দেশে এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৪৩:১৭,অপরাহ্ন ০৫ জুন ২০২৩
গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে খাদ্যপণ্যে। আগস্ট মাসে এ হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে। এ সময় গ্রামে এ হার ছিল আরও বেশি অর্থাৎ ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। তবে সেপ্টেম্বর মাসে সামান্য কমে সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে। এর আগে ২০০৫-০৬ ভিত্তি বছর ধরে ২০১০-১১ অর্থবছরের সর্বোচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ। এরপর আর কখনই এত মূল্যস্ফীতি হয়নি খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে দুই মাসের হিসাব সম্পর্কিত প্রতিবেদনটি অবহিত করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এর পরই ব্রিফিংয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক পরবর্তী ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। আরও ছিলেন পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ, আইএমইডি সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. কাউসার আহমেদসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা (সচিব)।
বিবিএসএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১ শতাংশে, যা আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। খাদ্যেপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা আগস্টে ছিল ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে নীতিমালাগত সহায়তার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজার তদারকি এবং পণ্য চলাচল বাধাহীন করা হয়েছে। তবে এখন গুদামে মজুতের বিরুদ্ধে অভিযানের বাইরে নীতিমালা দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিনা সেদিকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। ফলে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। তিনি আরও বলেন, শুধু মূল্যস্ফীতি নয়, এর সঙ্গে শ্রমিকদের মজুরি হারও বেড়েছে। আগস্টে মজুরি হার ছিল ৬ দশমিক ৮০, সেপ্টেম্বরে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৮৬-তে। এ সময় কৃষি, শিল্প ও সেবা সবক্ষেত্রেই মজুরি হার বেড়েছে। মন্ত্রী বলেন, সরকার ১ কোটি ফ্যামিলি কার্ড দিয়ে ৪ কোটি মানুষের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন করা হয়েছে। ফলে মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়তা করেছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ আমাদের একার হাতে নেই। এটা বিশ্ববাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত। তারপরও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
এমএ মান্নান জানান, বিশ্বের অন্যান্য বড় বড় অর্থনীতির দেশও মূল্যস্ফীতির শিকার। যেমন আমেরিকার মতো দেশেও ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। আগামী ২০২৩ সালে ১৩ শতাংশ হতে পারে বলেও আগাম ধারণা দেওয়া হয়েছে ওই দেশে। সেখানে আমরা তো অনেক ছোট অর্থনীতির দেশ।
বিবিএস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহরে সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশে, যা আগস্ট মাসে ছিল ৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। এ সময় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ।
এদিকে সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশে, যা আগস্ট মাসে ছিল ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। এ সময় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৮ দশমিক শূন্য ৯৫ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশে, যা আগস্ট মাসে ছিল ৯ দশমিক ১৮ শতাংশ।