ডিম-ব্রয়লার মুরগির দামে রেকর্ড, মধ্যবিত্তের উপায় কি?
প্রকাশিত হয়েছে : ২:১৫:০৯,অপরাহ্ন ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
মধ্যবিত্তের জীবনে এখন আর পকেটের হিসাব মেলে না। বেড়েই চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। ডাবল সেঞ্চুরি পার করেছে ব্রয়লার মুরগি। চড়া দামের কারণে গরু-খাসি মাংসের স্বাদ শিকেয় উঠেছে আগেই। এখন বিপত্তি ডিম কিনতে গিয়েও।ডিম ও ব্রয়লার মুরগির বাজারে অস্থিরতা চলছে এক মাস ধরে।ছোলা, ডাল, ভোজ্যতেল ও আটার দামও উর্ধ্বমুখী।
ব্রয়লার মুরগির দামে রেকর্ড। দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এত দামে বিক্রি হয়নি ব্রয়লার মুরগি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় দাম বেড়েছে মুরগির। কয়েকদিন আগেও ২১৫ থেকে ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগি এখন ঠেকেছে ২৩৫ টাকায়। আর এক মাস আগেও এই দাম ছিল ১৫০ টাকার নিচে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, সম্প্রতি বছরগুলোতে এতটা বাড়তি দামে ব্রয়লার মুরগি কখনো বিক্রি হয়নি। এতে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে এই পণ্যটি। প্রোটিন জোগানদানকারী এই ব্রয়লার মুরগি খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিচ্ছেন অনেকে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন বলছে, ব্রয়লার মুরগির এই দাম দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। দাম আরও বাড়তে পারে।
এসোসিয়েশনটির সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের কাছে কোনো মুরগি নেই। কিন্তু করপোরেট কোম্পানির কন্টাক্ট খামারে যে মুরগি সরবরাহ হচ্ছে তাই বাজারে চলছে। তা খামারেই ২১০ থেকে ২২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে প্রান্তিক খামারিরা ব্রয়লার ব্যবসা করে টিকে থাকতে পারছে না। করপোরেটদের দখলে চলে যাচ্ছে। তাছাড়া ফিডের দাম বাড়ানো হচ্ছে। মুরগির বাচ্চার দাম বাড়ানো হচ্ছে। বাজারে গরু ও খাসির মাংসের দামও ঊর্ধ্বমুখী। এককেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। যা গত সপ্তাহেও ৭২০ টাকায় পাওয়া যেতো। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকা কেজি। এদিকে বেড়েছে সোনালি মুরগির দামও। এক মাসের ব্যবধানে বাজারে সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মতো। গতকাল রাজধানীর বাজারগুলোতে সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকায়। বাজারে দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকায়। বাজারে ডিমের দামও বাড়তি। ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও অনেক খামার বন্ধ হওয়ায় বাজারে ডিম ও মুরগির সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারে আগের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। বিশেষ করে বরবটি, করলা, পটোল ও ঢেঁড়শের দাম সবচেয়ে বেশি। বিক্রেতারা বলছেন, শীত মৌসুমের সবজি না হওয়ায় এগুলোর দাম তুলনামূলক বেশি। গতকাল রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকায়, লাউ ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।
এ ছাড়া টমেটো প্রতি কেজি ৪০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, নতুন আলু ৩০ টাকায়, শিম মানভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, কাঁচকলা প্রতি হালি ৪০ টাকা, গাঁজর প্রতি কেজি ৪০ টাকা, মূলা ৪০ টাকা, খিরা ৪০ টাকা ও কাঁচামরিচ মানভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে শীত মৌসুমের সবজি নয়, বাজারে এমন কিছু সবজির সরবরাহ একেবারেই কম ছিল। সে কারণে বাড়তি দামে এসব সবজি বিক্রি হয়েছে। এগুলোর মধ্যে বরবটি প্রতি কেজি ১২০, করলা প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি পটোল প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা ও ঢেঁড়স প্রতি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাছের বাজারে দামে তেমন পরিবর্তন আসেনি, নিয়মিত চাহিদার মাছ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে বর্তমানে ছোট তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজিদরে ও বড় তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টকায়। এ ছাড়া কেজিদরে ছোট রুই ২০০ টাকা, বাইম ৪৮০ টাকা, বোয়াল ৪০০ টাকা, টাটকিনি ১৬০ টাকা, নলা মাছ ১৪০ টাকা, পাঙাশ ১৬০ টাকা, শিং মাছ ৩২০ টাকা, পোয়া মাছ আকারভেদে ১০০ থেকে ২৬০ টাকা, টেংরা ২৪০ টাকা, সিলভার কার্প ২০০ টাকা, দেশি শোল মাছ ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা ও টাকি মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজিদরে। আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে বিভিন্ন প্রকারের ডাল ও মসলা জাতীয় পণ্যের দাম। বাজারে চিকন মসুর ডাল প্রতি কেজি ১৫০ টাকা ও মোটা ১০০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি অ্যাংকর ডাল ৮০ টাকা, মুগ ডাল ১২০ টাকা, খেসারির ডাল ৯০ টাকা, বুটের ডাল ১০০ টাকা, ডাবলি ৭০ টাকা ও ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। এদিকে বাজারে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, পিয়াজ দেশি ৫০ টাকা, ইন্ডিয়ান ৪০ টাকা, আলু ২০ টাকা, রসুন বিদেশি ২০০ টাকা, দেশি ১২০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে।