৯ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি সীতাকুণ্ডের আগুন
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:১৫:১০,অপরাহ্ন ১১ মার্চ ২০২৩
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি তুলার গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সাড়ে ৯ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালাচ্ছে।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম দুলাল। তবে এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানান তিনি।
আজ শনিবার সকাল সোয়া ১০টায় উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের ছোট কুমিরা বাইপাস রোড সংলগ্ন হিঙ্গিরি পাড়া এলাকায় লোকমানের মালিকানাধীন ইউনোটেক্সের কাছে ভাড়ায় চালিত তুলার গোডাউনে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়ছে আগুনের লেলিহান শিখা।
স্থানীয়রা বলছেন, তুলার গোডাউনের সামনে থাকা নেমসান কন্টেইনার লিমিটেড থেকে যদি সময়মতো পানি পাওয়া যেত তাহলে আগুন দ্রুত নেভানো সম্ভবত হতো।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকালে তুলার গোডাউনে গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে সংস্কার করছিল শ্রমিকরা। হঠাৎ গ্যাস কাটিনের স্ফুলিঙ্গ তুলার মধ্যে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন। পুরো গোডাউনে ছড়িয়ে পড়ে আগুনের ভয়াবহ দাবানল। স্থানীয় যুবক রুবেল বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। কিন্তু তারা দেরিতে আসায় আগুনের তীব্রতা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
তুলার গোডাউনের স্টোর সুপারভাইজার আলাউদ্দিন বলেন, এই গোডাউনে ৩০ হাজার টনের অধিক তুলা ছিল। ডিপোটি এসএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা লোকমানের। তার কাছ থেকে ইউনিটেক্স লিমিটেড কারখানা মালিক গোডাউন ভাড়া নেন। তাদের নিজস্ব সুতা তৈরি কারখানার জন্য সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে তুলা মজুদ করেন।
সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম দুলাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘দেরিতে আসার ঘটনাটি সত্য নয়। যে কোনোদিন কোথাও আগুন লাগলে প্রথমে কর্তৃপক্ষ নেভানোর চেষ্টা করে। আগুন যখন বেড়ে যায় তখন সার্ভিসকে খবর দেন।’
সন্ধ্যা ৭টায় তিনি জানান, এখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তবে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসতে আরও সময় লাগবে।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সময়মতো পানি না পাওয়ার কারণে আগুন দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তুলার গুদামের বিপরীতে ছিল নেমসান কন্টেইনার লিমিটেডের ডিপো। তারা সময়মতো পানি দেননি। যখন আগুনের লেলিহান শিখা তাদের ডিপো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তখন বেলা ১টার দিকে তাদের ডিপো থেকে পানির সংযোগ দেন।
তিনি আরও বলেন, তুলার আগুন নেভানো কষ্ট। জায়গা মতো পানি না পড়লে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা খুবই কষ্টকর। আমরা যে পানিগুলো দিচ্ছি সেগুলো টিনের উপরেই পড়ছে। চেষ্টা করছি ভেতরে পানি দেওয়ার জন্য। আগুনের তীব্র তাপের কারণে সামনে গিয়ে পানি দেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আগুনের সূত্রপাত কোথা থেকে সেটি আমরা জানি না। কিন্তু স্থানীয়দের মুখে শুনেছি গ্যাসে সিলিন্ডার দিয়ে কাটিয়ের কাজ করার সময় আগুনের স্ফুলিঙ্গ তুলাতে পড়ে। সেখান থেকে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন বলেন, স্থানীয়দের মুখে শুনেছি, গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে তুলার ডিপোতে সংস্কার কাজ করার সময় আগুনের সূত্রপাত। তদন্ত করা ছাড়া এই মুহূর্তে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
এর আগে গত ৪ মার্চ উপজেলার কদমরসূল এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্লান্ট কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাতজন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হন।