সিলেট জেলা ছাত্রদলের সভাপতি কে?
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জুলাই ২০২৩, ১২:২৫ পূর্বাহ্ণ
তারুণ্যের সমাবেশ ৯ই জুলাই। সিলেটে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। মূলত বিএনপি’র অঙ্গ-সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে নগরের আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে তিন সংগঠনেরই শীর্ষ নেতারা সিলেট সফর করে গেছেন। গুরুত্বপূর্ণ এই সমাবেশ সামনে থাকায় সিলেট জেলা ছাত্রদলের সভাপতি কে- এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন কাউন্সিলর নির্বাচন করার কারণে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন। তিনি এখন নগরের ৩৯ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর। প্রায় এক মাস আগে তিনি বহিষ্কার হলেও এখনো জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাউকে আসীন করা হয়নি। আর এ নিয়ে ছাত্রদলের অভ্যন্তরে তারুণ্য’র সমাবেশের প্রস্তুতিতে ভাটা পড়ছে বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। এক সময় সিলেটে ছাত্রদল শক্তিশালী সংগঠন ছিল।
গ্রুপিং, কোন্দলের কারণে অস্বস্তিতে থাকতেন মূল বিএনপি’র নেতারা।
কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে সিলেটে ছাত্রদল ঝিমিয়ে রয়েছে। তবে- তারুণ্যের সমাবেশকে ঘিরে ফের চাঙ্গা হয়ে উঠেছে সিলেট ছাত্রদল। এ সমাবেশকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে সিলেট সফর করে গেছেন দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। দলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- সিলেট জেলা ছাত্রদলের বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম। তার পরে সহ-সভাপতি হিসেবে রয়েছেন মাসরুর রাসেল ও জুবের আহমদ। সভাপতি অনুপস্থিত থাকলে সিনিয়র সহ-সভাপতিরই দায়িত্ব পালনের কথা।
কিন্তু এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পাননি নজরুল ইসলাম। গতকাল বিকালে মানবজমিনকে নজরুল ইসলাম জানান- তিনি সিনিয়র সহ-সভাপতি হওয়ার দায়িত্ব তারই পাওয়ার কথা। এজন্য তিনি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করছেন। কিন্তু ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা এ ব্যাপারে সাড়া দিচ্ছেন না। তিনি জানান- অদৃশ্য কারণে তাকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। সাবেক সভাপতি আলতাফ হোসেন কারান্তরীণ হওয়ার পরও তিনি দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলেন, ওই সময়ও তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এটি তার ওপর ‘অবিচার’ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে সিলেট ছাত্রদলের একাধিক নেতা মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছিলো ২০১৮ সালের ১৩ই জুন। ২০২১ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। আংশিক ঘোষিত কমিটিকে মেনে নেননি নজরুল ইসলাম। যারা ওই সময় ছাত্রদলের কমিটির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলো তাদের সঙ্গে নজরুল ইসলামের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগাযোগ ছিল। এ কারণে তার ওপর ক্ষুব্ধ সিলেট বিএনপি’র নেতারা।
তারা জানিয়েছেন- বিএনপি’র নেতাদের ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণেই জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হতে পারছেন না নজরুল ইসলাম। এই অবস্থায় নজরুলকে রেখে মাসরুর রাসেল কিংবা জুবের আহমদকেও দায়িত্ব দেয়া হয়নি। ফলে গত এক মাস ধরে সিলেটে জেলা ছাত্রদলের পদটি শূন্য রয়েছে। এদিকে- একই সময়ে জেলা ও মহানগর মহিলা দলের সভাপতির পদটিও শূন্য হয়েছিল। প্রায় ১৫ দিন আগে এ দুটি পদে দায়িত্ব নতুনদের হাতে তুলে দেয়া হলেও ছাত্রদলে এখনো কেউ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হতে পারেননি। সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনার জানিয়েছেন- ‘তারুণ্যের সমাবেশ সফল করতে ইতিমধ্যে সিলেটে সফর করে গেছেন দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। আমরা বিষয়টি তাদের অবগত করেছি। জেলার সভাপতি পদে কেউ না থাকায় একাই আমার ওপর চাপ যাচ্ছে। একজন সভাপতি থাকলেও দায়িত্ব ভাগ করে করা সম্ভব হতো।
দ্রুততম সময়ে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের আশ্বস্ত করে গেছেন।’ সিলেট ছাত্রদলের নেতারা জানিয়েছেন- সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। প্রায় ৫ বছর হয়ে গেছে কমিটির বয়স। এ কারণে সিলেটে ছাত্রদলের নতুন কমিটি দিতে কয়েক মাস ধরে তোড়জোড় চালাচ্ছে কেন্দ্র। সিটি নির্বাচনের আগে কমিটি দেয়ার কথা ছিল। ওই সময় রাজপথে সিলেটের নেতারা সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা এবং পরবর্তী মামলা ও গ্রেপ্তারের কারণে কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। তারুণ্যের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সিলেটে সফর করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
ওই সময় তারা সিলেটে বসেই দলের নেতাকর্মীদের ‘অ্যাক্টিভিটিজ’ লক্ষ্য করবেন। সমাবেশের পর তারা সবার সঙ্গে আলোচনা ক্রমে সিলেটে নতুন কমিটি দিতে পারেন। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে কেন্দ্রের আভাস পাওয়া গেছে। এজন্য তারুণ্যের সমাবেশকে কেন্দ্র করে পদ-পদবির আশায় সিলেট ছাত্রদলের নেতারা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। বিভিন্ন গ্রুপের নেতারা এ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন তারা। তারাও নিজেদের বলয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ নিতে লবিং অব্যাহত রেখেছেন। একই সঙ্গে তারুণ্যের সমাবেশে ভূমিকা রাখতে নির্দেশনা দিচ্ছেন বলয় নেতাদেরও।