সিসিক নির্বাচনে ফের প্রার্থী হচ্ছেন মেয়র আরিফ!
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৫৯:১০,অপরাহ্ন ০৯ এপ্রিল ২০২৩
সিলেটসহ চারটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সিসিক নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ,জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলনসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সমানতালে প্রচারণা চালালেও নীরব রয়েছেন বর্তমান মেয়র বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী।
বিএনপি দলীয়ভাবে এই নির্বাচনে অংশ না নিলেও আরিফুল হক চৌধুরী ফের প্রার্থী হচ্ছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার হার্টে তিনটি রিং স্থাপন করা হয়। এরপর তিনি সুস্থ হয়ে সিলেটে ফিরে আসেন। তবে গত সপ্তাহে হঠাৎ করে যুক্তরাজ্য সফরে যান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তার এই সফর নিয়ে সিলেটে ব্যাপক আলোচনা ও কৌতূহল সৃষ্টি হয়। কেউ কেউ বলছেন- হয়তো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করতে তার এই সফর।
মেয়র আরিফুলের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে জানা যায়, বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও আরিফুল হক চৌধুরী যাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন, দল থেকে গ্রিন সিগন্যাল নিতে তার যুক্তরাজ্য যাত্রা। দলীয় পদ ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন আরিফুল হক চৌধুরী। যুক্তরাজ্যের সংক্ষিপ্ত সফর শেষ করে আগামীকাল সোমবার (১০ এপ্রিল) মেয়র দেশে ফিরবেন বলেও সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির ভূমিকা কী থাকবে- জানতে চাইলে সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহ আহমদ খসরু ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিএনপির হাইকমান্ড সিলেট সিটি করপোরেশনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখে থাকে। সময়ই বলে দেবে দলীয় সিদ্ধান্ত কী আসবে। যেহেতু বর্তমান সিটি মেয়র বিএনপি পরিবারের একজন সেহেতু দল এটি আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখবে। আর এটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন, হয়তোবা দল সেক্ষেত্রে নমনীয় থাকতে পারে বা মেয়র আরিফুলের প্রতিও নমনীয় থাকতে পারে। সর্বপরি রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই।
অপরদিকে সিসিকের চারবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর ও সাবেক প্যানেল মেয়র বিএনপি নেতা রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, আমাদের দল নির্বাচনমুখী দল। দল কী সিদ্ধান্ত নেবে সেটা না প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। যেহেতু বিএনপির রাজনীতি করি সেহেতু বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে আমি নেই।
মেয়র পদে ফের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জানতে যুক্তরাজ্যে সফররত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, দেশে ফিরে তিনি তার অবস্থান জানান দেবেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সব কেন্দ্র মিলিয়ে আরিফুল হক চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৯২ হাজার ৫৯৩ ভোট। আর বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৮৬ হাজার ৩৯৭। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের চেয়ে ৬ হাজার ১৯৬ ভোট বেশি পেয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী।
সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন ঘোষণা করা হয় ২০০২ সালে। প্রথম নির্বাচন হয় চার দলীয় জোট সরকার আমলে। এতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি পৌরসভা থাকাকালে চেয়ারম্যান থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পরে ২০০৮ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায় দ্বিতীয়বার বিজয়ী হন কামরান। তৃতীয় নির্বাচন হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন। এ নির্বাচনে কামরানের সঙ্গে মেয়র পদে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। এতে আরিফুল হক পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পেয়েছিলেন ৭২ হাজার ২৩০ ভোট।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন আসাদ উদ্দিন আহমদ ও অধ্যাপক জাকির হোসেন। এরপর বদর উদ্দিন কামরান মনোনয়ন পেলেও শেষে নির্বাচনে পরাজয় বরণ করেন আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে।
এদিকে ২০২০ সালে কামরানের মৃত্যুর পর থেকে মেয়র পদে আরিফুল হক চৌধুরীকে ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জ করার মতো প্রার্থীর অভাব দেখা দেয় সিলেটে। তবে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিসিক কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলু। সম্প্রতি লন্ডন থেকে সিলেটে এসে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।