বিএনপি’র কাউন্সিল: সিলেট নগরে সরব তৃণমূল
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৪৯:৫৭,অপরাহ্ন ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
সিলেট মহানগর বিএনপি’র কাউন্সিলকে ঘিরে তৃণমূলে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সরব হয়ে উঠেছে পাড়া-মহল্লার রাজনীতি। ঘোষণা দিয়েই ভোটারদের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন প্রার্থীরা। চলছে ঘরোয়া মিটিং, বৈঠকও। ভোটারদের নজর কাড়তে প্রার্থীরা নিজেদের অতীত কর্মকাণ্ডও তুলে ধরছেন। এমন অবস্থায় প্রার্থিতা ঘোষণাকারী নেতাদের নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। দলের প্রয়োজনে যিনি হবেন যোগ্য তাকেই ভোট দিয়ে মনোনীত করা হবে বলে জানিয়েছেন ভোটাররা। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের প্রায় দেড় বছরের মাথায় এসে হচ্ছে সিলেট মহানগর বিএনপি’র সম্মেলন ও কাউন্সিল। আগামী ৪ঠা মার্চ নগরের রেজিস্ট্রারি ময়দানে এ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনসহ নানা আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। এবারের কাউন্সিলে ভোট দেবেন ১৯১৭ জন ভোটার।
তারা সিলেট মহানগরের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ২৭ ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটির নেতা। গতকাল রাতের মধ্যে বেশির ভাগ ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাকি যেগুলো আছে সেগুলোও আজকালের মধ্যে এসে যাবে বলে জানিয়েছেন মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী। তিনি মানবজমিনকে জানিয়েছেন, প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। তবে নজরকাড়া যে দৃশ্য হচ্ছে, তৃণমূলে পুরোপুরি ভোটের হাওয়া। প্রার্থীরা ভোটারদের নিয়ে বৈঠক করছেন। এমনকি বাড়ি বাড়িও যাচ্ছেন। এতে করে নেতৃত্ব আসা সম্ভাব্য নেতাদের সঙ্গে তৃণমূলের নেতাদের সুদৃঢ় সেতুবন্ধন রচনা হচ্ছে। তিনি বলেন, যারাই নেতৃত্বে আসবেন তাদের তৃণমূলের নেতাদের মনজয় করেই আসতে হবে। এতে করে দলের সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী হচ্ছে। আর দলের হাইকমান্ডও এটি চায়। এজন্য আমরা সম্মেলন ও কাউন্সিলকে অর্থবহ করতে যা করা প্রয়োজন সবই করছি। সিলেট মহানগর বিএনপির এক সময়ের সভাপতি ছিলেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এখন তিনি কেন্দ্রীয় নেতা এবং নগর পিতা।
সভাপতি পদে তিনি আসতে পারেন বলে জানা গেলেও শেষ পর্যন্ত আরিফ আসছেন না। তিনি আর সিলেট জেলা কিংবা নগরের রাজনীতিতে নয়, কেন্দ্রের রাজনীতিতে সরব থাকছেন বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠজন বিএনপি নেতারা। আরিফুল হক চৌধুরী এখন সিলেট বিভাগে বিএনপি’র অন্যতম নীতি নির্ধারকও। সভাপতি পদে সরব ছিলেন বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ূম জালালী পঙ্কি। তিনি প্রচারণায় সরব রয়েছেন। তবে- দলীয় নিয়মে বাধা পড়ে শেষ পর্যন্ত তিনি প্রার্থী না-ও হতে পারেন। এর কারণ হচ্ছে- আহ্বায়ক নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না- এমন একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে দলের কাঠামোতে। ফলে আব্দুল কাইয়ূম জালালী পঙ্কি শেষ পর্যন্ত প্রার্থী না-ও হতে পারেন। তবে, মহানগরের তৃণমূল সাজাতে এবার তারও ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। গ্রহণযোগ্য নেতা হিসেবে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন। এ কারণে এবার মহানগর বিএনপি’র সভাপতি পদে ৩ প্রার্থীর নামই বেশি আলোচিত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছেন- সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম ও বর্তমান সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী। তৃণমূলে ৩ জনই গ্রহণযোগ্য নেতা। নাসিম হোসাইন বিএনপি’র সিনিয়র নেতা হিসেবে পরিচিত। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে চেনেন অনেকেই। আর বদরুজ্জামান সেলিমও পরিচিত নেতা। দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে থাকা কিছুটা ‘গ্যাপ’ পড়েছে সিলেটে।
তবে, কয়েক মাস আগে তিনি সিলেটে এসে বিভিন্ন ওয়ার্ডের সম্মেলনে উপস্থিত থাকাসহ দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তার পক্ষে সিনিয়র নেতাদের একাংশ রয়েছে। সভাপতি পদে প্রার্থী মিফতাহ সিদ্দিকীর হাত ধরেই এবার মহানগর বিএনপি’র সম্মেলন ও কাউন্সিল হচ্ছে। তার নেতৃত্বে পাড়া বা মহল্লা কমিটি গঠনের পর ২৭ ওয়ার্ডে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়। এ কারণে মহানগর বিএনপিতে ‘অনিবার্য’ নেতা হয়ে উঠেছেন মিফতাহ সিদ্দিকী। তৃণমূলেও রয়েছে তার গ্রহণযোগ্যতা। অনেক আগে থেকেই ঘোষণা দিয়ে সভাপতি পদে প্রচারণা চালাচ্ছেন মিফতাহ। ছাত্রদল, যুবদল থেকে বিএনপিতে আসা নেতারা মিফতাহ সিদ্দিকীর পক্ষে ভোটের মাঠে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক পদেও ৩ প্রার্থী। এরা হলেন- স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও সিটি কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম, সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪ বারের কাউন্সিলর ও সাবেক প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান লোদী কয়েস ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী। এ পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখছেন কাউন্সিলররা। তারা জানিয়েছেন, শামীম, কয়েস ও এমদাদ দীর্ঘদিন ধরে মহানগর বিএনপি’র রাজনীতি করছেন।
তৃণমূলের সঙ্গে তাদের নিবিড় যোগাযোগও রয়েছে। পাশাপাশি দুর্দিনে নেতাকর্মীদের পাশেও ছিলেন তারা। রোববার রাতে সাধারণ সম্পাদক পদে শামীম বৈঠক করে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সাবেক ছাত্রদল নেতা সাফেক মাহবুব ও রেজাউল করিম নাচন প্রার্থী হচ্ছেন। তাদের দু’জনেরই গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তৃণমূলে। তারা দু’জন প্রতিদিনই ভোটারের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন এবং ভোট প্রার্থনা করছেন। কয়েকদিন আগে নাচন নগরের ১নং ওয়ার্ড দরগাহ মহল্লা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করেছেন। এ ছাড়া এ পদে সাবেক ছাত্রদল নেতা মতিউল বারী চৌধুরী খুরশেদ, আক্তার রশীদ চৌধুরী ও আব্দুল্লাহ সাফি সাহেদ প্রার্থী হচ্ছেন। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, ওয়ার্ড বিএনপি’র দায়িত্বে থাকায় শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হওয়ার যোগ্য না হতে পারেন আক্তার ও সাহেদ। তবে, এখনো তারা প্রচারণায় রয়েছেন।