জনপ্রতিক্রিয়া : বাজেট বুঝি না, জিনিসপত্রের দাম কমান
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:১৭:৪৪,অপরাহ্ন ০২ জুন ২০২৩
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
আমরা সাধারণ মানুষ বাজেট বুঝি না। আমরা বুঝি ৩০ টাকার চাল ৬০ টাকা হইছে। এরপর যদি আরও ১০ টাকা বাড়ে তাহলে বুঝবো দাম বাড়ছে। বাজেট তো হলো শিক্ষিত মানুষের কথা। আমরা চাই জিনিসপত্রের দাম কমুক। চারটা খাইয়া পইরা ভালো মতো বাঁচতে চাই। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কাওরানবাজারে বাজার করতে আসা মো. সোলায়মান। বলেন, ‘দেখবে কে? কার কাছে অভিযোগ দেবো। ধরেন ইন্ডিয়ায় যদি চিনির দাম হয় ৬০ টাকা, বাংলাদেশে হবে ৭০/৮০ টাকা। এই চিনির দাম ১২০ টাকা হয় কীভাবে? সরকার কি ব্যবসায়ীদের কাছে বান্ধা? বান্ধা হইলে আমরা আর কী করমু? এভাবেই চলতে হইবো।’
রাজধানীর কাওরানবাজার। তীব্র গরমে ব্যাগের থলি হাতে বাজার করছেন শ’ শ’ মানুষ। প্রকৃতির গরমের থেকেও বাজারের গরম যেন দ্বিগুণ। বাজেট ঘোষণার পর বাজারে দেখা যায়, বাজেট নিয়ে আলোচনা খুব একটা নেই। তবে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই বলছেন, জিনিসপত্রের যে দাম তাতে আর তারা কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। খাবার ব্যয় তলানিতে নিয়ে আসার পরও চলছে না সংসার। ব্যক্তিগত বাজেটের সর্বোচ্চ দেবার পরও ভরছে না বাজারের ব্যাগ।
বেসরকারি চাকরিজীবী সাইদুল ইসলাম বলেন, আমাদের জান বের হয়ে যাচ্ছে। বেতন তো বাড়ে না। দিনকাল কতোটা খারাপ যাচ্ছে বলে বোঝানো যাবে না। সবকিছুর দাম বৃদ্ধি। কাঁচামরিচ ছিল ৮০ টাকা আজকে ১২০ টাকা। কারও কাছে কিছু বলার নাই। অনেক কষ্টে দিন যাচ্ছে। তিনি বলেন, কার কাছে কী বলবো। আমাদের আল্লাহ ছাড়া কেউ নাই।
ব্যাগে করে কাপড় বিক্রি করেন আকাশী বেগম। তিনি বলেন, ‘গরিবের কিছু করন নাই। আমাগো লাইগা সরকার কান্দে না। আমরা কই যামু। এহন আমরা খাইয়া না খাইয়া বাঁইচা থাকতে হইবো। চাল কিনতে টাকা শেষ। মাছ খাইতে পারি না। তরিতরকারি কিনতে পারি নাই। ৮০০ টাকা গরুর মাংসের কেজি। এত ভাবতেও পারি না। আগে যে মাছ খাইতাম না, সেই মাছ এখন কিনতে পারি না।’
মসলা ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, বাসাভাড়া আর চাল কিনে আর কুলায় না। এখন চাল বাদে বাজার করতে ৫০০/৬০০ টাকা লাগে। আগে লাগতো ২০০/২৫০ টাকা। কাওরান বাজারে কুলির কাজ করেন মো. সবুজ। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জ। নদীতে সব খাইছে। এহানে কুলির কাজ করি। সারাদিনে ৪০০/৫০০ টাকা ইনকাম হয়। বাড়ি ভাড়া দেওন লাগে ৪০০০ টাকা। বাকি টাকা দিয়া খাই কি, আর পোলা-মাইয়াগো পড়াই কি?’ তিনি বলেন, ‘রোজার ঈদের সময় এক আপায় গরুর মাংস দিছিল এরপর আর একদিনও ব্রয়লার মুরগিও খাইতে পারি নাই। মানুষ যারা চাকরি করে তাদের বেতন একরকম থাকে। আমাগো বিপদ আরও বেশি। যখন জিনিসপত্রের দাম বাড়ে তখন আমাগো আয় কমে। আয়ও কম হয় আবার বেশি দাম দিয়া জিনিসও কেনা লাগে।’
আমরা দুজন চাকরি করেও সংসার চালাতে পারছি না বলেন বেসরকারি চাকরিজীবী আনিকা। বলেন, আমার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে-মেয়ে বড় হচ্ছে, খরচ বাড়ছে। আমাদের দু’জনের স্মার্ট স্যালারি এরপর যেন সবকিছু থমকে যাচ্ছে। এখন মূলত সংকোচন করে জীবন চলছে। আগে সারা মাসে ৫ কেজি পিয়াজ কিনতাম। আর মাসের বাজার করলাম। ৩ কেজি পিয়াজ নিলাম। এ নিয়েই মাস চালাবো। তিনি বলেন, আগে মাসের বাজারে ২/৩ কেজি গরুর মাংস কিনতাম। এবার কিনেছি ১ কেজি। যেভাবে চলছে সামনে হয়তো আর মাংস ছাড়াই বাজার শেষ করতে হবে। বাজেটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজেট হিসাব-কিতাব তো আমি বুঝি না। কিন্তু বাজেট এমন একটা বিষয় সারাবছর সবকিছুর ঘোষণা ছাড়াই দাম বাড়ে আর বাজেটে দাম বাড়ে ঘোষণা দিয়ে।সুত্র-মানবজমিন