সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিক্রি করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাবে না
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ জুন ২০২৩, ৫:০৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ কাউকে লিজ দিলে ক্ষমতায় থাকতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু সেটা তার দ্বারা হবে না। এই দেশের কোনো সম্পদ কারও কাছে বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চাই না। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে জনগণ ভোট দিলে আছি না হলে চলে যাবো। এখানে আমরা ক্ষমতা ভোগ করতে আসিনি। জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি। নতুন অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসে যোগ দেয়ার বিষয়টিও সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় সংসদের উপনেতা আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।
সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল, কীভাবে? তখন তো গ্যাস বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। তাহলে এখন তারা দেশ বিক্রি করবে, নাকি সেন্টমার্টিন বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে আসতে চায়? তিনি বলেন, আমি এতটুকু বলতে পারি, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা, আমার হাত থেকে এই দেশের কোনো সম্পদ কারও কাছে বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চাই না। ওই গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় থাকতে পারতাম। আর এখনো যদি আমি বলি, ওই সেন্টমার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কাউকে লিজ দেবো, তাহলে আমাদের ক্ষমতায় থাকতে কোনো অসুবিধা নেই। আমি জানি সেটা। কিন্তু আমার দ্বারা সেটি হবে না। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আমি কাউকে খেলতে দেবো না, আমার দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারও নেই। আমার দেশের মাটি ব্যবহার করে কোনো জায়গায় কোনো সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাবে, কাউকে অ্যাটাক করবে বা এই ধরনের কাজ আমরা হতে দেবো না। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, শান্তিপূর্ণ সহযোগিতায় বিশ্বাস করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে যে ১১ লাখ শরণার্থী এসেছে তারপরও তাদের সঙ্গে ঝগড়া করিনি। তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি। এরা যাতে ফেরত যায় তার চেষ্টা করছি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুরোধ করছি। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়, এ নীতিতে বিশ্বাস করি। তা মেনে চলবো।
অনির্বাচিত কেউ আসতে পারবে না: নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন নির্বাচিত সরকারপ্রধান আরেকজন নির্বাচিত সরকারপ্রধান দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবেন। এর বাইরে অনির্বাচিত কেউ আসতে পারবে না। জনগণ গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা চায়, নাকি ২০০৭ সালের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আবার সেই জরুরি অবস্থা, আবার সেই ধরপাকড় সেগুলো চায়, এটা দেশের মানুষকে বিবেচনা করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যেহেতু ওয়েস্টমিনস্টার টাইপের গণতন্ত্র তাই ইংল্যান্ডসহ ওইসব জায়গায় যেভাবে নির্বাচন হয় ঠিক সেভাবে আমাদের এখানে নির্বাচন হবে। নির্বাচনকালীন সময় নিয়ে আমাদের বিরোধী দল থেকে নানা প্রস্তাব। তারা এখন আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। এটা সম্পর্কে খালেদা জিয়ার উক্তি ছিল পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নাই।
তিনি বলেন, একবার যেটা তারাই বাদ দিয়েছে, এ পদ্ধতিটা তারাই নষ্ট করেছে, তারা রাখেনি। সেটাকে তারা আবার ফেরত চাচ্ছে। অথচ উচ্চ আদালতের রায় আছে, সেই মোতাবেক আমাদের সংবিধানও সংশোধন করা হয়েছে। একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধান আরেকজন নির্বাচিত সরকারপ্রধান দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবেন। এর বাইরে অনির্বাচিত কেউ আসতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আরেকজন নির্বাচিত সরকারপ্রধান ক্ষমতা না নেবেন, সেটা পরিবর্তন হবে না। একজন নির্বাচিতের জায়গায় আরেকজন নির্বাচিতকেই আসতে হবে। এটা সবাই জানে। জানার পরেও কেন সাংবিধানিক জটিলতার সৃষ্টি করা হচ্ছে? উদ্দেশ্যটা কি? তার মানে এ দেশের গণতান্ত্রিক ধারাটাকে নষ্ট করা। দেশ যে দীর্ঘদিন ধরে সুষ্ঠুভাবে চলছে সেটাকে নষ্ট করা। এটা দেশবাসী কীভাবে নেবে সেই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, তারা কি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা চান, অর্থনৈতিক উন্নতি চান, দেশের মানুষের কল্যাণ হোক সেটা চান। নাকি ২০০৭ সালের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আবার সেই জরুরি অবস্থা, আবার সেই ধরপাকড় সেগুলো চায়। এটা দেশের মানুষকে বিবেচনা করতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য টুইস্ট করা হয়েছে: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে বোধ হয় একটা বিষয় একটু ভুলভাবে আপনারা পত্রিকায় ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তিনি বলেছিলেন যে, ভারত যথেষ্ট পরিপক্ব, যথেষ্ট দক্ষ। তাদের কি বলতে হবে তারা ভালো করে জানে। কাজেই ভারতের কাছে আমাদের ওকালতি করার প্রয়োজন নাই। কথা এটা বলেছেন, কিন্তু আপনারা লিখেছেন ভারত ওখানে গিয়ে আমাদের জন্য ওকালতি করবে না। এটা কিন্তু বাস্তব কথা। ওনি যেভাবে বলছেন আর যেভাবে লেখার সময় হেডলাইন যেটা লেখা হয়েছে তার মধ্যে কিন্তু একটা বিরাট ফাঁক আছে। কথা যদি এইভাবে টুইস্ট করা হয় তাহলে তো কিছু বলার নাই আমাদের। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে আমাদের সৎভাব রয়েছে। তাদের নীতিতে তারা চলবে। আমাদের দেশে ইলেকশন হবে আমাদের সংবিধান অনুসারে। আমাদের নির্বাচনী আইন আছে, নির্বাচন ঠিক যেভাবে হওয়ার সেভাবেই হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন সুইরজারল্যান্ড অফ দ্য ইস্ট বাংলাদেশ হবে। অর্থ হচ্ছে ইউরোপের যেকোনো দেশে যান, সুইজারল্যান্ড এমন জায়গায় অবস্থান তার প্রত্যেকটা বর্ডার এলাকা কিন্তু সবগুলো দেশের সঙ্গে সংযুক্ত এবং কেউ এপার থেকে ওপারে যেতে গেলে সুইজারল্যান্ডের ভেতর থেকেই যেতে হবে। দ্বিতীয়ত, সুইজারল্যান্ড নিরপেক্ষ একটি দেশ। সুইজারল্যান্ড শান্তিপূর্ণ একটি দেশ। সেভাবেই বাংলাদেশকে তিনি গড়তে চেয়েছিলেন। সেইজন্যই তিনি পররাষ্ট্রনীতি দিয়েছিলেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয় এবং আমরা সেটা মেনেই কিন্তু চলছি। আর উন্নয়নের দিক থেকে বাংলাদেশ যাতে একটা প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধন রচনা করতে পারে সেইভাবে কিন্তু দেশের উন্নয়ন আমরা করে যাচ্ছি, করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের সৎভাব রয়েছে। কিন্তু ভারত একটা সম্পূর্ণ দেশ, যার নিজের সভেরেইন আছে কাজেই তারা কি করবে না করবে এটা হচ্ছে সম্পূর্ণ তাদের ওপর। আমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে, এইটুকু শুধু বলতে পারি।
তারাই পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে: মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দেয়া ছয় কংগ্রেসম্যানের চিঠি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চিঠিতে যা লেখা আছে- তা একদম ডাহা মিথ্যা। এক ধরনের অপপ্রচার তো চলছেই। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি- এই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা ব্যবহার করে তারা দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। দেশে কোনো অস্বস্তিকর পরিস্থিতি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন যারা সহ্য করতে পারে না, তারাই পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, নির্বাচন আরও এগিয়ে এলে এই অপপ্রচার আরও বাড়বে। সেজন্য আপনাদের সচেতন থাকতে হবে। নিজের মনকে নিজেই প্রশ্ন করতে হবে- আমরা নিজেরা ভালো আছি কি না? কোনো ধরনের ‘অপপ্রচারে কান না দেয়া’- বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকুক, দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাক- এটাতো তারা চায় না। এসব বিষয়ে কান দিলে হবে না। এসব অপপ্রচারে আপনারা কান দেবেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দেশে অপরাধ করেছে, দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, তারা বিদেশে গিয়ে এখন মানবাধিকারের বিরাট প্রবক্তা হয়ে গেছে। কেউ কেউ দুর্নীতির প্রবক্তাও হয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ যে বিএনপিসহ কিছু দল মাঠে নেমেছে তাদের অসুবিধা কোথায়? সমস্যাটা কী? মানুষ দুই বেলা পেটভরে ভাত খাচ্ছে। এত মুদ্রাস্ফীতির পরেও মানুষের খাবারের অভাব হচ্ছে না। হ্যাঁ একটু চাপে আছে মানুষ, সেই কষ্টটা আমি বুঝি। তাই আমাদের প্রচেষ্টা আছে। মানুষের দুঃখ, কষ্টটা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। তাই যতটা সহজ করার দরকার সেটা করে যাচ্ছে। আগে তো মানুষ খেতে পারতো না। শেখ হাসিনা বলেন, আগে যেখানে মাটি দিয়ে হেঁটে যেতে হতো স্যান্ডেল জোড়া বগলদাবা করে, এখন সেখানে হয় ভ্যানে যাচ্ছে, না হয় স্যান্ডেল পরে। মানুষের তো একজোড়া স্যান্ডেল ছিল না। এখন তো পাচ্ছে। কার জন্য পাচ্ছে? আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই সম্ভব।
ব্রিকসে যোগ দেয়ার যুক্তি: ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত ব্রিকস জোটে বাংলাদেশ যোগ দিতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এককভাবে কারো ওপর যেন নির্ভরশীল থাকতে না হয়, সেজন্যেই ব্রিকসে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ব্রিকস জোটের বর্তমান চেয়ার দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে তিনি ব্রিকস জোটে বাংলাদেশের যোগ দেয়ার আগ্রহের কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে একজন সাংবাদিক জানতে চান, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের বাস্তবতায় যে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, সেই সময়ে ব্রিকসে যোগ দিলে কোনো সুবিধা বাংলাদেশের হবে কি না। উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রিকসে আমরা যোগ দেবো এই কারণে- ব্রিকস প্রথম যখন এটার প্রস্তুতি নেয়, তখন থেকেই আমরা এর সঙ্গে ছিলাম এবং আছি। কিন্তু আমরা ফাউন্ডার মেম্বার হতে পারিনি। এখন আমরা চেয়েছি সেটার মেম্বার হতে। আমরা চাচ্ছি যে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো একটার ওপর যেন নির্ভরশীল না হয়। কাজেই অন্যান্য দেশের সঙ্গেও যেন আমাদের অর্থ বিনিময়ের সুযোগটা থাকে। আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো যেন আমরা সহজে ক্রয় করতে পারি, আমার দেশের মানুষের কষ্ট লাঘব করতে পারি। সেই সমস্ত বিষয় বিবেচনায় করেই কিন্তু আমরা ব্রিকসে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে সেই সাংবাদিক আরও জানতে চেয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক কোনো মুদ্রা চালু করার পরিকল্পনা বাংলাদেশের আছে কি না।
তিনি বলেন, এখানে আমরা দেখব যে, বিকল্প কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অর্থ ব্যবহারের ব্যবস্থা কেউ যদি নেয়, আমরা তার সঙ্গে আছি। ইতিমধ্যে আমরা কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা করছি, আমরা যেন আমাদের নিজস্ব অর্থের বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারি, সেই পদক্ষেপটাও কিন্তু আমরা ইতিমধ্যে নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু ডলারের ওপর নির্ভরশীল না, আমরা নিজেরা নিজেদের অর্থে বিভিন্ন দেশের সেঙ্গ যেন বিনিময় করতে পারি, কেনাবেচা যাতে যা লাগে করতে পারি, সেই পদক্ষেপও নেয়া আছে। যখন এটা কার্যকর হয় তখন আপনারা এটা দেখতে পাবেন।
হাওয়া ভবন খুলে সব একাকার: সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক মাইক ছাড়াই প্রশ্ন করা শুরু করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাইকে মাইকে। আমি এক কানে শুনি ভাই, আরেক কান তো খালেদা জিয়া গ্রেনেড হামলা করে দিছে শেষ করে। খুনির দল, সে একটা খুনি, তার স্বামী একটা খুনি, তার একটা ছেলেও খুনি। যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করে বলা হচ্ছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে- আওয়ামী লীগ সেক্যুলারিজমে বিশ্বাস করে, যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে, সেই নীতিতে বিশ্বাস করে। ২০০১-এর পর সংখ্যালঘুদের ওপর যে নির্যাতন, যে বীভৎস ঘটনা ঘটেছে, সেদিন তো হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলমান কেউ রেহাই পায়নি। মানুষ হত্যা করেছে, মসজিদ ভেঙেছে, মন্দির ভেঙেছে, কোনটা না করেছে তারা? তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত সে সময় এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ, অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুঁড়া গুঁড়া করেও মানুষ হত্যা করেছে। শুধু তা-ই নয়, সেনাবাহিনীর অফিসারদের চাকরি থেকে বিদায় দিয়ে দেয়া, কারও সাত-আট বছর হয়েছে, তাদের বিদায় দিয়ে দেয়া, প্রশাসন থেকে ভালো ভালো অফিসারদের বিদায় দেয়া, একই দিনে একযোগে ১৩ জনকে ওএসডি করে দেয়। ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রথম দিনেই এটা করেছে তারা। এভাবে অত্যাচার করেছে। তিনি বলেন, তারপর রাজনীতি, প্রশাসন সব হাতে নিয়ে, হাওয়া ভবন খুলে একাকার। কারও স্বাধীন ব্যবসা করার সুযোগ ছিল না। কারণ হাওয়া ভবনে দিতে হতো একভাগ, খালেদা জিয়াকে একভাগ, সবাইকে এভাবে দিতে হতো। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তো এসব নাই।
মজুতদারিদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেবো: সংবাদ সম্মেলনে অবৈধ মজুতদারির বিষয়ে সরকারকে তথ্য দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের কষ্ট লাঘবে সরকার অবৈধ মজুতদারিদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেবে। যারা মজুতদারি করে, কালোবাজারি করার চেষ্টা করে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, আমরা নিচ্ছি। এরপর সাংবাদিকেদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা সাংবাদিকরাও একটু খুঁজে খুঁজে বের করবেন কোথায় কে মজুত করছে। আমরা খুঁজে খুঁজে বের করবো। মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সেই ব্যবস্থা নেবো। পণ্যের দাম বাড়াতে মজুতদার সিন্ডিকেটের অধিক লোভের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার থাকা সত্ত্বেও যখন দাম বাড়ে, কিছু লোক মজুতদারি করে। ইচ্ছা করে মজুতদারি করে দাম বাড়ায়। তখনই আমাদের কিছু বিকল্প পদক্ষেপ নিতে হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি সম্প্রতি সরকারের পিয়াজ আমদানির উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, পিয়াজের কথা বলি। আমি জানি পিয়াজ আছে, পিয়াজ ছাড়ছে না, নিয়ে বসে আছে। পিয়াজ পচাবে, ফেলে দেবে তাও বেশি দামে বেচবে। যখন আমদানি শুরু করলাম, ৫ লাখ টন পিয়াজ কিনবো ঠিক করলাম। ১০/১২ হাজার টন আসতে না আসতে পিয়াজের দাম কমে গেল। মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে বৈশ্বিক সংকটময় পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান সবাইকে উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ দেন।