প্রেমের জ্বালা নিভিয়ে দিলো তামান্নার জীবন
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০৭:৩৪,অপরাহ্ন ১৫ মে ২০২৩
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
তামান্না আক্তার। বিশ বছরের সুন্দরী তরুণী। পরিবারের অগোচরে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন মামুন খান শুভ (২৮) নামে এক যুবকের সঙ্গে। ৩ বছর চলে তাদের মন দেয়া নেয়া। পরে গোপনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সুন্দর স্বপ্ন দেখতে থাকে তামান্না। আগামীর সংসার ও স্বামীকে নিয়ে নানা পরিকল্পনা তার। হাসি-আনন্দে কাটছিল সময়। একদিন দুই পরিবার তাদের বিয়ে মেনে নেবে- এই আশায় সময়ের প্রহর গুনছিলেন তিনি। এক সময় তার নাকের নাকফুল দেখে পরিবার বিয়ের বিষয়টি জেনে যায়।
নিরূপায় হয়ে তামান্না শুভকে অনুরোধ করেন তার পরিবারকে তাদের বাড়িতে পাঠাতে। তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে। অথবা তামান্নাকে যেন শুভ তাদের বাড়িতে নিয়ে যান। কিন্তু বাদ সাধে শুভ।
এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনমালিন্য দেখা দেয়। এ নিয়ে ভালোবাসার মানুষের হাতে শারীরিক নির্যাতন ও অবহেলার শিকার হয়ে তামান্না পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে। বিয়ের ২ মাসের মাথায় ভালোবাসার বিয়ের পরিসমাপ্তি ঘটে। বেদনাদায়ক ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল এলাকার ৮নং রোডে সখিরা বেগমের ভাড়া বাড়ির দ্বিতীয় তলায়। নিহত তামান্না আক্তার সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মধ্যপাড়া এলাকার মমিন মোল্লার মেয়ে। প্রেমিক স্বামী মামুন খান শুভ বরিশালের সদর থানার বাটামারা গ্রামের তাহের আলম হাওলাদারের ছেলে।
মামলার তথ্যমতে, ৩ বছর ধরে মামুন খান শুভ ও তামান্না আক্তার প্রেম করে আসছিল। ২ মাস আগে তারা গোপনে বিয়ে করে। একপর্যায়ে তামান্নার নাকে নাকফুল দেখে বিয়ের বিষয়টি তার পরিবার জানতে পারে। পরে লোক জানাজানির ভয়ে এবং মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে বিষয়টি তারা চেপে যায়।
এদিকে মামুন খান শুভ নিয়মিত তামান্নাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতো। কিন্তু বিয়ের পর থেকে ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে শুভ। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। তামান্না শ্বশুরবাড়িতে যেতে চাইলে শুভ না করতো। কখনো কখনো এ নিয়ে শুভ খারাপ ব্যবহার করতো। ভালোবাসার মানুষের এরূপ আচরণে একা হয়ে পড়ে তামান্না। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। তারপরও প্রেমিক স্বামীর ওপর আস্থা রেখে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে থাকেন। বুধবার শুভ বাসায় আসলে পুনরায় তামান্না তার কাছে শ্বশুরবাড়ির অধিকার চায় এবং শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে তাকে যোগোযোগ করে দিতে বলে।
এতে মামুন ক্ষিপ্ত হয়ে তামান্না আক্তারকে মারধর করে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে বাসা থেকে চলে যায়। যাবার সময় বলে যায়, ‘তুই আমার সঙ্গে আর কোনোদিন যোগাযোগ করবি না, তোর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। তুই আমার অপেক্ষায় না থেকে আত্মহত্যা করে মরে যা।’ এমন অপমান ও জীবনের ভুল সিদ্ধান্তের মাশুল দিতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তামান্না। শনিবার রাত ১১টার দিকে তামান্না তার বন্ধু শাহীনকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে ভিডিও কল দিয়ে বলে, ‘মামুন খান শুভ আমার সঙ্গে প্রতারণা করে আমার জীবন নষ্ট করে দিছে। আমি এ জীবন রাখবো না, আমি এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাচ্ছি আমার মৃত্যুর জন্য মামুন খান শুভ দায়ী।’
এরপর সে ফোনের লাইনটি কেটে দেয়। পরে শাহীন তামান্নার পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানালে তারা গিয়ে দেখেন নিজ ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো তামান্নার দেহ ঝুলছে। সন্তানকে হারিয়ে নির্বাক বাবা-মা। নিহত তামান্নার ভাই জুম্মন জানান, তামান্নার মোবাইল চেক করলেই এসব অভিযোগের সত্যতা মিলবে, সে তার প্রেমিক শুভর সঙ্গে অভিমান করে গলায় ফাঁস দিয়েছে। আমরা এর বিচার চাই। খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক নয়ন রাতেই লাশ উদ্ধার করেন। পরে গতকাল সকালে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠান। এ ঘটনায় গতকাল দুপুরে নিহতের মা লতিফুন (৫২) বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামুন খান শুভকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা জানান, এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনায় একটি মামলা হয়েছে।