নির্বাচন শেষ, সিলেটে এখন ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুন ২০২৩, ১০:৩০ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিটি নির্বাচন সামনে। সিলেটে হচ্ছে ঘনঘন লোডশেডিং। দিনটি ছিল ১৮ই এপ্রিল। সিলেটের নবাব রোডস্থ বিদ্যুৎ অফিসে ছুটে গেলেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। ওখানে গিয়ে তিনি বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। একপর্যায়ে ফোন দেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে। নির্বাচনে লোডশেডিং কমানোর আবদার রাখেন। ফলও এলো। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুও কথা রাখলেন। লোডশেডিং কমিয়ে দেয়া হলো সিলেটে।
সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়ার কারণে আর লোডশেডিং হয়নি। গোটা দেশে লোডশেডিং যন্ত্রণায় মানুষ অস্থির থাকলেও সিলেটে ছিল স্বস্তি। ২১শে জুন ইলেকশনের রাত পর্যন্ত সিলেটে বিদ্যুতের কোনো ভেল্কিবাজি ছিল না। কিন্তু নির্বাচনের পরদিন থেকে শুরু লোডশেডিং। এখন ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং করা হচ্ছে। ২২শে জুন থেকে কোনো কোনোদিন অর্ধেক আবার কোনো কোনোদিন চাহিদার এক তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎও মিলছে না। এই অবস্থায় সিলেটে শুরু হয়েছে তীব্র হাঁসফাঁস। প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে লোডশেডিং টিকে থাকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে নগরবাসীর। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা।
তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে জেনারেটর খরচ তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। সিলেট বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, সিলেট বিভাগীয় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৪৮০ মেগাওয়াট। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে দেয়া হচ্ছে খুবই কম। গতকাল বিকাল ৫টার দিকে চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ সররাহ করা হয়েছে ১৮০ মেগাওয়াট। ফলে ওই সময় অর্ধেকের বেশি এলাকায়ই লোডশেডিং করতে হয়েছে। ২২শে জুন সিলেটে বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ছিল ৩৫০-৩৮০ মেগাওয়াট। দিন দিন চাহিদার অনুপাতে সরবরাহ কমে আসছে। এ নিয়ে বিব্রত বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। সিলেট বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা আব্দুল কাদের জানিয়েছেন, চাহিদার কম বিদ্যুৎ পাওয়ার কারণে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
আশা করা হচ্ছে- খুব শিগগিরই এ অবস্থা থেকে উত্তরণ হবে। এদিকে, লোডশেডিংয়ের কারণে সিলেটে পানি সংকট তীব্র হচ্ছে। নগরের অনেক পাম্প হাউজই সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক হাউজ আবার ডিজেল দিয়ে চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এই অবস্থায় বেশ কিছু এলাকায় পানি সংকট চলছে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। তারা জানান, বিদ্যুৎ থাকলে তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহ করতে পারেন। নতুবা তাদের বসে থাকতে হয়। নগরের জিন্দাবাজার এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সকাল থেকে প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং করা হয়। একঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে আরেক ঘণ্টা থাকে না। ঈদ মৌসুমে কিছুটা বিকিকিনি বেড়েছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকার কারণে জেনারেটর দিয়ে তারা সাপোর্ট দিচ্ছেন।
কিন্তু যে পরিমাণ বিক্রি হচ্ছে এতে জেনারেটরের তেলের খরচও উঠছে না। ফলে বাধ্য হয়ে বিকালের মধ্যে অনেকেই দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যান। তারা জানিয়েছেন, এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কারণে ঈদের তেমন প্রস্তুতি নেয়া যায়নি। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর যখন প্রস্তুতি শুরু হয় তখন থেকেই লোডশেডিং শুরু হয়েছে। এতে করে এবার ঈদে তাদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে বলে জানান। এদিকে গতকাল সিলেটের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ঈদকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের বিষয়টি আলোচিত হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান লোডশেডিং কমাতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাহ উদ্দিন আলী আহমদ জানিয়েছেন, ‘আমরা ৫ অথবা ৬ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারের দাবি জানিয়েছি। বলেছি যে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না থাকার কারণে অনেক মেশিনারিজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে করে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়ছেন। এরপরও আমাদের কথা শোনা হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘গোটা বছর বসে থেকে ঈদ মৌসুমে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করেন। কিন্তু ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসায়ীরাও বেকায়দায় পড়েছেন।’সুত্র-মানবজমিন