আনোয়ার নিয়ে ‘বিভক্ত’ সিলেট আওয়ামী লীগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৪৮:২১,অপরাহ্ন ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের পরিচিত নেতা। সিলেটেও রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। হঠাৎ করে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিলেটের মাঠে তিনি। গত এক মাস ধরে চষে বেড়াচ্ছেন সিলেটে। রাজনীতিতে নানা মেরূকরণ। নানা মতবিরোধ। বিভক্তিও। সজাগ চোখ বিরোধী জোটেরও। কী ঘটতে যাচ্ছে সিলেট আওয়ামী লীগে- এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন সবাই।
পরোয়া নেই আনোয়ারুজ্জামানের। ছুটছেন তো ছুটছেনই। প্রতিদিনই ব্যস্ত। সকাল থেকে রাত অবধি নানা কর্মকাণ্ড। দলীয় কিংবা সামাজিক সবখানেই তার সরব উপস্থিতি। এটি তার জন্য কঠিন পরীক্ষা। সিলেট আওয়ামী লীগে শেকড় গেড়ে থাকা নেতাদের জন্যও এটি পরীক্ষা। আনোয়ার তাদের রাজনীতির জন্য হুমকি। আনোয়ারকে নিয়ে স্পষ্টত বিভক্ত সিলেট আওয়ামী লীগে। এখনো জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতাকে কাছে পাচ্ছেন না আনোয়ার। মুখ ফিরিয়ে আছেন অনেকেই। যারা সঙ্গে আছেন তারাও কূলকিনারা পাচ্ছেন না। সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রচারণাও তুঙ্গে। পোস্টারে পোস্টারে সয়লাব সিলেট। প্রথমেই মেয়র প্রার্থী হিসেবে আনোয়ারকে চেয়ে পোস্টারিং। এরপর একে একে অন্য প্রার্থীদের পোস্টারিং চলছে। সর্বশেষ পোস্টারিং প্রতিযোগিতায় এসে যুক্ত হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। গত সোমবার রাত থেকে পোস্টারিং শুরু হয়েছে। এর আগে মেয়র প্রার্থী বলে পোস্টারিং করা হয় এটিএমএ জেবুল হাসান, আজাদুর রহমান আজাদসহ আরও কয়েকজনের। প্রচারণার লড়াই বেশ জমে উঠেছে। বিলবোর্ডও স্থাপন করা হচ্ছে। এতে নগরের পরিবেশ নষ্ট হলেও ভ্রুক্ষেপ করছেন না কেউ-ই। আগাম প্রচারণায় ব্যস্ত সবাই। এই অবস্থায় আনোয়ারকে ঘিরে সিলেট আওয়ামী লীগে বিভক্তি আরও জটিল হচ্ছে। সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের দিক থেকে আনোয়ার একদিকে আর অন্যদিকে সবাই। ধীরে ধীরে আনোয়ার ছাড়া অন্য প্রার্থীদের ঐক্য সুদৃঢ় হচ্ছে। পরপর দু’বার সিলেটে নিজেদের কোন্দলের কারণেই হাতছাড়া হয়েছিল সিটি করপোরেশনের মসনদ। ভোটের মানুষ কামরান ধরাশায়ী হন বর্তমান বিএনপি দলীয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে।
এ নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে আক্ষেপের অন্ত নেই। কিন্তু সেই বিভক্তি ২০১৯ সালের সম্মেলনের মাধ্যমে কবর দেয়া হয়েছিল। নতুন করে জেগে উঠেছিল সিলেট আওয়ামী লীগ। ঐক্যবদ্ধতা ফিরে এসেছিল দলে। বিশেষ করে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের চার নেতা জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলার সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান, মহানগর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। এতে করে সিলেট জেলা ও মহানগরে ভাঙন ধরানোর সব চেষ্টাই বিগত ৩ বছরে ব্যর্থ হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার কারণে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল সিলেট আওয়ামী লীগের মূল স্রোত হয়ে পড়েছিলেন বিচ্ছিন্ন। বার বার চেষ্টা করেও তিনি মূলধারায় ফিরতে পারেননি। তাকে সিলেটের রাজনীতিতে সেভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে না। তবে বিগত ৩ বছরের সিলেটের রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল নতুন ধারার সৃষ্টি করেছিলেন। ওই ধারার মূল ৩ নেতা হচ্ছেনÑ শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব। এর মধ্যে হাবিবুর রহমান হাবিব এখন এমপি। উপনির্বাচনে জয়লাভ করে সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এখন আনোয়ারুজ্জামান অধ্যায়ের শুরু করতে যাচ্ছেন তারা। সঙ্গে রয়েছেন সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বিজিত চৌধুরী, জেলার সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, অধ্যাপক সুজাত আলী রফিক, মহানগর যুগ্ম সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট রঞ্জিত সরকার। তাদের সঙ্গে আছেন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের বিশাল বহর।
এ কারণে আনোয়ারুজ্জামান ও তাদের অংশের নেতারা নিজেদের অবস্থান নিয়ে দুশ্চিন্তায় নয়। বরং মাঠ দখলে নিতে সব প্রক্রিয়াই তারা ধীরে ধীরে সফল হচ্ছেন। এখন তাদের কাছে বাধা কেবল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ ৪ নেতাসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা। তাদের মধ্যে অনেকেই আবার প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। এতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এসে যুক্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজও। তিনি আনোয়ারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এবং নিজে প্রার্থিতা ঘোষণা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। আনোয়ারুজ্জামান বলয়ের নেতারা জানিয়েছেন- সিলেট আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলো সবই তাদের সঙ্গে। জেলা যুবলীগ আগে থেকেই আনোয়ার বলয়ে। নতুন করে যুক্ত হয়েছে মহানগর যুবলীগ। আর জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া সম্পৃক্ত নাদেল ও আনোয়ার। এ কারণে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের সময় সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ ৪ নেতা বেঁকে বসেছিলেন। জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগও তাদের পক্ষে। ফলে মাঠে কর্মী-সমর্থকদের অভাব নেই। কেবল আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক মহলই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এ বিষয়টি সমাধানে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই সিলেটে। এরই মধ্যে সিলেটে সফর করে গেছেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাও। সুনামগঞ্জের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তারা সিলেটে এসেছিলেন। সিলেটের শান্তি সমাবেশেও এসেছিলেন। তবে এ ব্যাপারে তারা কোনো উদ্যোগ নেননি। দিন যতই যাচ্ছে; সিলেট আওয়ামী লীগের এই বিভক্তি আরও চরম পর্যায়ে যাচ্ছে। এতে করে তৃণমূলের নেতারা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এই কোন্দল মীমাংসার সুযোগ নিতে পারতেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। আনোয়ার তার এমপি হওয়ার পথ পরিষ্কার করে দিলেও সিলেট আওয়ামী লীগে আনোয়ারের অবস্থান সুসংহত করতে নীরব রয়েছেন তিনি। বরং আনোয়ার বিরোধী জোটে তার অবস্থান।