সিলেটে বলয় বড় করছেন আনোয়ার
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:০৫:৩৪,অপরাহ্ন ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী মাঠে। সঙ্গে আছেন প্রয়াত কামরানের এক সময়ের ঘনিষ্ঠজন বিজিত চৌধুরী। একাট্টা হয়ে মাঠে সক্রিয় বিধান কুমার সাহা, রঞ্জিত সরকারসহ কয়েকজন পরিচিত নেতা। ছায়া হয়ে সঙ্গে রয়েছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ ভিপি। এই ফরম্যাট দৃশ্যমান হয়ে গেছে অনেক আগে। এখন নতুন করে বলয়ের পরিধি বাড়াচ্ছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন সিলেটে। প্রতিদিনই তার বলয়ে ভিড় জমাচ্ছেন নেতারা। ছাত্রলীগে বলয়ছুট নেতারাও এসে ভিড়ছেন কাছে। ইতিমধ্যে তাদের তরফ থেকে নগরীতে আনোয়ারুজ্জামানের নামে বড় বড় বিলবোর্ড সাঁটানো হয়েছে।
এতে করে সিলেটের রাজনীতিতে শক্তি বাড়ছে আনোয়ারুজ্জামানের। দিন যতই যাচ্ছে গতিও বাড়াচ্ছেন আনোয়ারুজ্জামান। তবে- এখনো মুখ ফিরিয়ে আছেন সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ চার নেতা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থীরা। তারা আনোয়ারুজ্জামানের এই কর্মকাণ্ডকে পর্যবেক্ষণ করছেন। সভানেত্রীর নাম নিয়ে সিলেটে মাঠে নেমে আনোয়ার সবকিছু ওলট-পালট করে দিচ্ছেন বলে- অভিযোগ তাদের। দলের ঐক্যবদ্ধতায়ও আঘাত করা হচ্ছে বলে দাবি করেন কেউ কেউ। আনোয়ারের শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে গিয়ে নাদেলের দেয়া বক্তব্যের পাল্টা জবাবও দিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন।
সিলেটের রাজনীতিতে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর অভিষেক হয়েছে অনেক আগেই। আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন- জেলা যুবলীগের বর্তমান সভাপতি ও ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম আহমদ ভিপিকে নিয়ে সিলেটের রাজনীতিতে যাত্রা শুরু করেন আনোয়ারুজ্জামান। এতে আসে সুফল। সুরমা বলয় নামে সিলেটে যুবলীগ, ছাত্রলীগের একটি বলয় রয়েছে। ওই বলয়ের শীর্ষ নেতা শামীম আহমদ ভিপি হলেও মূলত লন্ডন থেকে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ছায়া দিয়েছেন সব সময়। বিগত কয়েক বছরে এই বলয় সিলেটের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও লন্ডন থেকে সিলেটে এসে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহলের একজন হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১৩ সাল থেকে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচনকালীন সময়ে তিনি সিলেটে আসেন। প্রতি নির্বাচনেই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। এতে করে কখনো সিলেটের রাজনীতিতে আলোচিত আবার কখনো সমালোচিত হন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। প্রশংসাও কুড়ান তিনি। এছাড়া- সিলেট-২ আসন কেন্দ্রিক আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকে তিনি ওই এলাকার নৌকার টিকিটের জন্য লড়াই করেছিলেন। সিলেটের রাজনীতিতে আনোয়ারুজ্জামানের টার্নিং পয়েন্ট হচ্ছে সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন। ওই নির্বাচনে তিনি তার বন্ধু আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিবকে নিয়ে বাজি ধরেছিলেন।
সেখানে সফল হয়েছেন। সেই সফলতার পর থেকে সিলেটের রাজনীতিতে ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে ওঠেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। কয়েক মাস আগে শেষ হওয়া ওসমানীনগর উপজেলা ও বিশ্বনাথ পৌর নির্বাচনে নৌকার টিকিট পেয়েছিলেন আনোয়ারুজ্জামানের ঘনিষ্ঠজনেরা। ওই নির্বাচনে নিজ এলাকায় নৌকার জয় দেখলেও বিশ্বনাথে তার পরাজয় ঘটেছে। সিলেটের রাজনীতিতে জেলা যুবলীগে আনোয়ারুজ্জামানের আধিপত্য দীর্ঘদিনের। শামীম আহমদ ভিপি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হওয়ার পর থেকে জেলা যুবলীগের রাজনীতি নিয়ে অবস্থান সুসংহত করতে থাকেন আনোয়ার। এরপর কাউন্সিলে সভাপতি হন শামীম আহমদ ভিপি। এরপর থেকে জেলা যুবলীগের পুরোটাই চলে যায় আনোয়ারুজ্জামানের নিয়ন্ত্রণে। ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন- জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা ছাড়া সবাই রয়েছেন আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষে। জেলা ও মহানগর যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সবাই আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষে মাঠে সক্রিয়।
এ কারণে মেয়র পদে প্রার্থী হতে আনোয়ারুজ্জামান যখনই সিলেটে নামে তখন বিশাল শোডাউন হয়েছিলো সিলেটে। ওখানে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীরা মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করেন। তবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তার এই কার্যক্রমকে বলয় বাড়ানোর হিসেবে নিচ্ছেন না। তার মতে- সিলেট আওয়ামী লীগ একটি পরিবার। এখানে নেতাদের ব্যক্তি মত থাকতেই পারে। এসব মতকে মেনে নিয়েই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার কাজ করতে হবে। তবেই দল শক্তিশালী হবে। এ ছাড়া নিজ দলে নিজেদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা বজায় রাখতে হবে। তবেই যেকোনো নির্বাচনে জয়লাভ করা সম্ভব। তিনি বলেন- আমি সিলেট সিটি করপোরেশনে মেয়র প্রার্থী হতে চাই। সেটি অবশ্যই আওয়ামী লীগের প্রক্রিয়া মেনে প্রার্থী হতে হবে। আমি একজন প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে নৌকার টিকিট চাইবো। আরও যারা প্রার্থী আছেন; তারাও চাইবেন। দল যাকে মনোনয়ন দেবে আমরা তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে জয়ের জন্য মাঠে কাজ করবো। আমাদের মধ্যে অনৈক্য থাকলে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার জয় সম্ভব নয়। আর ঐক্য থাকলে জয় খুবই সম্ভব বলে মন্তব্য তার।