ওসমানীনগরে কিশোরীর লাশ উদ্ধার, ‘কথিত প্রেমিক’ পুলিশ হেফাজতে
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৪০:২১,অপরাহ্ন ১০ মার্চ ২০২৩
উজ্জ্বল ধর:
সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় দিপা রানী সিংহ (১৪) নামের অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) ভোরে উপজেলার দুলিয়ারবন্দের নির্মাণাধীন একটি ভবনের ছাদে দিপার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ইমন (২২) নামের একজনসহ কয়েকজনকে থানা হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। ইমন নিহত দিপার ‘কথিত প্রেমিক’ এবং বালাগঞ্জ মধ্যবাজারের প্রান্ত বস্ত্রালয়ের কর্মচারী বলে জানা গেছে।
নিহত দিপা কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার তলা গ্রামের পীযুষ সিংহের মেয়ে এবং তাজপুর মঙ্গলচন্ডি নিশিকান্ত সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। পরিবারের সঙ্গে সে দুই বছর ধরে তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অরুণোদয় পাল ঝলকের মালিকানাধীন বহুতল ভবনের চার তলায় বসবাস করে আসছিল।
পুলিশ ও নিহততের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতের খাবার খেয়ে বাবা পীযুষ সিংহের সঙ্গে একই কক্ষে ঘুমিয়ে পড়ে দিপা সিংহ। ভোর পাঁচটার দিকে পীযুষ সিংহের ঘুম ভাঙলে তিনি দেখেন পাশে মেয়ে নেই। ঘরের সদর দরজাও খোলা। দিপার মা ও বড় ভাইয়ের মোবাইল এবং ঘরের চাবি নির্দিষ্ট স্থানে নেই। এরপর তারা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজির পর পাশের নির্মাণাধীন একটি ভবনের ছাদে দিপার রক্তাক্ত লাশ খুঁজে পান। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে সকাল ১০টার দিকে সুরতহাল শেষ করে ময়নাতদন্তের জন্য দিপার লাশ সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায় পুলিশ।
জানা গেছে, দিপা সিংহ প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যাবার কথা বলে বাসা থেকে বের হলেও প্রায় দিনই বিদ্যালয় ফাঁকি দিয়ে তার কথিত প্রেমিক ইমনের সঙ্গে দেখা করতো। বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই মাসে বেশির ভাগ দিনই সে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিল।
নিহত দিপার মামী বিথিকা দে বলেন, দিপা মারা যাওয়ার বিষয়টি জানার পর বালাগঞ্জ থেকে তাদের বাসায় আসার পূর্বে জানতে পারি দিপার সঙ্গে ইমন নামের এক ছেলের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। একাধিকবার দিপা বালাগঞ্জে গিয়ে ইমনের সঙ্গে দেখা করেছে। এছাড়াও বালাগঞ্জের আরেকটি ছেলেও নাকি দিপাকে পছন্দ করে। ইমন ও সেই ছেলেটির মধ্যে দিপাকে নিয়ে ঝগড়ারও হয়েছে।
নিহত দিপার মা শিল্পী রানী সিংহ জানান, দিপা মারা যাবার পর জানতে পারি দিপার সঙ্গে একটি ছেলে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত সোমবার জানতে পারি আমাদের দিপা স্কুলে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত। কেন এবং কিভাবে কী হলো বুঝতে পারছি না। আমি দিপার এমন পরিণতির জন্য জড়িতদের শাস্তি চাই।
ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাইন উদ্দিন জানান, ‘সুরতহালে দেখা গেছে নিহত দিপার মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন, পিটের কিছু অংশ থেতলানো। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি হত্যাকান্ড।’ এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইমনসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে আনা হয়েছে।’
সিলেটের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার ওসমানীনগর (সার্কেল) আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করি শিগগির ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারব।’
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার খালেদুজ্জামান, ক্রাইমসিনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোহাম্মদ সেলিম মিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওসমানীনগর (সার্কেল) আশরাফুজ্জামান, ডিবির ওসি ইকতিয়ার উদ্দিন, ওসমানীনগর থানার ওসি এসএম মাইন উদ্দিনসহ সিআইডির টিম।