ফেসবুকে সমকামিতার ফাঁদ, মুক্তিপণ না পেয়ে খুন
প্রকাশিত হয়েছে : ২:০৯:০৮,অপরাহ্ন ১৯ মে ২০২৩
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
মেসেঞ্জারে বিভিন্নজনকে সমকামিতার প্রস্তাব দিতেন তারেক। আগ্রহীদের সঙ্গে গড়তেন সখ্য। সাক্ষাতের জন্য গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় তাদের ডেকে আনা হতো। সেখানে জিম্মি করে আদায় করতো মোটা অঙ্কের টাকা। টাকা না দিলে ব্ল্যাকমেইলের হুমকি ও নির্যাতন করতো তারেক চক্র। এই চক্রের ফাঁদে পড়ে আমির হোসেন (২৫) নামের এক তরুণ লাশ হয়েছেন। মুক্তিপণ না পেয়ে তাকে হত্যা করে মরদেহ গুম করে চক্রটি। দীর্ঘ তদন্ত শেষে বুধবার নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপ এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতা তারেকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপি’র দক্ষিণখান থানা পুলিশ। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম। গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. তারেক ওরফে তারেক আহাম্মেদ (৩১), মোহাম্মদ হৃদয় আলী (২৯), আশরাফুল ইসলাম (২৩), রাসেল সরদার (২৫) ও তৌহিদুল ইসলাম বাবু (৩০)।
উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম জানান, ২০২২ সালের ১৭ই ডিসেম্বর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বাড়ি থেকে ঢাকা আসেন আমির।
২২শে ডিসেম্বর দক্ষিণখানে বড় বোনের বাসায় ওঠেন। এরপর তিনি নিখোঁজ হন। ২৮শে ডিসেম্বর আমিরের ছোট বোনকে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা ফোন দিয়ে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। এ ঘটনায় আমিরের বড় ভাই বিল্লাল হোসেন দক্ষিণখান থানায় ওইদিনই সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। গত ১৩ই এপ্রিল একই থানায় অপহরণ মামলা করেন বিল্লাল।
তিনি বলেন, অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা অত্যন্ত দুর্ধর্ষ ও চতুর। তাদেরকে শনাক্ত করতে বেশ কয়েকবার কৌশল পরিবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় চক্রের সদস্য আশরাফুল ইসলামকে সাভারের জিরাবো এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যে রাসেল সরদার ও তৌহিদুল ইসলাম বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার তিনজনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার নোয়াখালীর দুর্গম হাতিয়া দ্বীপে অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতা তারেক আহাম্মেদ ও তার সহযোগী মোহাম্মদ হৃদয় আলীকে গ্রেপ্তার করে দক্ষিণখান থানার বিশেষ একটি দল। গ্রেপ্তারদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকার একটি বাড়ির পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে অপহৃত আমিরের হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পলিথিনে মোড়ানো বস্তাবন্দি গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ডিসি মোর্শেদ আলম জানান, মূলহোতা তারেকের কষ্টের জীবন নামের একটি ফেক ফেসবুক আইডি ছিল। সেটি ব্যবহারে বিভিন্ন সময় ফেসবুক মেসেঞ্জারে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সমকামিতার প্রস্তাব দিতেন। তার প্রস্তাবে রাজি হওয়া তরুণদের গাজীপুরের চৌরাস্তা, শ্রীপুর ও মাওনাসহ বিভিন্ন এলাকায় সাক্ষাতের জন্য ডাকা হতো। এরপর মোবাইল ও টাকা কেড়ে নিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দিতেন। ঠিক এভাবেই নিহত আমিরকে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে গাজীপুর চৌরাস্তায় ডেকে আনেন তারেক। আমির তার বোনের বাসা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তায় গেলে তারা তাকে জিম্মি করেন। পরে তার বোনের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে চক্রটি। মুক্তিপণ না পাওয়ায় ২০২২ সালের ২৯শে ডিসেম্বর আমিরকে হত্যা করা হয়। এরপর বস্তায় লাশ ভরে বাসার পেছনে পরিত্যক্ত সেপটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রেখে আত্মগোপনে চলে যান তারা।