উন্নয়ন নিয়ে সিলেটে বাহাস
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:১৮:৫০,অপরাহ্ন ২৯ এপ্রিল ২০২৩
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর চ্যালেঞ্জের জবাব সরাসরি না দিলেও উন্নয়ন বাহাসে সরব সিলেটের মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। গতকাল তিনি জানিয়েছেন, ‘চ্যালেঞ্জ নেয়া না নেয়ার বিষয়টি সময় এলেই বোঝা যাবে। তবে উন্নয়ন নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী আমার প্রশংসা করেছেন। কর্ম সম্পাদনে কয়েকবার সিলেট সিটি করপোরেশন সরকারের তরফ থেকে প্রথম স্থানের পুরস্কার অর্জন করেছে। সুতরাং কে কী বললো, সেটিতে কান না দেয়াই ভালো।’ সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে উন্নয়ন নিয়ে ‘বাহাস’ শুরু হয়েছে। আর এই বাহাসের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে মহানগর আওয়ামী লীগের বৈঠকে আরেক ধাপ এগিয়ে মেয়র আরিফকে ‘চ্যালেঞ্জ’ ছুড়ে দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। গতকাল মানবজমিনের কাছে একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, ‘মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে আমি এবারো ওয়েলকাম জানাই। তিনি দাবি করেছেন, তিনি নগরবাসীর উন্নয়ন করেছেন। গত বছর তিনি ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করে নির্বাচিত হয়েছেন।
এবারো ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করার জন্য আমি তাকে (আরিফ) আহ্বান জানাই।’ তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি গত ১০ বছর সিলেট নগরে কাক্সিক্ষত উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী, সাবেক অর্থমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে সহযোগিতা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী গত বছরই উন্নয়নের জন্য সাড়ে ১৩শ’ কোটি টাকা দিয়েছেন। প্রায় ২৮শ’ কোটি টাকা এই সিটি করপোরেশনের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সিলেটের এই উন্নয়ন কসমেটিক্স উন্নয়ন হয়েছে। আগামী নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হলে এর ফলাফল পাবেন বলে জানান আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।’ এদিকে সিলেটের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করার সেই চ্যালেঞ্জ না নিলেও উন্নয়ন নিয়ে তিনি মুখ খুলবেন বলে মানবজমিনকে জানিয়েছেন। তিনি জানান, ‘বিগত দশ বছরে কী করেছি সবকিছুর জনগণের সম্মুখে তুলে ধরা হবে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ নিয়ে সাংবাদিকদের মাধ্যমে সিলেটবাসীর কাছে উন্নয়ন ফিরিস্তি তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি।’ উন্নয়ন সম্পর্কিত বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামানের দেয়া বক্তব্যের জবাবে মেয়র আরিফ জানিয়েছেন, ‘উন্নয়ন হয়েছে কিনা সেটি তো গত কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী যে উক্তি করেছেন তারপরে আমার মনে হয় কে কী বললো না বললো সেটির উত্তর দেয়া সমুচিত হবে বলে মনে করি না।
সিলেট সিটির জনগণ ভালো করেই জানেন। যাদের চোখ আছে তারা দেখছেন। এর আগের ১৮ বছরের উন্নয়নও দেখেছেন, আমার ১০ বছরের মেয়াদেও দেখেছেন।’ মেয়র দাবি করেন, মেয়র থাকাকালে ১০ বছরের মধ্যে তিনি ৩ বছর সরকারি হেফাজতে ছিলেন। আর ২ বছর ছিল করোনাকাল। এরপর বন্যা। তারপরও এই নগরবাসী এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যথেষ্ট সহযোগিতা ছিল। উন্নয়ন যেটুকু হয়েছে মন্ত্রীরাই বক্তব্য দিয়েছেন। এবং এই সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দেশের যেক’টি সিটি করপোরেশন রয়েছে সে ক’টির মধ্যে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য যতটুকু টাকা আমাকে দেয়া হয়েছে সেগুলোর সাকসেসফুলি কাজ করার জন্যই কর্মসম্পাদনে প্রথম স্থান অধিকার করেছি বলে আমাদেরকে সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে। এখন কে কী বলছেন না বলছেন সেটি আমার দেখার কিছুই নেই।’ মেয়র উন্নয়ন বরাদ্দে বৈষম্যের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে সরকার থেকে জিওবি সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়। রাজশাহী সিটি করপোরেশনেও শতভাগ জিওবি সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনেও আমার থেকে উন্নয়ন বরাদ্দ বেশি। তারা শতভাগ জিওবি পেলেও আমি পেয়েছি ৮০ ভাগ। সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে বাকি ২০ ভাগ টাকা দিতে হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সিলেট সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন ফান্ড কোথায় থেকে এসেছে, ট্যাক্সের কতো টাকা এসেছে, সরকারের তহবিল থেকে কতো টাকা এসেছে- সবই আমি জনগণের সামনে প্রেস ব্রিফিং করে শ্বেতপত্র প্রকাশ করবো।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রথম সভা: সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে মহানগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রথম সভা করেছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। নগরীর গুলশান সেন্টারে ওই সভায় আনোয়ারুজ্জামান এবারের নির্বাচনে সিলেটবাসী মেয়র পদে পরিবর্তন চান। আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে এলেও তারা নৌকার জয় নিশ্চিত করবেন। মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মাসুকউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সাধারণ সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুলের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ জরুরি সভায় উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেনÑ সহ-সভাপতি, মফুর আলী, আসাদ উদ্দিন আহমদ, আব্দুল খালিক, ফয়জুল আনোয়ার আলাওর, বিজিত চৌধুরী, নূরুল ইসলাম পতুল, প্রদীপ ভট্টাচার্য, মো. সানাওর, জগদীশ দাশ, যুগ্ম সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, বিধান কুমার সাহা, গোলাম সোবহান চৌধুরী প্রমুখ। সভায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে বর্ধিত সভা করার সিদ্ধান্ত হয়।