সিলেটে একসঙ্গে যৌতুকমুক্ত ত্রিশ বিয়ে!
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৫৫:১০,অপরাহ্ন ১৭ মার্চ ২০২৩
‘হুরুতার বাফ ২৫ বছর আগে মারা গেছইন। চাইরগু বাইচ্চা লইয়া খাইয়া-না খাইয়া দিন কাটাইরাম। ইদিকে পুরি বিয়ারলাখ অইছে। হাতো টেখা-পয়সা নাই, খেত-কৃষিও নাই। পুরির বিয়ার চিন্তায় রাইত ঘুম আইতো না। পয়সা নায় দেখি ভালা জামাইও পাইছলাম না। অউ সময় আল্লাহর হুকুমে বড় বিপদ থাকি উৎরাইছি। মা অইয়া একখান ফরয আদায় করলাম। দেশ-বিদেশোর বউত মাইনষে হুনছি ইখানো দান-খয়রাত করছইন। তারার লাগি দোয়া রইলো।’ – কথাগুলো বলছিলেন সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার লেংগুড়া গ্রামের মৃত হরমুজ আলীর স্ত্রী সবিলা বেগম।
কানাইঘাটের দূর্গাপুরের আলী আহমদ নিজের সামান্য জমি চাষের পাশাপাশি অন্যের জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। এতে কোনরকমে পাঁচজনের সংসার চললেও টাকার অভাবে মেয়ের বিয়ে দিতে পারছিলেন না। ভালো পাত্রের সন্ধান পেলেও দরিদ্র পরিবারের মেয়ের সঙ্গে আত্মীয়তা করতে তারা আগ্রহী হতেন না। ২২ বছরেরর মেয়ে কুলসুমা খাতুনকে নিয়ে তাই আলী আহমদের দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। ছেলেকে নিয়ে একই পরিস্থিতিতে ছিলেন গোয়াইনঘাটের জমির উদ্দিন। স্থানীয় বাজারে জ্বালানী কাঠ বিক্রি করে সংসার চালালেও ছেলের বিয়ে করাতে পারছিলেন না টাকার অভাবে।
সবিলা বেগম, আলী আহমদ, জমির উদ্দিনের মত হতদরিদ্র ৬০ পরিবারের নিরাশার জীবনে নতুন আশার আলো ছড়িয়ে দিয়েছে আল খায়ের ফাউন্ডেশন ও প্রতিদিনের বাংলাদেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেট বিভাগের এমন অসহায় পরিবারে ছেলে-মেয়েদের যৌতুকমুক্ত বিয়ের জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে ৩০ জোড়ার নবজীবনের দ্বার উন্মোচন করে দেয়। নগরীর অভিজাত আমান উল্লাহ কনভেশন হলে ৬০ পরিবারের স্বজনদের নিয়ে ব্যতিক্রমী আয়োজনে জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার রসদ হিসেবে দেওয়া হয় নানা উপহার। এসবের মধ্যে ছিল, রিকশা, সেলাই মেশিন, বিছানা, গৃহস্থালী সামগ্রী, খাদ্য সামগ্রীর পাশাপাশি দাম্পত্যের শুভসূচনার জন্য নগদ অর্থ।
জৈন্তাপুর বাল্লা গ্রামের রাসেল আহমদ রাজমিস্ত্রীর কাজ করে কোনরকমে দিন কাটালেও বিয়ে করার সামর্থ্য ছিল না। তিনি জানান, স্থানীয় একজনের মাধ্যমে যৌতুকমুক্ত বিয়ের কথা জানতে পারেন। এরপর পারিবারিকভাবে পাত্রী ঠিক করা হয়।
অবশেষে আল খায়ের ফাউন্ডেশন ও প্রতিদিনের বাংলাদেশের সহযোগিতায় স্ত্রীকে নিয়ে নতুন জীবন শুরুর সুযোগ পাওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রাসেল বলেন, অখন নিজোর রিকশা চালাইমু। বউয়ে সেলাই মেশিন দিয়া কাপড় সিলাই করব। দুইজনে মিলিয়া কাম করলে সংসারে অভাব থাকতো নায়।