‘কাম নাই, রুজি নাই, সংসার চলের বড়ই কষ্টে’
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৫১:৩২,অপরাহ্ন ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
‘এক দিন কাম পাইলে দুই দিন যায় বেকার। ওখন যেতা রুজি খরি, ইতা দিয়া টাইন্যাটুইন্যা এক দিন যায়। জিনিসপত্রের দাম তো খালি বাড়ের। কাম না পাইলে খালি হাতে বাড়িত যাইতে অয়। কাম নাই, রুজি নাই, আমরার সংসার চলের বড়ই কষ্টে।’
কথাগুলো বলছিলেন দিনমজুর শুকুর আলী (৫২)। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সাউদেরগাঁও গ্রামে তাঁর বাড়ি। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কালীবাড়ি মোড়ে আজ সোমবার সকালে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। কাজের সন্ধানে প্রতিদিন সকালে এখানে আসেন তিনি।
শুকুর আলী বলছিলেন, স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার। তাঁর আয়ে সংসার চলে। কাজ পেলে দিনে আয় হয় চার থেকে পাঁচ শ টাকা। এই টাকা দিয়ে বাজারসদাই নিয়ে বাড়িতে যান। ঘরের মানুষ তাঁর অপেক্ষায় থাকেন। যেদিন খালি হাতে ফেরেন, সেদিন বড় কষ্ট হয়। তিনি বলেন, বাজারে সব জিনিসের দাম চড়া। এখন সবজি, আলু ভর্তা আর ভাত—এসব খেয়ে দিন যায়। মাঝেমধ্যে ছোট মাছ কেনেন গ্রামের হাট থেকে। মনে টানে, কিন্তু সামর্থ্য না থাকায় বাজার থেকে বড় মাছ, মাংস কিনে খেতে পারেন না।
শুকুর আলী বলেন, ‘সারা দিন কাম খইরা যা পাই, তা দিয়া চাউল কিনতে অয় আগে। এরপর অন্য চিন্তা। চাউল থাকলে ত লবণ দিয়াও ভাত খাওয়া যায়। সব কষ্ট গরিব মানুষের।’
শুধু শুকুর আলী একা নন, সকাল হলেই পৌর শহরের কালীবাড়ি মোড়ে জড়ো হন এক থেকে দেড় শ নারী-পুরুষ। কাজের সন্ধানে শহর ও গ্রাম থেকে আসেন তাঁরা। সদর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের আসক আলী (৪৮) জানান, আগের মতো কাজ নেই। লোকজনও বেশি। কেউ একজন শ্রমিক নিতে এলে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েন।
শুকুর আলীর পাশে ফুটপাতে বসে ছিলেন সাউগেরগাঁও গ্রামের ধরণী কান্ত দাস (৫৫)। তাঁর হাতে একটি থলের মধ্যে হাতুড়ি, করাতসহ বিভিন্ন সামগ্রী। ধরণী কান্ত দাস জানান, চাল-ডাল, তেল, লবণ—সবকিছুর দাম বেড়েছে। এখন পোয়া হিসেবে তেল কেনেন। ডাল-ভাত খাওয়াই দায় হয়ে পড়েছে।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নবীনগর এলাকার বাসিন্দা শ্রমিক সবুজ মিয়া (৪০) একসময় একটি বেকারিতে কাজ করতেন। করোনার সময় বেকারি বন্ধ হয়ে গেছে। এর পর থেকে প্রতিদিন এখানে আসেন কাজের খোঁজে। সবুজ বলেন, ‘ঘরে মা অসুস্থ, তাঁর চিকিৎসা, সবার খাওয়াদাওয়া—সবই আমার ওপর। একটা মেয়ে স্কুলে পড়ে। তার লেখাপাড়ার খরচও জোগাড় করতে হয়। কিন্তু দিন তো খালি কঠিন হচ্ছে। বাঁচার উপায় তো দেখছি না।’
শহরের আরপিননগর এলাকার বাসিন্দা তহুর আলী (৪৮) জানান, এখানে একসময় শহরের শ্রমিকেরা আসতেন বেশি। এখন আসছেন গ্রামের লোকজন।
সদর উপজেলার শ্রীনাথপুর গ্রাম থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার পথ হেঁটে প্রতিদিন সকালে এই শ্রমের হাটে আসেন আফিরুন বেগম (৫০)। তিনি জানান, তাঁর স্বামী ১০ বছর আগে মারা গেছেন। এর পর থেকে সংসারের জোয়াল তিনি একাই টানছেন। এক ছেলে, এক মেয়ে আছে। মেয়েটি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। আফিরুন বেগম বলেন, ‘সকালে লবণ দিয়া পানি ভাত খাইয়া আইছি। ঘরও চালপাত নাই। কাম পাইলে বাড়িত চালপাত নিয়া যাইমু।’
শ্রমিক আবদুল কাইউম বলেন, ‘আমি এক সপ্তাহ ধইরা ইকানো আই। আগে গাউত (গ্রামে) কাম করতাম। এখন গাউত কাম নাই, এর লাগি শহরে আইতে অয়।’সুত্র-প্রথমআলো