নির্বাচন এলেই যে প্রসঙ্গ আলোচনায় ওঠে সিলেট নগরে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জুন ২০২৩, ৯:১৮ অপরাহ্ণ
সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানও স্বস্তিতে ছিলেন না। বৃষ্টি হলেই ডুবে যেতো সিলেট নগরী। এরপর মেয়র হলেন আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি পুরাতন ২৭টি ওয়ার্ডে অনেকখানি সফল। জলাবদ্ধতা দূর করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন। পুরোপুরি সংকট কাটেনি। তবে আগের মতো আর জলজট হয় না। যেটুকু হয় তা দ্রুততম সময়ে পানি চলে যায়। কিন্তু সেই জলাবদ্ধতাই এবারের সিলেট সিটি নির্বাচনে ঘুরে ফিরে আলোচনার। এ নিয়ে হয়েছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
সিলেটের রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিত্ব সোনাতলার বিরোধ মীমাংসায় ব্যস্ত। সংঘর্ষের পর থেকে সিলেটের জলাবদ্ধতা নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে। টানা গরমে অতিষ্ঠ ছিল সিলেট। ভরা মৌসুমেও হচ্ছিল না বৃষ্টি। এবার উজান থেকে আসেনি পাহাড়ি ঢল। ফলে বৃষ্টির জন্য হাহাকার ছিল। গত তিনদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। একনাগারে বর্ষণ না। রাতে কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হয়। এতেই জলজট। নগরের জলজট তেমন চোখে দেখেন না নগরের মানুষ। রাতের ভোগান্তি সকালের মধ্যে শেষ হয়ে যায়।
এবার সিলেট সিটি করপোরেশনে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে আরও ১৫টি ওয়ার্ড। সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বছর খানেক আগে এই ওয়ার্ডগুলোকে নগরে সংযুক্ত করেন। সিটিতে যুক্ত হলেও এই ওয়ার্ডগুলোতে কাজ করার সুযোগ হয়নি। ছিলেন না কোনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও। এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর ওয়ার্ডের জনগণ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি পাবেন। নতুন এই ১৫ ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতা এসেছে আলোচনায়। গত বুধবার ভোররাতে বৃষ্টিতে নগরের পশ্চিম-উত্তর অংশের শেষের জনপদ সোনাতলার আশপাশ এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। একই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরও জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় ভুক্তভোগী জনগণ রাস্তা অবরোধ করেন। পরে পানি অপসারণকে কেন্দ্র করে ১০-১২টি গ্রামের মানুষের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হন। গতকাল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- মানুষের বাসাবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জলাবদ্ধ থাকায় জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। শুধু ওই এলাকা নয়, নগরের ১৫টি ওয়ার্ডেই জলাবদ্ধতা বড় সমস্যা। ৩৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আলতাফ হোসেন সুমন, ৩৮নং ওয়ার্ডের প্রার্থী গিয়াস আহমদ জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে ওই এলাকায় জলজট তীব্র হয়। এবার বাদাঘাট সড়ক নির্মাণ শুরু করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করতে হলে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান মানবজমিনকে জানিয়েছেন, আমরা নতুন ওয়ার্ডগুলোকে সিটিতে অন্তর্ভুক্ত করলেও সেখানে কাজ শুরু হয়নি। এই ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়ন কর্মকা- এখনো পর্যালোচনায় রয়েছে। এ কারণে সিটি করপোরেশন নতুন ওয়ার্ডগুলোতে কাজ করতে পারেনি। তবে, নতুন পরিষদ আসার পর এসব ওয়ার্ডে উন্নয়ন কাজ হবে। তখন আর জলাবদ্ধতা থাকবে না বলে জানান তিনি। সিলেট সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ জানিয়েছেন, উন্নয়ন কাজ হওয়ার কারণে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। তবে সেটি সাময়িক। আমরা চেষ্টা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংকটের সমাধান করতে।
এতে এলাকার মানুষের সহযোগিতা থাকলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এদিকে, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় প্রসঙ্গ উঠছে জলাবদ্ধতা। আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী গতকালও বলেছেন, সিলেট নগরে বিগত দিনে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। সেটি অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে, কতোটুকু পরিকল্পিত হয়েছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন আছে। পরিকল্পিত উন্নয়ন হলে অবশ্যই সিলেটের মানুষ এর সুফল ভোগ করতে পারতো। তিনি বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের সঠিক মাস্টার প্লান প্রণয়ন জরুরি। মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে পরিকল্পিত উন্নয়ন করা হলে সিলেটের সমস্যা আর থাকবে না। জাতীয় পার্টির পার্টি নজরুল ইসলাম বাবুলও প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন জলাবদ্ধতার। তিনি গতকাল জানিয়েছেন, অতীতে সিলেট নগরে পরিকল্পনা মতো কাজ হয়নি। পরিকল্পিত কাজ হলে জলাবদ্ধতা থাকবে না। তিনি জানান, জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে সবার অংশগ্রহণে কমিটি গঠন করা জরুরি। মতামতের আলোকেই সমস্যার সমাধান করতে হবে বলে জানান তিনি।