হাকালুকি হাওরে এ বছর পাখি এসেছে প্রায় ২৬ হাজার
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৩৬:২৩,অপরাহ্ন ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকাজুড়ে হাকালুকি হাওর বিস্তৃত। এবছর জলচর অতিথি পাখির সংখ্যা গত বছরের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। তবে পাখির সংখ্যা আগের কয়েক বছরের তুলনায় অনেকটাই কম।
গত ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি দুই দিনব্যাপী হাকালুকি হাওরে পাখিশুমারি হয়েছে। পাখিশুমারির তথ্য শুক্রবার সন্ধ্যায় জানিয়েছেন পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক। বনবিভাগ, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচারের (আইইউসিএন) যৌথ উদ্যোগে এই শুমারি হয়। ১৯৯৯ সালে সরকার এ হাওরকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা বলে ঘোষণা করে।
জানা গেছে, বাংলাদেশে ৭১৮ প্রজাতির পাখির মধ্যে ৩৮৮ প্রজাতির পাখিই পরিযায়ী। শীতকালে পরিযায়ী হয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে আসে বাংলাদেশে। আশ্রয় হিসেবে বেছে নেয় হাকালুকি হাওরের মতো বিশাল জলাশয়। প্রায় ১৮১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ হাওরে রয়েছে ছোট-বড় ২৭৬টি বিল।
এবারের পাখিশুমারি অনুয়ায়ী, হাকালুকি হাওরে এ বছর এসেছে প্রায় ২৬ হাজার পাখি, যা গত বছর থেকে অনেক কম। ২০২০ সালে ছিলো প্রায় ৪০ হাজার ১২৬ পাখি। মাত্র কয়েক বছর আগে দেশে ৫-৬ লাখ পরিযায়ী পাখি আসতো। এসব পাখির বেশিরভাগ মৌলভীবাজার ও সিলেটের হাওরে অবস্থান করতো।
পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেন, ‘শুমারিতে ৫২ প্রজাতির ৩৭ হাজার ৭৭৮ জলচর পাখির দেখা মিলেছে। এর মধ্যে হাওরের খাল-বিলে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৭৩২টি পাখি দেখা গেছে। এ ছাড়া বেশি দেখা মিলেছে পিয়াং হাঁসের। এদের সংখ্যা ৫ হাজার ৪৫৭টি। এরপর ছোট পানকৌড়ির সংখ্যা ৪ হাজার ৫৩৭টি। শুমারির সময় হাকালুকিতে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির দুটি ফুলুরি হাঁস দেখা গেছে ।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন) এর পর্যবেক্ষণ বলছে, গত ২০ বছরে সারাদেশে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমেছে ৩৫ শতাংশ। হাকালুকিতে কমেছে ৪৫ শতাংশ। ২০০০ সালের আগে হাওরে বিচরণ করতো প্রায় ৭৫-৮০ হাজার পাখি। তার ৮০ শতাংশই হাকালুকি হাওরে ছিলো।
পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাওরের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, নদীদূষণ, জালবিষ টোপ ও পটাশ দিয়ে পাখি শিকার। একসঙ্গে বেশ কয়েকটি বিলে মাছ আহরণ, বিল শুকিয়ে মাছনিধন, বিলে ২৪ ঘণ্টা পাহারা ও জলজ বৃক্ষ নিধনসহ নানা কারণে পাখি কমছে।’
মৌলভীবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘প্রতি বছর হাকালুকি হাওরে বিল ইজারা দেয়া হয়, এ বছরও হয়েছে। এতে বেশ লোক সমাগম ঘটে। দিন-রাত পাহারা দেওয়া হয়। নানা কারণে পরিযায়ী পাখিরা স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারে না হাওরে। বিল শুকিয়ে মাছ আহরণের কারণে নষ্ট হচ্ছে হাওরের জীববৈচিত্র্য। ফলে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা প্রতিবছরই কমছে।’