আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কড়া নজরে বাংলাদেশের নির্বাচন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুলাই ২০২৩, ৯:২৮ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের নতুন হাইকমিশনার সারাহ কুক সম্প্রতি চ্যানেল আই’র জনপ্রিয় অনুষ্ঠান তৃতীয় মাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বৈশ্বিক মঞ্চে বাংলাদেশের প্রাধান্য বৃদ্ধির কারণে নির্বাচন কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়ে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে যথেষ্ট আগ্রহ থাকবে। বিশ্বাসযোগ্য, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখার আগ্রহ থাকবে। সেই সঙ্গে সহিংসতামুক্ত নির্বাচনের প্রত্যাশাও থাকবে। বিশ্বাসযোগ্য, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে পারার মানে বাংলাদেশিরা তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বেছে নিতে পারবে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের বের হওয়ার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে অধিক বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা এবং ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রয়োজন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় সাহায্য করে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বৈদেশিক বিনিয়োগ আনতে সাহায্য করে। আগামী ছয় মাসে বাংলাদেশে কী ঘটছে তা নিয়ে প্রচ- আন্তর্জাতিক মনোযোগ থাকবে। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানোকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে উৎসাহ যোগাতে আন্তর্জাতিক অংশীদাররা যা করে তার সঙ্গে সংগতি রেখে যুক্তরাজ্য এখানে রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত থাকবে।
আসন্ন নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাজ্যের এমন অবস্থান অবশ্য নতুন নয়। সারাহ কুকের পূর্বসূরি রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসনও আজ থেকে ১৫ মাস আগে মানবজমিন প্রধান সম্পাদককে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের আগে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায়।
তারা প্রথমেই খুঁজেন সুশাসন। বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য প্রথম কাজ হচ্ছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান। আগামীর নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে তিনি বলেছিলেন, মানুষ যাতে অবাধে ভোট দিতে পারে, রাজনৈতিক দলগুলো সভা-সমাবেশ করতে পারে- এই বিষয়টির ওপর জোর দিতে হবে বেশি। নির্বাচনের আগে মুক্তভাবে বিতর্ক করার সুযোগ থাকতে হবে। মানুষ যাতে অবাধে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এই বিষয়টি আগামী নির্বাচনের ক্ষেত্রে খুবই জরুরি। নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবাই মিলে এটা নিশ্চিত করতে হবে। সঠিকভাবে ভোট গণনা ও ফল প্রকাশের ওপর জনগণ এবং প্রার্থীদের যেন আস্থা থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
নির্বাচন নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস তথা তার দেশের অবস্থান অবশ্য পুরোপুরি স্পষ্ট। মার্কিন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ঘন ঘন বাংলাদেশে সফর করছেন এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন। শুধু আহ্বান বা উদ্বেগ জানানো হয় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে পদক্ষেপও নিয়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯ মাস আগে ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার’ কারণে র্যাব এবং এর সাতজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র আয়োজিত প্রথম গণতন্ত্র সম্মেলনে ১১০টি দেশ আমন্ত্রণ পেলেও বাংলাদেশ আমন্ত্রণ পায়নি। এ বছর অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ‘গণতন্ত্র সম্মেলনেও বাংলাদেশ আমন্ত্রণ পায়নি। মে মাসে তো উল্টো ভিসা নীতি আরোপ করা হয়, যাতে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কেউ বাধা দিতে না পারে।
নির্বাচনের অনেক আগে এই ভিসা নীতি আরোপের ফলে সচেতন মহল মনে করছেন নির্বাচনকে ঘিরে যেন ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি হয় সেজন্যই দেশটি এত আগে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অবশ্য রাষ্ট্রদূত হাস এর আগে বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, নির্বাচন কেবল একদিনের বিষয় নয়, আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও নির্বাচন প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। নিজের পরিচয়পত্র পেশ করার মাসখানেক পরেই (২৪শে এপ্রিল, ২০২২) তিনি এক সেমিনারে বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান শুধু নির্বাচনের দিন ভোটদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। কার্যত ইতিমধ্যেই নির্বাচন শুরু হয়ে গেছে। সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য আবশ্যক হলো নাগরিকদের মতামত প্রকাশ, সাংবাদিকদের ভয়ভীতি ছাড়া অনুসন্ধান এবং নাগরিক সমাজের ব্যাপক পরিসরে জনমত গঠনের সুযোগ নিশ্চিত করা। পরের মাসেই (৩১শে মে) তিনি বলেছিলেন, আনুষ্ঠানিক না হলেও বাংলাদেশে যে নির্বাচনের প্রক্রিয়া এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেছে পত্রিকায় চোখ বুলালেই সেটা দেখতে পাই।
তাই এখন থেকেই আমাদের দিক থেকে অবাধ, সুষ্ঠু এবং আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন হচ্ছে কিনা সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখাটা জরুরি। ওই বছরের ২৯শে সেপ্টেম্বর ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে পিটার হাস বলেছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইতিমধ্যেই (বাংলাদেশের) বর্তমান পরিস্থিতিতে নজর রাখছে’। নির্বাচনের এক বছরেরও অনেক আগে থেকেই যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের পরিস্থিতির উপর নজর রেখে থাকে তাহলে এই মুহূর্তে সেই নজরের পরিধি যে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে তা বলাবাহুল্য। অবশ্য চলতি বছরের এপ্রিলে ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এ কথা খোলামেলাভাবেই জানিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, সেজন্য আমরা তো অবশ্যই, সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন যাতে এ অঞ্চল এবং সারা বিশ্বের জন্য একটি জোরালো উদাহরণ তৈরি করতে পারে’।
এদিকে, বৃটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বাংলাদেশে আসার পর নির্বাচন নিয়ে যে কথা বলেছেন, দেড় বছর আগে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় ঠিক একই কথা বলেছিলেন পিটার হাসের পূর্বসূরি রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার। এই প্রতিবেদককে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য, পুরোপুরি অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করে যা জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায়’। এরকম একটি নির্বাচনের জন্য নির্বাচনের আগে থেকেই যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে একথাও সবাই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে বলে যাচ্ছেন।
ওদিকে, শুধু সভা-সেমিনার কিংবা টিভি-পত্রিকায় সাক্ষাৎকারেই নয়; ঢাকাস্থ বিভিন্ন দূতাবাসের অনুষ্ঠানগুলোতেও এ নিয়ে কথা বলছেন বিদেশি দূতরা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় এপ্রিলে নেদারল্যান্ডসের রাজা ভিলেম আলেকজান্ডারের অফিসিয়াল জন্মদিন উদ্যাপনের কথা। সেদিন ঢাকায় ডাচ্ দূতাবাসের অনুষ্ঠানে দেশটির রাষ্ট্রদূত অ্যান ভ্যান লিউয়ন বলেছিলেন, আগামী বছরের কথা ভাবলে যেটা আমাদের মাথায় আছে, যেটা সবার মাথায় আছে; সেটা অবশ্যই নির্বাচন। এই নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। জাতীয় নির্বাচন সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের জন্যও একটি মাইলস্টোন। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য নব দুয়ার উন্মোচন করবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সহ মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের সঙ্গে সঙ্গে প্রাণবন্ত সুশীল সমাজ স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটায়। নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশের আসন্ন সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি ও অবস্থানের বিষয়টি গভীরভাবে অনুসরণ করছে। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের গুরুত্ব সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে একমত। আমরা কামনা করি এবং প্রত্যাশা করি যে বাংলাদেশের সকল জনগণ তাদের মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে এবং তাদের নেতা নির্বাচন করার জন্য নিজেদের অধিকার পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারবে।
সারা বিশ্ব যে বাংলাদেশের নির্বাচনের উপর কড়া নজর রাখছে, সেটি কেবল ঢাকাস্থ বিদেশি দূতদের কথাতেই নয়, বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর এমপি-মন্ত্রী থেকে শুরু করে মুখপাত্রদের কথাতেও স্পষ্ট। গত মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এনএসসি) স্ট্র্যাটিজিক কমিউনিকেশন পরিচালক অ্যাডমিরাল জন কিরবি বাংলাদেশে মানবাধিকার ও জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে দেশটির অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশে অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আমরা আমাদের অবস্থান ইতিমধ্যে স্পষ্ট করে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অন্তরায় সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা নীতি ঘোষণা করেছি। প্রায় একই সময়ে বৃটেনের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যান মেরি ট্রেভেলিয়ান বলেছেন, বাংলাদেশে বহুদলের অংশগ্রহণ, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং স্বচ্ছ নির্বাচনের শক্তিশালী সমর্থক বৃটেন। জবাবদিহিতাকে সমর্থন করতে এই নির্বাচন হতে হবে অবাধ ও সুষ্ঠু। স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা সরকারি এবং প্রাইভেটভাবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে তুলে ধরেছে বৃটেন। একই সঙ্গে নিরাপত্তা রক্ষাকারী ও আইনপ্রয়োগকারীদের সুশৃঙ্খল আচরণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের কাছে নিয়মিতভাবে এসব বিষয় তুলে ধরে বৃটেন, যাতে সব দল নিরাপদে সংগঠিত হতে এবং প্রচারণা চালাতে পারে।
এ ছাড়াও, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং কূটনীতিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী এবং আন্তর্জাতিক নানা সংগঠনের প্রতিনিধিরা অনেকদিন ধরেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি থেকে শুরু করে ছোট-বড় অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করছেন। এই প্রতিবেদনটি যখন লিখছি (৪ঠা জুলাই, দুপুর) তখনো ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির সঙ্গে বৈঠক করছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। ইইউ ডেপুটি রাষ্ট্রদূত বার্নড স্পেনিয়ারও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনকে সামনে রেখেই দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে এসেই ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, ‘ইইউ নির্বাচন প্রক্রিয়া ‘গভীরভাবে নজরে’ রাখবে। বাংলাদেশের নির্বাচনের উপর যে সারা বিশ্বই নজর রাখছে সেটি এ বছরের শুরুতে এই প্রতিবেদককে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সরাসরি জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই নির্বাচন ঘিরে আগ্রহ শুধু দেশের ভেতরেই নয়, সারা বিশ্বেই তৈরি হয়েছে। ইইউ সহ বাংলাদেশের অন্যান্য বন্ধুরা আগামী নির্বাচনে নজর রাখবে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ইইউ বাংলাদেশে তাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষক মিশন পাঠাতে চায় জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনের ছয় মাস আগে আমাদের একটি দল এসে প্রাথমিকভাবে মূল্যায়ন করে দেখে যায় যে, সম্পূর্ণ পর্যবেক্ষণ মিশনের জন্য সেটা ‘ফিজিবল’ কিনা। কিন্তু, সেটা মূলত স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, সুশীল সমাজ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে সমন্বয়ের ওপর নির্ভর করে। রাষ্ট্রদূতের কথা অনুযায়ী আগামী সপ্তাহেই ওই দলটি ঢাকায় আসছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর আগে ঢাকাস্থ ইইউ ডেলিগেশন সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করছে বলে জানা গেছে।
অবশ্য, শুধু পশ্চিমা দুনিয়াই নয়। বাংলাদেশের নির্বাচনের উপর কড়া নজর রাখছে বিশ্বের অন্যান্য পরাশক্তিরাও। ইতিমধ্যেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি ঘোষণা দেয়ার কিছুদিন পরই (৮ই জুন) ‘রাশিয়া অন্যকোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না’ দাবি করে বাংলাদেশে দেশটির রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্দর মতিঁতস্কি বলেন, বাংলাদেশই ঠিক করবে কোন প্রক্রিয়ায় এদেশে নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, আমরা কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করি না। এর ঠিক আগের দিন (৭ই জুন) চীন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিক্রিয়ার প্রশংসা করেছিল।
চীনের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন সেদিন বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশের জনগণের শক্তিশালী অবস্থান নয়, বরং তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের, বিশেষ করে উন্নয়নশীল বিশ্বের বড় অংশের মনের কথাও বলেছেন।’ চীন সরকারের মুখপাত্র বলে বিবেচিত গ্লোবাল টাইমসের সাংবাদিক র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ‘দৃঢ়-কঠিন প্রতিক্রিয়া’ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে ওয়েনবিন বলেন, চীন সরকার এ বিষয়ে শেখ হাসিনার মন্তব্যের প্রশংসা করেছে। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের মতোই চীনের অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও নিকট অতীতে ঘনঘন বাংলাদেশ সফর করেছেন। ওদিকে, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ‘শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারত সরকারকে সেটা করার অনুরোধ করেছি’- পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন এমন কথা বললেও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত এবার এ পর্যন্ত বলা চলে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। ‘প্রতিবেশী রাজনীতিতে ভারত কম জড়াচ্ছে’ গত শুক্রবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এমন মন্তব্য করলেও ভৌগোলিকভাবে নিজের পেটের মধ্যে অবস্থান করা বাংলাদেশের নির্বাচনের উপর তারা নজর রাখছেন না- একথা বলবেন না কেউ-ই।
মানবজমিন