ছেলের মান ভাঙল ১০ বছর পর, দায়িত্ব নিলেন ১১০ বছর বয়সী মায়ের
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জুলাই ২০২৩, ২:২৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
দশ শতক জায়গা রমেছা খাতুনকে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছিলেন নানা ওসমান মোল্লা। এতে অভিমান জন্মায় ওসমানের ছেলে আবদুল মোতালেবের মনে। কিছুদিন পরই মারা যান ওসমান। তাঁর জানাজা-দাফন সেরে সেই যে যান মোতালেব, আর ফেরেননি। খোঁজ নেননি বয়োবৃদ্ধ মা আমেনা বেগমেরও। এর মাঝে কেটে গেছে ১০ বছর। পাবনার চাটমোহর ও নাটোরের গুরুদাসপুর– এই দুই উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মায়ের কাছে ফিরেছেন মোতালেব।
মঙ্গলবার পাবনার চাটমোহর উপজেলার চর এনায়েতপুর গ্রামে ঘটে এ ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোড়ন তৈরি হয়েছিল আগেই।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নাতনি রমেছার সঙ্গে পলিথিনের ছাউনি দেওয়া ঘরে কষ্টেসৃষ্টে দিন কাটছিল আমেনার (১১০)। অপরদিকে তাঁর ছেলে মোতালেব ১০ বছর ধরে থাকেন শ্বশুরবাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈর বাজারে। সেখানে ওষুধের ব্যবসা রয়েছে। বিপুল অর্থবিত্তের মালিকও তিনি।
এ নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা চর্চা হয়। এগুলো নজরে পড়ে চাটমোহরের ইউএনও মমতাজ মহলের। তিনি গুরুদাসপুরের ইউএনও শ্রাবণী রায়ের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করেন। সোমবার শ্রাবণী রায়ের কার্যালয়ে ডাকা হয় মোতালেবকে। সেখানে মোবাইল ফোনে মমতাজ মহল তাঁকে (মোতালেব) ধর্মীয় ও আইনি ব্যাখ্যা দিয়ে মায়ের প্রতি যত্নশীল হওয়ার আহ্বান জানান। এর ফলস্বরূপ মঙ্গলবার সকালে চাটমোহরের ছাইকোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরুকে নিয়ে মায়ের সঙ্গে দেখা করেন মোতালেব। মাকে জড়িয়ে ধরেন দীর্ঘ ১০ বছর পর। এ সময় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। উপস্থিত অনেকের চোখে ছিল আনন্দাশ্রু।
মোতালেবের ভাগনি রমেছা খাতুন বলেন, ‘যতদিন বেঁচে আছি নানির পাশে থাকব। নানা যে ১০ শতক জমি লিখে দিয়েছিলেন, তা মামা (মোতালেব) দখল দেননি। তাই বলে, মায়ের মুখ দেখতে আসবেন না?’ মামা ফেরায় খুশি ধরছে না তাঁর। রমেছা বলেন, নানার দেওয়া জমি মামাকে ফেরত দিতে চান।
আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘আমার অন্যায় হয়েছে। এখন থেকে মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব আমি বহন করব। আশা করি, মা আমাকে ক্ষমা করবেন।’ সেইসঙ্গে এতদিন কষ্ট করে তাঁর মায়ের দেখাশোনা করায় ভাগনি রমেছার প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান।
গুরুদাসপুরের ইউএনও শ্রাবণী রায় ও চাটমোহরের ইউএনও মমতাজ মহল বলেন, আবদুল মোতালেবকে মায়ের দেখভালের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন, বিষয়টি শুনে তাঁদের দু’জনেরই ভালো লাগছে।