সিলেটে গোয়েন্দা জালে ধরা পড়লো ‘ইয়াবা হেলাল’
প্রকাশিত হয়েছে : ২:০৯:৫৮,অপরাহ্ন ১২ এপ্রিল ২০২৩
সুরমা নিউজঃ
ইয়াবা ব্যবসায়ী হেলাল। সিলেট শহরতলীর লালাবাজারে বাড়ি। আগে বাড়িতে করতো খুচরা ইয়ারা বিক্রি। এখন করে পাইকারি। সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলার ইয়াবা ব্যবসায়ীরা তার কাছ থেকে ইয়াবা নেয়। তার আছে সহযোগী ইয়াবা বিক্রেতা ভাইদের আধিপত্য। গত রমজানের পর হেলালের ইয়াবা বিক্রি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় হয়। বিক্রিতে বাধা দেয়ায় কুপিয়ে আহত করা হয়েছিল কয়েকজনকে। এরপর কয়েক দফা অভিযানের পর হেলালকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
এক মাসের অধিক সময় জেল খেটে বের হওয়া হেলাল এক বছর পর ফের গ্রেপ্তার হয়েছে। ইয়াবার চালানসহ তাকে সিলেট জেলা ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
গত সোমবার আদালতের মাধ্যমে হেলালকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ নিয়ে মাদক বিক্রি, ডাকাতিসহ নানা ঘটনায় কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়েছে হেলাল। লালাবাজারের ভালকি বিলপাড় গ্রামে গত রোববার রাতে ডিবি পুলিশের একটি টিম অভিযান চালায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাত তখন সোয়া ১০টা। হ্যান্ডকাফ পড়া আসামি এলাইচ মিয়াকে নিয়ে হেলালের বাড়িতে যায় ডিবি পুলিশ। এলাইচ মিয়াকে এর আগে তাজপুর এলাকা থেকে ১০০ পিস ইয়াবাসহ আটক করে ডিবি পুলিশ।
সে ওসমানীনগরের চিহ্নিত ইয়াবা বিক্রেতা। তার বাড়ি একই থানার মাটিহানি গ্রামে। ওই আসামি চিনতো হেলালের বাড়ি। এরপরও সে ডিবি পুলিশকে নিয়ে এলাকায় ঘুরাঘুরি করলেও হেলালের বাড়ি দেখিয়ে দিচ্ছিলো না। ডিবি পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এই অবস্থায় তারাবির নামাজের পর মসজিদের মুসল্লিদের সহযোগিতা নেন ডিবি পুলিশের সদস্যরা। মুসল্লিদের দেখানো তথ্য মতে; হেলালের বিলপাড় গ্রামে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় হেলাল বাড়িতেই ছিল। তার আরেক ভাই কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী বেলালও ছিল বাড়িতে। ডিবি পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাসার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায় বেলাল। আর হেলাল ৪টি মোবাইল ফোন, নগদ টাকা ও ইয়াবার চালানসহ অবস্থান নেয় বাথরুমে। এ সময় ডিবি পুলিশের দল বাথরুম ভেঙে হেলালকে গ্রেপ্তার করে।
সঙ্গে থাকা ওসমানীনগরের ওই ব্যবসায়ী হেলালের কাছ থেকে পাইকারি দরে ইয়াবা কিনে ওসমানীনগরে বিক্রি করতো। প্রথমে ওই ইয়াবা ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর হেলালকে আটক করা হয়। উপস্থিত থাকা গ্রামের লোকজন জানিয়েছেন, হেলাল বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এই সময় দরোজা ভেঙে তাকে আটক করা হয়। তার মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে এলাকার মানুষ অনেক আগে থেকেই প্রতিবাদী। কিন্তু পুলিশের মাঠপর্যায়ের কিছু সদস্যর শেল্টারের কারণে নিজ এলাকায় হেলাল ছিল বেপরোয়া। তার গোটা পরিবারই মাদকের সঙ্গে জড়িত। সন্ধ্যা নামলেই তার মাদক আস্তানায় ভিড় জমে ইয়াবাসেবীদের।
এ নিয়ে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। তারা জানিয়েছেন, গত ৩ বছরে দুইবার মাদক বিক্রি বন্ধ করতে এলাকার লোকজন বৈঠক করেছিলেন। তার পিতা মছব্বির মিয়াসহ স্বজনদের ডেকে এনে সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল। এতেও কোনো কাজ হয়নি; বরং গ্রামের ভেতরে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে আসা ইয়াবাসেবীদের ভিড় লেগেই আছে। এদিকে, গত বছর হেলালের মাদক আস্তানায় পুলিশের অভিযান জোরদার হলে হেলাল তার চাচাতো ভাই রফিকের বাড়িতে মাদক রেখে বিক্রি করতে চেয়েছিল। কিন্তু রফিক এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাদের পরিবারের সদস্যদের এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে হেলাল ও তার সহযোগীরা।
এ ঘটনায় পরে মামলা করায় পুলিশ হেলালকে গ্রেপ্তার করেছিল। এদিকে সহযোগীসহ হেলালকে গ্রেপ্তারের পর সোমবার সিলেট জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম ওসমানীনগর থানায় সোপর্দ করে। ওসমানীনগর থানা পুলিশ মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে সোপর্দ করে। আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করার নির্দেশ দেয়। ওসমানীনগর থানার ওসি মাঈন উদ্দিন জানিয়েছেন, হেলাল ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি জানান, মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলে সিলেট জেলা পুলিশের অবস্থান সবসময় কঠোর। পবিত্র মাস রমজানে যেখানেই অনিয়ম হচ্ছে; সেখানেই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।