সিটি নির্বাচন নিয়ে যা ভাবছে বিএনপি
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:১৯:২১,অপরাহ্ন ১৯ এপ্রিল ২০২৩
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে অটল বিএনপি। দলটির শীর্ষ নেতারা বলে আসছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। এমন অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তবে দলটির কিছু নেতা সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী। সিটি এলাকায় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখা এবং সামনের নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চান।
দলীয় সূত্র জানায়, দলের মূল প্রার্থীদের কেউ এবার সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। তবে তাদের সমর্থন নিয়ে অন্য কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। নেতারা বলছেন, সরকার নানা কারণে সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু করার চাপে রয়েছে। এক্ষেত্রে দলের প্রার্থী না হলেও নিজস্ব ঘরানার প্রার্থীরা নির্বাচন করলে তারা নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবেন। এমন অবস্থায় তারা জয়ী হলে জাতীয় নির্বাচনের জন্য একটি বড় বার্তা হবে।
সরকারের জনসমর্থন নেই বিএনপি’র এমন বক্তব্য এতে প্রমাণিত হবে। অন্যদিকে সরকার যদি নির্বাচনে কারচুপি করে নিজেদের প্রার্থীদের জয়ী করতে চায় তাহলে এটিও একটি বার্তা হবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিএনপি সিটি নির্বাচন নিয়ে কৌশল নির্ধারণ করেছে। আগের নির্বাচনগুলোর মতো এই নির্বাচনে তাই খুব বেশি কঠোরতা দেখানো হচ্ছে না।
গত সোমবার বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে আসন্ন সিটি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে দলটির কয়েকজন নেতা সিটি নির্বাচনে করণীয় কি তা নিয়ে আলোচনা করেন। কেউ কেউ বলেছেন- জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে সিটি নির্বাচন দিয়ে সরকার বিএনপিকে ফাঁদে ফেলবে। তবে স্থায়ী কমিটির বেশির ভাগ নেতা আসন্ন সিটি নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। বৈঠকে অন্তত ২ জন নেতা বলেছেন-বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ নিলে দাবি আদায়ে চলমান আন্দোলন জোরালো হবে। নেতাকর্মীরা সক্রিয় হবে। আগামী নির্বাচনের জন্য সিটি নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে দলীয় পদ-পদবি ছাড়া কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে সে ক্ষেত্রে বিএনপি কী করবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও মাঠে দল ঘরানার প্রার্থী থাকবে কিনা তা ঈদের পরই জানা যাবে। বিএনপি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন-তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন ও আগামীর নির্বাচন নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন তারা।
সিটি নির্বাচন নিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হিসাব কষছেন তারা।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, আসন্ন ৫ সিটি নির্বাচনের ভোট হবে দলীয় প্রতীকে। ইভিএমের মাধ্যমে ২৫শে মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন, ১২ই জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১শে জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণ হবে। ইতিমধ্যে ৫টি সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে।
৫ সিটির মধ্যে ৪ সিটিতে বিএনপি ঘরানার প্রার্থীরা আলোচনায় রয়েছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ দলীয় পদ-পদবিতে রয়েছে। অনেকেই সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে আগে থেকেই দলীয় পদ ছেড়ে দিয়েছেন। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আলোচনায় আছেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি এখনো নির্বাচন করার স্পষ্ট ঘোষণা দেননি। তবে নির্বাচনে লড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। তিনি নির্বাচনে না থাকলে তার পরিবারের কেউ লড়তে পারেন বলে ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। নির্বাচনের বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে ইতিমধ্যে আলোচনা সেরেছেন আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচন করবেন কিনা তা ঈদের পরেই স্পষ্ট হবে।
খুলনার সাবেক মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুও নির্বাচন করতে চান। তিনি নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগও রাখছেন। তবে দলের গ্রিন সিগন্যাল না পাওয়ায় মাঠে নামেননি। তিনি প্রার্থী না হলে তার সমর্থন নিয়ে এ সিটিতে কেউ নির্বাচন করতে পারেন। গাজীপুরে আলোচনায় আছেন বিএনপি নেতা হাসান সরকার, তবে দলীয় সিদ্ধান্ত না থাকায় তিনি প্রার্থী না হলে তার পরিবারের কেউ প্রার্থী হতে পারেন।
অন্যদিকে বরিশালে মজিবর রহমান সরোয়ারের নাম আলোচনায় থাকলেও দলীয় সিদ্ধান্ত না পেলে তিনি নির্বাচনে যাবেন না। এখানে প্রার্থী হতে পারেন দল ঘরানার কামরুল আহসান রুপন। তিনি বরিশালের সাবেক মেয়র প্রয়াত আহসান হাবিব কামালের ছেলে। কামরুল আহসান রুপন আগে ছাত্রদলের সক্রিয় নেতা থাকলেও সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি’র কোনো পদে যাননি। এ ছাড়া রাজশাহীতে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচন করবেন না বলে জানিয়েছেন। এ সিটিতেও বিএনপি ঘরানার কয়েকজন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এদিকে ৫ সিটিতেই দলটির ২ শতাধিক নেতাকর্মী কাউন্সিলর প্রার্থী হতে চাইছেন।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, সিটি নির্বাচন নিয়ে আমরা এখনো আগের সিদ্ধান্তেই আছি। নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পূর্বে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ নিবে না। এই সরকারের অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে যাবো না। পদ-পদবি ছাড়া কেউ নির্বাচন করতে চাইলে বিএনপি’র করণীয় কি জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন বলেন, এই বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কোনো পদক্ষেপ নিলে স্থায়ী কমিটি বসে সিদ্ধান্ত জানাবে। তবে বিএনপি সিটি নির্বাচন করবে না।