অর্থের অভাবে ভর্তি অনিশ্চিত কমলগঞ্জের দুই মেধাবী ছাত্রীর
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৫৩:০৩,অপরাহ্ন ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
টাকার অভাবে মেধাবী দুই ছাত্রীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই মেধাবী দুই শিক্ষার্থীর নাম জান্নাতুল কারিমা ঋতু ও বর্ষা চক্রবর্তী রাত্রী। দুজনই মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার বাসিন্দা। দুইজনই হতে চায় ডাক্তার। পারিবারিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, তাদের সেই স্বপ্ন পূরন হওয়াটা এখন অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জান্নাতুল কারিমা ঋতুর বাবা পেশায় কৃষক ও মা গৃহিনীর কাজ করেন। এ দিকে বর্ষা চক্রবর্তী রাত্রীর বাবা ছাত্র পড়িয়ে জীবন পার করেছেন। বর্তমানে বেকার জীবন যাপন করছেন ও মা সরকারি একটা চাকুরি করছেন। মায়ের সরকারি চাকরির টাকা দিয়ে চলে পুরো সংসার ও তাদের পড়াশোনার খরচ।
জানা যায়, জান্নাতুল কারিমা ঋতু সে খুব হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। মা-বাবা কষ্ট করে এ পর্যন্ত পড়িয়েছেন। সে জেএসসিতে ৪.২৮ এসএসসি পরীক্ষায় ২০২০ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে কমলগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পাশ করে। কমলগঞ্জ সরকারি গণ মহাবিদ্যালয়ে থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করে।
কিন্তু পারিবারিক অবস্থা খারাপ থাকার কারনে ভর্তি বা পড়ালেখা করা অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। বাবা কৃষি কাজ করে পরিবার চালায়,মা সারাদিন বাড়ির কাজ করেন। পরিবারে ৬জন সদস্য, বাবার কৃষি কাজের উপর সবকিছুই চলে। তিনি আর পেরে উঠতে পারে না বলেন জানান। সে হতে চায় ডাক্তার কিন্তু অর্থের অভাবে সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্ষা চক্রবর্তী রাত্রীর পরিবার তার মায়ের উপর ভরসা করে চলছে। পিতা ঝুলন চক্রবর্তী দীর্ঘ ৩৫বছর বিনা পারিশ্রমিকে ছাত্র ছাত্রীদের পড়িয়ে জীবন পার করেছেন। বর্ষার মা-ই ছিল তার পড়ালেখার ভরসা। মায়ের সামান্য আয়ে চলতো তাদের ৮ সদস্যের সংসার। তার মাঝে পড়ালেখার খরচ। ছোটকাল থেকে স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবার।
ফ্রীতে মানুষের সেবা দেবার। কিন্তু আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকার কারণে ভর্তি বা পড়ালেখা বর্তমানে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫, এসএসসিতে জিপিএ-৫ ও এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।
আলাপকালে জান্নাতুল কারিমা ঋতু জানায়, ‘আমি খুব পরিবারের সন্তান। আমার খুব ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হওয়ার। ডাক্তার হয়ে মানুষকে ফ্রী চিকিৎসা সেবা দিতে পারবো। সবাই তো স্বপ্ন দেখে, আমিও দেখলাম কিন্তু আমার স্বপ্ন এমন যে তা পূরণ হওয়ার নয়। কিন্তু আমি ডাক্তার হতে চাই, আমায় পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিন। সরকারি বা বেসরকারি ও বিত্তবানদের কাছে সহযোগীতা চাই। আপনারা আমায় সহযোগীতা করুন।’
অন্যদিকে বর্ষা চক্রবর্তী রাত্রী জানায়, আমার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবো। স্যাররা যখন ক্লাসে বলতেন তুমি কি হবে? উত্তরে বলতাম স্যার আমি ডাক্তার হবো। আজ যখন একটা পর্যায়ে আসলাম এখন সেই স্বপ্ন বাস্তব হবে কি সন্দেহ আছে। বাবা বেকার মা ছোট একটা পদে সরকারি চাকরি করেন। মায়ের আয়ের উপর আমাদের সংসার চলে। কত বড় আমাদের একটা পরিবার। কিভাবে মা সংসার বা আমার পড়াশোর খরচ বহন করবে।
সেটা নিয়ে চিন্তায় এখন দিন পার করছি। চেয়েছিলাম ডাক্তার হয়ে দেশ ও মানুষের সেবা করবো। অসহায়দের পাশে থাকবো। আমি সকলের সহযোগীতা চাই। আমার স্বপ্ন পূরন করতে সরকারি বেসরকারি সকলের কাছে সহযোগীতা কামনা করছি।আমাকে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিন।
শুক্রবার দুপুরে অদম্য দুই মেধাবী ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের মা বাবা বাড়ি উঠোনে বসে আছেন। মেয়ের এইচএসসি পরীক্ষায় ভাল ফলে উত্তীর্ণ হওয়ায় চোখে মুখে হাসি থাকলেও দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন মেয়েদের ভর্তির টাকা নিয়ে। কিভাবে জোগার করবেন ভর্তির টাকা। নিজের ভিটে-বাড়ি, জমিজমাও নাই যে বিক্রি করবেন।
জান্নাতুল কারিমা ঋতুর বাবা ফখর উদ্দিন জানান, মেয়েটা ছোট থেকেই মেধাবী। যার কারণে ওর লেখাপড়ায় কোন ভাটা পড়ুক তা চাইনি। কষ্ট করেই পড়িয়ে যাচ্ছি। কিভাবে যে তার ভর্তি পরীক্ষার টাকা জোগাড় করবো কোন কূল-কিনারা পাচ্ছি না। যদি কেউ সহযোগিতায় আসতেন, তাহলে মেয়েটার স্বপ্ন পূরণ হতো।
অশ্রুঝরা চোখে মেধাবী ছাত্রী বর্ষা চক্রবর্তী রাত্রীর বাবা ঝুলন চক্রবর্তী জানান, ‘মেয়েকে কখনো অভাব বুঝতে দেইনি। আমি বিনা পারিশ্রমিকে ৩৬টা বছর ছাত্র-ছাত্রী পড়িয়ে জীবন পার করেছি। আমার স্ত্রী ছোট একটা পদে সরকারি চাকরি করে। তার বেতন দিয়ে আমাদের সংসার ও তার পড়াশোনার খরচ চালাতো। আমার মেয়েটা অনেক মেধাবী। ওর স্বপ্ন অনেক বড় চিকিৎসক হয়ে মানুষের পাশে থাকবে। কিন্তু অর্থের অভাবে আমার মেয়েটার স্বপ্ন ভেংগে যেন না যায়। সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগীতা চাই।’
আলাপকালে কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমেদ জানান, ‘অদম্য মেধাবী দুই ছাত্রী সেরা পুরষ্কার তাদের মা বাবার পাশাপাশি আমাদের দিয়েছে। সেটা ভাগ্যের বিষয়। আমি আমার পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগীতা করার সেটুকু করবো। এখন ভর্তিসহ লেখাপড়া চালিয়ে যেতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। সমাজের বিত্তশালীদের তাদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন তিনি।’