অবিশ্বাস করবেন কোন যুক্তিতে?
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:২১:৪১,অপরাহ্ন ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
সুজাত মনসুর :
সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে সিলেট আওয়ামী লীগের কতিপয় শীর্ষ নেতা মেনে নিতে পারছেন না কিংবা খবরটিকে বিশ্বাস করতে পারছেন না বলে আমাদের নিকট রিপোর্ট রয়েছে। যাদের মধ্যে দীর্ঘদিন অন্তরে মেয়র পদের স্বপ্নটি লালন করছেন তারা তো আছেনই, যারা মেয়র পদের জন্য লালায়িত নয় তারাও আছেন।
প্রথমেই দেখা যাক বিশ্বাস-অবিশ্বাসের বিষয়টি
১) আমরা জানি আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী গত একযুগ ধরে বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-২ আসনে নির্বাচন করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। সেখানে তার এক বিশাল কর্মী বাহিনী ও ব্যাপক জন সমর্থনও রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করেই নির্ভরযোগ্য সূত্রের একটা সংবাদে সব কিছু ওলট-পালট হয়ে যায়। সংবাদের সূত্র আর কেউ নন, সিলেটের সর্বজন প্রিয় ভাবী সৈয়দা জেবুন্নেসা হক। যাকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য করে সম্মানিত করেছেন। তিনি দলীয় সভাপতির সাথে দেখা করতে গেলে নেত্রী স্ব প্রণোদিত হয়েই মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেব আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নাম উল্লেখ করেন। প্রশ্ন হচ্ছে সৈয়দা জেবুন্নেসা হক-এর কথাটা কি অবিশ্বাসযোগ্য? তিনি দলীয় সভাপতির বরাত দিয়ে মিথ্যা বলার দুঃসাহস রাখেন কি? আর তিনি মিথ্যা বলবেনই বা কেন?
২) সংবাদটি যখন আমার কানে আসে তখন একটি পোস্ট দিয়েছিলাম ‘গুজব বলে’। কিন্তু পরবর্তীতে আরও কিছু সূত্রে সত্যতা নিশ্চিত হই। ভাবীর সূত্রে প্রাপ্ত সংবাদ আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীরও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু বিভিন্ন সূত্রে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়ার পর দেশে গিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার সাথে দেখা করে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে পুরোপুরি মাঠে নামার প্রস্তুতি নেয়। ২৩শে জানুয়ারি সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল, হাবিবুর রহমান হাবিব এমপি, জেলা কমিটির সহসভাপতি শাহ ফরিদ আহমেদ, সুজাত আলী রফিক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বিজিত চৌধুরীর নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী তাকে সংবর্ধনা জানান। যারা নির্বাচন ও আন্দোলনের মূল স্টাইকিং ফোর্স। কথা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নিশ্চয়ই হাই কমান্ডের অনুমতি না নিয়ে সেদিন বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়নি।
৩) আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী একই দিনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে পৃথকভাবে দেখা করে। তারপর টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করে। মাথায় সামান্যতম বুদ্ধি যার আছে তার বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, এবারে বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত ছিল সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে। দলীয় সভাপতির সবুজ সংকেত না পেলে এমনটি হওয়ার কথা নয়।
৪) টুঙ্গিপাড়া থেকে ফিরে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর জনসংযোগসহ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর নজরের বাইরে নয়। আর তিনি সবুজ সংকেত না দিলে একযুগ ধরে তিলে তিলে গড়ে তোলা সিলেট-২ আসন ছেড়ে সম্পুর্ন নতুনভাবে সিলেট সিটির মতো জটিল ও বিশাল এলাকায় নির্বাচনী প্রস্তুতি গ্রহণ আনোয়ার কেন করবে?
সুতরাং আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে প্রধানমন্ত্রী সবুজ সংকেত দেননি বলে যারা প্রচারণা চালাচ্ছে তাদের যুক্তিটি কি? কেনই অবিশ্বাস? তারা হয়তো একটা যু্ক্তি দিতে পারে এই বলে যে, অফিসিয়াল ঘোষণা তো আসেনি। এটাকে বলা হয় কুযুক্তি। কেননা, অফিসিয়াল ঘোষণা মূলত আসে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর। কিন্তু তার অনেক আগেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রস্তুতি গ্রহনের জন্য বলা হয়। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও তা করছে। যারা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলায় দুলছে তারা হয় চোখ-কান বন্ধ নতুবা তাদের হতাশা ও প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ।