সিলেট মহানগর বিএনপি: একটি বৈঠক, সরে গেলেন সেলিম-পংকি
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:২২:১৭,অপরাহ্ন ০১ মার্চ ২০২৩
গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি’র বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন মহানগর বিএনপি’র তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। তাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চেষ্টার কমতি ছিল না বিএনপি নেতাদের। অন্যদিকে সেলিম প্রার্থী হওয়ায় ‘বিব্রতকর’ অবস্থায় ছিলেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। শেষ মুহূর্তে দলীয় নাটকীয়তায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন বদরুজ্জামান সেলিম। শুধু সরেই দাঁড়াননি একেবারে দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। সুদূর লন্ডনে। কিছুদিন ছিলেন ভার্চ্যুয়াল মিডিয়ার আড়ালেও। বলতে গেলে ‘গায়েব’ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সিটি নির্বাচনের পর ধীরে ধীরে তিনি নিজেকে সামনে আনেন। ভার্চ্যুয়ালি খোঁজ মিলে লন্ডনেই আছেন তিনি।
এরপর থেকে দীর্ঘ দিন লন্ডনেই ছিলেন। সিলেটে আসা-যাওয়া থাকলেও রাজনীতিতে নীরব ছিলেন। দেড় বছর আগের কথা। মহানগর বিএনপি’র নতুন আহ্বায়ক কমিটি হবে। তখন হঠাৎ করেই সরব হয়ে উঠেন বদরুজ্জামান সেলিম। লন্ডনে দেখা করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও। এরপর চলে আসেন সিলেটে। সরব হন রাজনীতিতে। সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সিলেট নগর বিএনপিতে অবস্থান রয়েছে তার। পরিচিত মুখ তিনি। মহানগর বিএনপি’র ২৭টি ওয়ার্ডের সম্মেলন ও কাউন্সিলকে ঘিরে ছুটে গেছেন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। নানাভাবে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন রাজনীতিতে। মহানগর বিএনপি’র সম্মেলন ও কাউন্সিল সামনে। প্রায় দুই মাস আগে তিনি জানান দেন সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন। প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। আলোচনায়ও রয়েছে তার নাম।
নগরের শাহী ঈদগাহের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার কারণে নগরবাসীর মধ্যে তার আলাদা গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। কিন্তু এবারো ঘটলো নাটকীয়তা। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও গতকাল শেষদিনে তিনি ফরম জমা দেননি। এমনকি ঘর থেকেও বের হননি। এর পেছনে অন্য কারণ রয়েছে। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, সিলেট বিএনপি’র বর্তমান সময়ের অভিভাবক চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তিনিসহ সভাপতি পদের অপর প্রার্থী নাসিম হোসাইন গত সোমবার রাতেই বদরুজ্জামান সেলিমের বাসায় ছুটে যান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান মিজান, মহানগর বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি জিয়াউল গনি আরেফিন জিল্লুর। প্রায় ঘণ্টাখানেক তারা বৈঠক করেন বদরুজ্জামান সেলিমের সঙ্গে। এ সময় নাসিম হোসাইন সহ কেন্দ্রীয় নেতারা তাকে নির্বাচন না করার অনুরোধ করেন। প্রথমে বদরুজ্জামান সেলিম তাদের আহ্বানে সাড়া না দিলেও শেষ মুহূর্তে সম্মতি জানান। রাতেই তাদের বৈঠকের কথা জানান দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। নানা জনের নানা মন্তব্য তাকে ঘিরে। আবার কেউ কেউ সিদ্ধান্তকে স্বাগতও জানান। তবে, এ ব্যাপারে বিএনপি’র সিলেটের নেতারা মুখ খুলেননি। তারা বিষয়টিকে সেলিমের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বলেই মনে করছেন। তারা জানিয়েছেন, কেউ নিজ থেকে নির্বাচন থেকে না সরলে তো তাকে সরানো সম্ভব নয়। সুতরাং সেলিম সরে যাওয়া চমকের কিছু নয়। বরং এর আগে সিটি নির্বাচনে তিনি অর্ধেক পথ থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন। তাকে নিয়ে ভরসা রাখা যায় না বলে মন্তব্য করেন কেউ কেউ।
তবে- বদরুজ্জামান সেলিম গতকাল মানবজমিনের কাছে তার সরে যাওয়া সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা দেননি। বললেন- ‘এখন কিছু বলতে চাই না। শুধু এটুকু জানাতে চাই- কর্মী হয়ে ছিলাম, কর্মী হয়ে থাকবো। বাকি সব আল্লাহর ফয়সালা।’ আগামী সিটি নির্বাচনে আবারো মেয়র প্রার্থী হবেন কিনা- ‘এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিম জানান, ‘আল্লাহর হুকুম যদি হয় তবে হবে। আমি আর কোনো নেতার প্রতি বিশ্বাস রাখতে চাই না। একমাত্র আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখছি।’ এদিকে- সিলেট নগর বিএনপি’র সভাপতি পদে নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন বর্তমান আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ূম জালালী পংকি। গতকাল তিনিও মনোনয়নপত্র জমা দেননি। এর কারণ ব্যাখ্যা করে পংকি মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক সভাপতি পদে প্রার্থী হতে পারবেন না- এ সংক্রান্ত একটি চিঠি কেন্দ্র তার কাছে পাঠিয়েছে। ওই চিঠি পাওয়ার পর তিনি আর মনোনয়নপত্র জমা দেননি। তবে- তিনি প্রস্তুত ছিলেন। সকাল থেকে তার ভাতালিয়াস্থ বাসায় নেতাকর্মীরা জড়ো হচ্ছিলেন। সবাইকে নিয়ে তিনি মনোনয়নপত্র দাখিলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চিঠি প্রাপ্তির পর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন বলে জানান।’ এদিকে- গতকাল মহানগর বিএনপি’র সভাপতি পদে দুই জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে একজন হচ্ছেন সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন ও বর্তমান সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী। এ পদে দুই প্রার্থীই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তবে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, সভাপতি পদে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মধ্যে। কারণ- খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির সরাসরি সভাপতি পদে সমর্থন দিয়েছেন নাসিম হোসাইনকে। এ কারণে তিনি সোমবার রাতে নাসিম হোসাইনকে নিয়ে বদরুজ্জামান সেলিমের বাসায় যান। আর মিফতাহ সিদ্দিকীর পক্ষে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এখনো প্রকাশ্য না এলেও ভেতরে ভেতরে সমর্থন রয়েছে বলে জানান নেতাকর্মীরা। তাদের মতে- খন্দকার মুক্তাদির যে বলয়ে থাকবে তার প্রতিপক্ষ বলয়েই আরিফুল হকের অবস্থান। এ কারণে সভাপতি পদে এবার লড়াই জমে উঠেছে বলে দাবি করেন নেতাকর্মীরা।