রীনার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অসামান্য গল্প
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:১২:২৯,অপরাহ্ন ০৮ মার্চ ২০২৩
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
পাসপোর্ট করার জন্য এক রোহিঙ্গা প্রবাসীর স্ত্রীর অভিনব কৌশল, যা বাংলা সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম পাড়া গ্রামে। সেখানে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মো. আবদুল্লাহ নামের এক মালয়েশিয়াপ্রবাসীর স্ত্রী পাসপোর্ট বানাতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন।
রোহিঙ্গাপ্রবাসী মো. আবদুল্লাহর স্ত্রী সানজিদা বেগম এই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। তার স্বামীর বাংলাদেশি কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। তাই পাসপোর্ট করতে টার্গেট করেন একই এলাকার নিরীহ এক দোকানদার মো. আবদুল্লাহকে।
একই এলাকার বাসিন্দার নামের মিল হওয়ায় দোকানদার মো. আবদুল্লাহকে স্বামী সাজিয়ে চক্রটি প্রথমে একটি ভুয়া কাবিননামা তৈরি করে। ভুক্তভোগী মো. আবদুল্লাহর পিতা-মাতা, ভাই-বোনসহ তার বেশ কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি সানজিদা বেগমের পিতার নাম ইউনুছ হওয়ায় পিএমখালী মৌজার ইউনুছ আলর নামে একটি বিএস খতিয়ানও সংগ্রহ করে চক্রটি। সব কাগজপত্র দিয়ে পাসপোর্ট আবেদন করেন সানজিদা বেগম। যথারীতি বায়োমেট্রিকও দিয়ে আসেন পাসপোর্ট অফিসে। বাধা আসে যখন জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিএসবি) থেকে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে আসে। তদন্ত কর্মকর্তা ভেরিফিকেশন কাগজপত্রে মিল না থাকায় বাতিল করে দেন আবেদনটি।
ওই পাসপোর্টের বিষয়টির তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপপরিদর্শক আতিকুল ইসলাম জানান, পাসপোর্ট আবেদনকারী নারী সানজিদা বেগমের আবেদনে দেওয়া তথ্য ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যক্তিটি তার স্বামী মো. আবদুল্লাহ নন। বাস্তবে মো. আবদুল্লাহকে স্বামী সাজিয়ে সব ধরনের কাগজাদি জালিয়াতি করে তারা পাসপোর্ট করতে চেয়েছিলেন। এমনকি সানজিদা বেগমের পিতা-মাতার মৃত্যু সনদও কম্পিউটারে বানানো ভুয়া। আমি সব তথ্য বিবেচনা করে রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ দিয়ে আমার দায়িত্ব শেষ করেছি।
উপপরিদর্শক আরো জানান, সানজিদা পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন গত ৯ জানুয়ারি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দেওয়া হয় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি।
সানজিদা বেগমের কথিত স্বামী ভুক্তভোগী দোকানদার মো. আবদুল্লাহ জানান, সানজিদা বেগম নামে এই নারীকে তিনি কখনো দেখেননি, এমনকি চেনেনও না। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে এসে পুলিশ তার কাছে সানজিদা বেগমের তথ্য জানতে চাইলে তিনি রীতিমতো অবাক হয়ে পড়েন। তার স্ত্রীর নাম শাকিলা শারমিন। কিন্তু পুলিশ জানায়, তার স্ত্রীর নাম সানজিদা বেগম। বিষয়টি তিনি বুঝতে পেরে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের অবগত করেন এবং তিনি এই জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানান।
এ ব্যাপারে জানতে পাসপোর্টের আবেদনকারী সানজিদা বেগমের পাসপোর্ট আবেদন ফরমে উল্লিখিত নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, তার স্বামী মো. আবদুল্লাহ মালয়েশিয়াপ্রবাসী। তার স্বামীর পিতার নাম জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, আবদুস সালাম। যদিও পাসপোর্ট আবেদন ফরমে যে আবদুল্লাহর নাম উল্লেখ রয়েছে, তার পিতার নাম সোলতান আহমদ। তার সঙ্গে কথা শেষ না হতেই অপরপ্রান্তে মোবাইল কেড়ে নেন সানজিদা বেগমের বড় ভাই আইয়ুব।
পরে তার ভাই আইয়ুব বলেন, তারা এখানকার স্থানীয়। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এখানে বসবাস করে আসছেন। তার পিতার নামে খতিয়ানও আছে। তার ছোট বোনের জামাই আবদুল্লাহ থাকেন মালয়েশিয়া। তার কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। তার ছোট বোনের মালয়েশিয়া যেতে হলে স্বামীর বৈধ কাগজ দরকার।
সানজিদা বেগমের ২০১৫ সালের ইস্যু করা জন্ম নিবন্ধন কার্ড দেখে পিএমখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার সোলতান আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি মুঠোফোনে জানান, সানজিদা বেগম নামে এক নারী তার দখলীয় একটি পাহাড়ে বসবাস করেন, যার স্বামী টেকনাফ সীমান্তের হ্নীলায় বলে তাকে জানানো হয়। পূর্বপরিচিত না হওয়া সত্ত্বেও জন্ম নিবন্ধন কিভাবে পেল- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, আমি কোনো রোহিঙ্গাকে জন্ম নিবন্ধন দিইনি। আমার অজান্তে জালিয়াতির মাধ্যমে হয়তো করেছে।
পিএমখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার অহিদুল আলম জানান, সানজিদা বেগম ও তার পরিবারকে তিনি চেনেন ছয় বছর আগে থেকে। তারা সবাই জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে পাঁচ থেকে ছয় বছর আগে বান্দরবান থেকে এসে জায়গা-জমি কিনে ছনখোলা পশ্চিম পাড়ায় বসবাস করে আসছেন। ভুক্তভোগী দোকানি মো. আবদুল্লাহ অভিযোগ করেন, সানজিদা বেগমের পাসপোর্ট আবেদনে তার কাগজপত্র জালিয়াতির বিষয়টি। এ ব্যাপারে চেয়ারম্যানসহ বসার কথা থাকলেও এখনো কোনো বৈঠক হয়নি।
এ ব্যাপারে পিএমখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবদুল্লাহ জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। স্থানীয় মেম্বারসহ বিষয়টি খতিয়ে দেখব। সানজিদা বেগম ও তার পরিবারকে তিনি চেনেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের আমি চিনি না। মেম্বারসহ বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা থাকলেও এখনো কোনো সুরাহা হয়নি।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বলেন, উক্ত রোহিঙ্গা নারীকে যারা পাসপোর্ট আবেদন করতে সহায়তা করেছেন, যারা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে দিয়েছেন, যারা তার পাসপার্ট ফরম সত্যায়িত করেছেন, সবার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হওয়া উচিত। আর প্রয়োজন হলে আমরা রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে আইনের সহায়তা নেব। এভাবে সব কিছু ছাড় দেওয়া যায় না।