সিলেটে ‘ডাক্তারপাড়া’ খ্যাত স্টেডিয়াম মার্কেটে চিকিৎসকদের অভিনব প্রতারণা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুলাই ২০২৩, ৮:২৩ অপরাহ্ণ
সুরমানিউজ ডেস্ক ::
সিলেটে ডাক্তারপাড়া খ্যাত নগরীর রিকাবীবাজারস্থ স্টেডিয়াম মার্কেটে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার নামে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন অনেক চিকিৎসক। ভুয়া পদবিযুক্ত সাইনবোর্ড আর ভিজিটিং কার্ড প্রদর্শন করে দিনের পর দিন রোগীদের সঙ্গে অনেক চিকিৎসক করে যাচ্ছেন প্রতারণা।
ভুয়া পদবি প্রদর্শন ছাড়াও প্রতারণার মাধ্যমে এসব চিকিৎসক রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন অতিরিক্ত মোটা দাগের টাকা। তবে এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা নিচ্ছেন না কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।
জানা গেছে, মেহনাজ হাসান নামের এক নারী চিকিৎসকের চেম্বার স্টেডিয়াম মার্কেটের সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। তিনি চর্ম, যৌনসহ বেশ কয়েকটি রোগের এমবিবিএস চিকিৎসক। সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে টানানো সাইনবোর্ডে তার পদবি লেখা রয়েছে- সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান- পিএমসিএইচ (পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) ও এক্স সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডাক্তার মেহনাজ হাসান পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক হলেও বিভাগীয় প্রধান নন। আর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি কোনোদিন কর্মরত ছিলেন না, ছিলেন শিক্ষার্থী।
শুধু পদবির প্রতারণা নয়, এই নারী ডাক্তারের বিরুদ্ধে রয়েছে রোগীর পকেট কাটার অভিযোগ। ঘটনা গত ৭ জুলাই রাত ৮টার। এলার্জিজনিত সমস্যা নিয়ে এদিন স্টেডিয়াম মার্কেটে ডাক্তার দেখাতে আসেন কুলাউড়ার (সৌদি প্রবাসী) রুমেল মিয়া। সেখানে এসে সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে ডা. মেহনাজের সাইনবোর্ডে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাম দেখে তাঁর চেম্বারে যান রুমেল।
রুমেলের অভিযোগ, তার কাছ থেকে মেহনাজ নিজের ফি নেওয়া ছাড়াও ট্রাইলন নামের মাত্র ৭৫ টাকা দামের একটি ইনজেকশন দিয়ে ১৫’শ টাকা হাতিয় নেন। বাইরের একটি ফার্মেসিতে ওই ইনজেকশনের দাম জিজ্ঞেস করে বিষয়টি ধরা পড়ে রুমেলের কাছে। তিনি জানান, প্রতারণা করার সুবিধার্থে ওই ইনজেকশনের নাম প্রেসক্রিপশনে লিখেননি ডা. মেহনাজ। এ বিষয়ে ডা. মেহনাজ হাসান বলেন, প্রেসক্রিপশনে ইনজেকশনের নাম লিখতে ভুলে গেছি।
আর সাইনবোর্ডে ভুয়া পদবি ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন- এসব আমি লিখিনি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ লিখে রেখেছেন।
তবে সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী মেহেদী হাসান বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন- ডা. মেহনাজ হাসানের দেওয়া ভিজিটিং কার্ড অনুযায়ীই আমরা সাইনবোর্ডে তাঁর পদবি লিখেছি। মেহেদী হাসান প্রশ্ন রেখে বলেন- যদি এটা আমাদের ভুল হতো তাহলে তিনি প্রত্যেকদিন এখানে আসেন, তাঁর চোখে পড়েনি? তিনি আমাদের সংশোধন করতে বলেননি কেন?
এদিকে স্টেডিয়াম মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে- এই মার্কেটের নিউ মুন ডেন্টাল কেয়ার নামের একটি প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)-এর রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই রোগী দেখছেন এক ইন্টার্ন ডাক্তার। তামজিদ আহমদ নামের এই চিকিৎসক নিজেকে পরিচয় দেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওরাল এন্ড ডেন্টাল সার্জন হিসেবে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি বর্তমানে ওসমানী হাসপাতালে ইন্টার্নী করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন ছাড়া চেম্বার করে রোগী দেখায় তামজিদ আহমদসহ আরও তিনজন চিকিৎসককে শোকজ করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারা সেই শোকজকে আমলে না নিয়ে চেম্বারে রোগী দেখা অব্যাহত রেখেছেন।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন- সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা এমন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। তামজিদ আহমদসহ আরও দুজনকে আমরা গত কিছুদিন আগে শোকজ করেছিলাম। তারা আর এমন করবেন না বলে আমাদেরকে লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন। তবে আবার যখন অভিযোগ পাওয়া গেছে তখন বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।