সিদ্ধান্ত জানাতে সময় নিচ্ছেন মেয়র আরিফ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৪০:৩৮,অপরাহ্ন ২৫ এপ্রিল ২০২৩
সুরমা নিউজঃ
সিলেটের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। দল থেকে পরিস্থিতি বুঝানো হচ্ছে। প্রার্থী হলে কী হবে, আর না হলে কী হবে। ভোট ইভিএমে। ফলাফল নিয়ে ‘আশঙ্কা’ আছে। ভোটের পরিবেশও বড় ফ্যক্টর। কামরান জমানার ভোট হবে না। সব বিবেচনায় দলের ভেতর থেকে এবার সাড়া কম পাচ্ছেন আরিফ। ভোট করলেই স্বতন্ত্র করতে হবে। পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী বিএনপি নির্বাচনে যাবে না।
এ জন্য আরিফের সঙ্গে বিএনপি’র কর্মীরা মাঠে থাকবে না। একা একা নির্বাচন করতে হবে। এ কারণে সিদ্ধান্ত জানাতে সময় নিচ্ছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তার রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, যেকোনো সময় যেকোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারেন আরিফুল হক চৌধুরী। আর সিদ্বান্ত এখন তাকে একাই নিতে হবে। উভয় সংকটে তিনি। নির্বাচন করলে দল হারাবেন। আর না করলে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দিতে হবে। তার ওপর নানা দিক থেকে চাপ আছে নির্বাচন করার। এই চাপও কম নয়। এই চাপেও হিসেব মিলছে না আরিফের। সিলেট সিটি করপোরেশনের টানা দুইবারের মেয়র তিনি। দুইবার ফুরফুরে মেজাজে নির্বাচন করেছিলেন। ২০১৮ সালে সমান সমান ভোট হওয়ার পরও বাতিল হওয়া কেন্দ্রের ভোটে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। সিলেটের ‘ভোটের রাজা’ কামরানকে পরাজিত করে নিজেই হয়ে উঠেছেন ভোট ব্যাংক। সব মহলেই ভোট আছে তার।
ঘনিষ্টজনেরা গতকাল জানিয়েছেন, জুলাইয়ে ভোটের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না আরিফ। ভেবেছিলেন দু’মাস পর নির্বাচন হবে। কিন্তু হঠাৎ করেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা। এতে কিছুটা সমস্যায় ছিলেন। সেটি অবশ্য কাটিয়ে উঠেছেন। রমজানেই ছুটে যান লন্ডনে। সেখানে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেছেন। কথা হয়েছে সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও। তবে- কথা কী হয়েছে সেটি তিনি ঘোষণা দেননি। নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন সিগন্যাল ‘গ্রীন’ না ‘রেড’ সময় এলেই জানিয়ে দেবেন। তবে সিলেট বিএনপি’র কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, খোদ দলের প্রধানের কাছ থেকে এখন গ্রীন সিগন্যাল পাওয়ার সুযোগ নেই। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই বিএনপি যাবে না। এটা চূড়ান্ত ঘোষণা। এ কারণে দলের ভেতরে আরিফের পদোন্নতি সহ নানা বিষয় আলোচনায় এসেছে। ফলে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে মেয়র আরিফের সঙ্গে এখন সিলেট বিএনপি’র আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনার সুযোগ নেই। আরিফ নির্বাচন করলে বিএনপি’র কোনো নেতাকর্মীই মাঠে নামতে পারবে না।
এমনকি বিএনপি’র নেতাকর্মীরা ভোটকেন্দ্রে যাওয়া থেকেও বিরত থাকতে পারেন। এই অবস্থায় নির্বাচন করবেন কিনা- সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আরিফুল হক চৌধুরীকেই। সিলেট মহানগর বিএনপি’র সভাপতি নাসিম হোসাইন জানিয়েছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। সিলেট সিটিতে এবার বিএনপি অংশ নেবে না। এখন পর্যন্ত দলের এই সিদ্ধান্ত রয়েছে। এদিকে, আরিফুল হক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ এক বিএনপি নেতা জানিয়েছেন, আরিফুল হক চৌধুরীকে এবার ভোটের মাঠে যেতে দেয়া হবে না। এতে ক্ষতি হবে মেয়র আরিফের নিজের। বিএনপিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হবে ইভিএমে। নির্বাচনের পরিবেশ নিয়েও প্রশ্ন আছে। আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী হলে কঠিন হতে পারে ভোটের পরিবেশ। এটি এখনই আন্দাজ করা যাচ্ছে। এই পরিবেশে তার সঙ্গে কাউকে পাবেন না। এ কারণে এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরীকে ভোটের মাঠ থেকে সরিয়ে রাখাই হবে শ্রেয়। নির্বাচন করে হারলে কী হবে আরিফের? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নেতা জানান, তার বিশাল ভোট ব্যাংকে ফাটল ধরবে। পাশাপাশি তিনি বিএনপি’র ভেতরেও দুর্বল হয়ে পড়বেন। পদোন্নতিও আটকে যেতে পারে। এতে সিলেটে থাকা তার অনুসারীরাও রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়তে পারেন বলে জানান তিনি। এজন্য নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য অনুসারীদেরও চাপ রয়েছে।
এবার আগেভাগেই নির্বাচনের মাঠে নানাভাবে ‘আক্রান্ত’ হচ্ছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সিলেটের উন্নয়ন, বরাদ্দ নিয়ে নানাভাবে কথা বলছেন। এতে করে মানসিক চাপ প্রয়োগেরও চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে তার অনুসারীরা জানিয়েছেন। কদিন আগে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছিলেন, সিলেট সিটি করপোরেশন দেশের অন্য সিটি করপোরেশন থেকে কম বরাদ্দ পেয়েছে। বড় উন্নয়ন বরাদ্দ ১২শ’ কোটি টাকার। কিন্তু ওই টাকা নিয়ে আসতে হলে সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে ২০ শতাংশ বরাদ্দ করতে হয়। এতে তিনি ওই মোট টাকার মধ্যে ৬শ’ কোটি টাকার মতো বরাদ্দ নিয়ে সিলেটের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন।
তবে- মেয়র আরিফ জমানায় তার ১০ বছরে সিলেটে যে উন্নয়ন কাজ করেছেন- সেটি এখন দৃশ্যমান হচ্ছে। বিশেষ করে মাটির নিচে বিদ্যুতের লাইন নিয়ে যাওয়া, রাস্তাঘাট প্রশস্তকরণ, নতুন অন্তর্ভুক্ত ১৫টি ওয়ার্ডে রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হয়েছে। পানি সংকট দূরসহ নানাদিকে মেয়র আরিফের উন্নয়ন চোখে পড়ছে। তবে- উন্নয়নের কারণে ভোট ব্যাংক থাকলেও পলিসির কারণে আরিফ এবার দোটানায়। নিজেও পড়েছেন বাধার মুখে। সেটি হচ্ছে সিলেটের সম্প্রীতি। পাশপাশি প্রশাসনে রদবদল নিয়েও আশঙ্কা করছেন তিনি। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘এবার সিলেটের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতিতে আঘাত করা হচ্ছে। কেউ কেউ কয়েক বছর বা কয়েক মাসের জন্য সিলেটে আসেন, তারা সিলেটের সম্প্রীতিকে নষ্ট করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে- তিনি আশাবাদী- সিলেটের মানুষ এই প্রচেষ্টাকে রুখে দেবে। অতীতেও চেষ্টা করে কেউ ভাঙতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।’-মানবজমিন