সিলেটে সোনিয়া হত্যা: মামাতো ভাই সজীব লাপাত্তা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:১৮:০২,অপরাহ্ন ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
সিলেটি নাটকের অভিনেত্রী সোনিয়া আক্তারের লাশ পাওয়ার আগে বাসাতে সজীব ছিল। ঘটনার পর থেকে সে লাপাত্তা। গতকাল পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ বলছে, সজীবকে গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। ভার্চ্যুয়ালি তার অবস্থান চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। নিহত সোনিয়ার স্বজনরা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জের সজীব নানা অপরাধে জড়িত ছিল। ঢাকায়ও কয়েকটি অপরাধের ঘটনায় সে জড়িত রয়েছে। এ কারণে সিলেটে এসে কিছুদিন আত্মগোপনে থাকতো। সিলেট শহরতলীর টুকেরবাজারে তার শশুরবাড়ি। কিন্তু সজীব ঢাকাতেই বসবাস করতো।
সিলেটে এলে শশুরবাড়িতে না থেকে নগরীর খুলিয়াপাড়ার ফুফু আমেনা বেগমের বাসায় উঠতো এবং ওখানে বসবাস করতো। প্রায় ৪ দিন আগে সজীব ঢাকা থেকে সিলেটে আসে। এবং সে ওঠে সোনিয়াদের খুলিয়াপাড়াস্থ নীলিমা আবাসিক এলাকার বাসায়। স্বজন হিসেবে সে সোনিয়াদের বাসায়ই বসবাস করতো। এ কারণে তাকে নিয়ে কারও সন্দেহ ছিল না। নিহত সোনিয়ার স্বজনরা জানান, ঘটনার পর যখন শয়নকক্ষে সোনিয়ার গলাকাটা লাশ পাওয়া যায় তখন থেকেই তারা সজীবকে খুঁজছিলেন। কিন্তু তাকে পাচ্ছিলেন না।
পরে বাথরুমে রক্তমাথা একটি ভিজে প্যান্ট পাওয়া যায়। ওই প্যান্ট সজীবের বলে তারা চিহ্নিত করেন। এ ছাড়া সোনিয়ার ঘরের আলমারিতে জমি কেনার জন্য প্রায় ৩ লাখ টাকা রাখা ছিল। স্বর্ণও ছিল কয়েক ভরি। সেই স্বর্ণগুলোও উধাও। নিহত সোনিয়ার মা আমেনা বেগমের দাবি- সজীবই তার মেয়েকে হত্যা করেছে বলে ধারণা তার। কারণ- ঘটনার পর থেকে সজীব লাপাত্তা। মোবাইল ফোনে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি আলী মো. মাহমুদ গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সোনিয়ার খুনিদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি অভিযানও চলছে। খুব শিগগিরই এ ঘটনার খুনি গ্রেপ্তার হবে বলে জানান তিনি। বলেন, ঘটনার পর ভার্চ্যুয়ালি সহ নানাভাবে তদন্ত চলছে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে। তবে, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘটনায় কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। ময়না তদন্ত শেষে সোনিয়ার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে, বিকালে হাসপাতালের মর্গ থেকে সোনিয়ার লাশ বাসায় নিয়ে আসা হলে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এ ঘটনায় সিলেটের খুলিয়াপাড়া এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এমন ঘটনায় বাকরুদ্ধ এলাকার মানুষ। তারা জানিয়েছেন, সোনিয়ারা যে বাসায় বা যে গলিতে বসবাস করে সেটি গিঞ্জি জনপদ। সোনিয়াদের এক বাসাতেই অনেক আত্মীয়স্বজন বসবাস করতেন। আত্মীয় পরিচয়ে অপরিচিত অনেকেই ওই বাসাতে আসতেন। তারা দিনের পর দিন বসবাসও করতেন। ঘটনার পর পুলিশ বাসাতে থাকা কয়েকজনকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তারা ফিরেও এসেছে। ঘটনাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান। সোনিয়ার মৃত্যুতে সিলেটি নাটকপাড়ায় শোক বিরাজ করছে। সোনিয়া এক সময় টিকটকে অ্যাক্টিভ ছিল। নাটক পাড়ার অনেককেই নিয়ে সে টিকটক করেছে। এ কারণে এক সময় টিকটকার সোনিয়া নামে পরিচিত ছিল সবার কাছে। পরে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার নাটকে অভিনয় শুরু করে। ১০-১২টি নাটকে অভিনয় করেছে সে। পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা না হলেও সোনিয়া হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটনে তারা সংশ্লিষ্ট সব বিষয়েই তদন্ত করছেন। নাটকপাড়ার কারও সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে, তার পরিবারকেন্দ্রিক ঘটনাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে বলে জানান তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা।