আছেন, তিনিই দেখবেন।’ তবে নগর ভবনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি। বলেন- ‘ক্ষমতা চেঞ্জ ওভারের সময়। তারাও একটু রিলাক্সে আছেন।’ মেয়র আরিফ জানান- ‘নগর ভবনের এসব কাজ হচ্ছে রুটিন কাজ। আমার পরে যিনি আসবেন, তিনিও করবেন, এর পরের জনও করবেন। এই কাজগুলো করতে হবে। এখানে গাফিলতি হলে চলবে না।’ মেয়র ঘোষণা দেন- ‘এখন থেকে প্রতিদিন নগরে অভিযান চলবে। এ নগর আমাদের সবার। সুতরাং নগরকে স্বাভাবিক রাখতে হবে। আমাদের সিলেটের বড় বড় কিছু উন্নয়ন কাজ থমকে আছে। সেসব বিষয় নিয়ে ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের নিয়ে বসেছিলেন।
এই কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে।’ এদিকে- নগরের শৃঙ্খলা স্বাভাবিক করার পাশাপাশি ডেঙ্গুর দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বিকালে এ নিয়ে নগর ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। মেয়র জানিয়েছেন- ‘দেশে ডেঙ্গুর পরিস্থিতি খুবই খারাপ। ডেঙ্গু এখন ধরনও বদলাচ্ছে। আমাদের সিলেটের অনেক স্থানে লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। রোগীও মিলছে। দিন দিন ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। এই অবস্থায় সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আজ থেকে অভিযান শুরু করা হচ্ছে। যেখানেই ডেঙ্গুর লার্ভা পাওয়া যাবে তাদেরকে জরিমানা করা হবে। এজন্য নগরের মানুষকে নিজেদের বাসা-বাড়ি পরিষ্কার করে রাখার অনুরোধ জানান তিনি। ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে নগরজুড়ে মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানান মেয়র।’