ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেটের প্রেমের ফাঁদ, ব্ল্যাকমেইল
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৪৫:৪৫,অপরাহ্ন ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
মেহেদী হাসান (২৯)। ফেসবুকে সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গে গড়েন সখ্য। তার টার্গেটে থাকে স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ধনাঢ্য পরিবারের তরুণীরা। এজন্য বেছে নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কিংবা বুয়েটের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণীদের আকৃষ্ট করতে নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট বলে পরিচয় দেন। কারও কাছে আবার পুলিশের এএসপি কিংবা ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা হিসেবেও পরিচয় দেন। এরপর তাদের সঙ্গে করেন প্রেমের অভিনয়। তবে প্রেমের একপর্যায়ে বেরিয়ে আসে মেহেদীর আসল রূপ। প্রেমিকার নগ্ন ছবি-ভিডিও হাতিয়ে দাবি করেন লাখ লাখ টাকা। ভুক্তভোগী টাকা দিতে অস্বীকার জানালে নগ্ন ছবি-ভিডিও আত্মীয় স্বজনদের পাঠিয়ে ব্লাকমেইল করেন মেহেদী।
দীর্ঘ ৭ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শতাধিক তরুণীর সঙ্গে একজন অপকর্ম করে আসছে বলে জানায় ডিবি সাইবার সূত্র।
সূত্র বলছে, সম্প্রতি পল্টন থানায় মেহেদীর নামে মামলা করেন এক ভুক্তভোগীর পরিবার। ২০২০ সালের শুরুতে মেহেদীর সঙ্গে পরিচয় হয় এক তরুণীর। তখন তরুণীর কাছে নিজেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পরিচয় দেয় সে। তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠে। পরে মেহেদীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান ওই তরুণী। তাদের প্রেমের সম্পর্ক চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন প্রলোভন দেখায় সে। তখন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে নগ্ন ভিডিও ও ছবি হাতিয়ে নেয়। একপর্যায়ে তরুণী জানতে পারেন মেহেদী একজন প্রতারক। তখন তিনি প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন করে। কিন্তু মেহেদী বিভিন্ন সময়ে ওই তরুণীর আপত্তিকর ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে আসে এবং তার কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। এরপর ভুক্তভোগী আর কোনো টাকা দিতে না চাইলে তার আত্মীয়দের কাছে তরুণীর আপত্তিকর ছবি, ভিডিও ছড়িয়ে দেয়। এই ঘটনায় পল্টন থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলায় মেহেদী হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে ঢাকা জেলার সাভার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবি সাইবার সূত্র আরও জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মেহেদী তার অপকর্মের কথা স্বীকার করে। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনেও এসবের প্রমাণ পায় ডিবি। মূলত ধনাঢ্য পরিবার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কিংবা বুয়েটে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের টার্গেট করতো সে। তার মোবাইলেও নগ্ন ভিডিও, ছবি ও চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পায় গোয়েন্দা পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মেহেদী জানায়, তরুণীদের প্রেমের অভিনয় করতে কখনো সে নিজেকে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের এএসপি বিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয় দিতো। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ধনাঢ্য পরিবারের নারীদের টার্গেট করে ফেসবুক-এ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতো। প্রেমের সম্পর্কের একপর্যায়ে নারীদের আবেগ তাড়িত এবং বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে তাদের নগ্ন ভিডিও ও ছবি সংগ্রহ করতো। পরবর্তীতে ধারণ করা নগ্ন ভিডিও ছবি অনলাইনে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে অর্থ দাবি এবং আদায় করতো।
এ ব্যাপারে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের (উত্তর) উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ বলেন, মেহেদী হাসান বিগত ৭ বছর ধরে শতাধিক মেয়ের সঙ্গে এসব অপকর্ম করে আসছে। তার মোবাইলেও অসংখ্য আপত্তিকর ছবি-ভিডিও পাওয়া গেছে। মূলত অর্থের লোভে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ধনাঢ্য পরিবারের মেয়েদের টার্গেট করে। তাদের বিয়ের প্রলোভনসহ নানাভাবে নগ্ন ছবি-ভিডিও নিয়ে পরবর্তীতে ব্লাকমেইল করে। সম্প্রতি এজন্য পল্টন থানায় একটা মামলা হলে অমরা আসামিকে গ্রেপ্তার করি।
এসব প্রতারণা ও ব্লাকমেইল থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখতে অপরিচিত মানুষের সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব না করা এবং কারও সঙ্গে আপত্তিকর ভিডিও বা ছবি শেয়ার না করার জন্য পরামর্শ দেন ডিবির এই কর্মকর্তা।