সিলেটের ‘গোয়ালগাদ্দা’ শিম যাচ্ছে ইউরোপে
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৩৬:০৯,অপরাহ্ন ২৪ জানুয়ারি ২০২৩
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেটের ‘গোয়ালগাদ্দা’ শিম দেশ-বিদেশে প্রসিদ্ধ। এই জাতের শিম লন্ডন, আমেরিকাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে।
প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার কেজি গোয়ালগাদ্দা শিম রপ্তানি করা হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এবার এর উৎপাদনও হয়েছে ভালো।
সাধারণ শিমের চাইতে গোয়ালগাদ্দা আকারে অনেকটা বড়। আট থেকে দশ ইঞ্চি লম্বা ও দুই থেকে তিন ইঞ্চি প্রস্থের এই শিম সিলেটে ব্যাপক জনপ্রিয় ও সুস্বাদু। অন্য শিম থেকে এর চাহিদাও বেশি।
এই শিমের নাম গোয়ালগাদ্দা কেন তা নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। তবে কৃষি সম্প্রসারণে অধিদপ্তর সিলেটের অতিরিক্ত উপ পরিচালক মোহাম্মদ আনিসুজ্জামানের ধারণা, এই শিমের আকার অনেকটা বোয়াল মাছের মতো। আর সিলেট অঞ্চলে বোয়ালকে গোয়াল বলা হয়। একারণে এই শিমের নাম গোয়ালগাদ্দা হয়ে থাকতে পারে।
সিলেট কার্যালয়ে আসার আগে আনিসুজ্জামান গোলাপগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। এই উপজেলায়ই সবচেয়ে বেশি গোয়ালগাদ্দা চাষ হয়। এছাড়া দক্ষিণ সুরমা ও জৈন্তাপুরেও এই শিমের ব্যাপক চাষ হয়। সবমিলিয়ে সিলেট জেলায় এবার প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে এবার গোয়ালগাদ্দা চাষ হয়েছে।
আনিসুজ্জামান জানান, কেবল গোলাপগঞ্জ উপজেলায়ই ১২ শ’ হেক্টর জমিতে গোয়ালগাদ্দা চাষ হয়েছে। এই উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ও লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নে চাষ হয় সবচেয়ে বেশি।
গোলাপগঞ্জে দুই শতাধিক কৃষক এই শিম চাষ করেন জানিয়ে তিনি বলেন, এরমধ্যে শ’ খানেক কৃষক ভেজিটেবল অ্যান্ড ফুডস এক্সপোর্ট নামের একটি সংগঠনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। এই কষকদের কাছ থেকে শিম কিনে রপ্তানি করা হয়। আর চাষের শুরু থেকেই রপ্তানিযোগ্য করে শিম উৎপাদনে আমরা কৃষকদের সবধরণের সহায়তা প্রদান করে থাকি।
ঢাকাদক্ষিণের পুরানপাড়া গ্রামের সজিবুর রহমান প্রতিবছর গোয়ালগাদ্দা শিম চাষ করেন। এবারও প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে এই শিমের আবাদ করেছেন তিনি।
সজিবুর রহমান বলেন, এইবার শিমের ফলন ভালো হয়েছে। দামও মিলছে ভালো। পাইকারী বাজারে প্রতি কেজি শিম ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমার চাষের শিম বেশিরভাগই বিদেশে রপ্তানি হয়। ক্ষেত থেকেই পাইকারী ব্যবসায়ীরা শিম কিনে নেন। এরপর তারা রপ্তানিকাকদের কাছে বিক্রি করেন।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সিলেটে গত বছর প্রায় ৪৫ হাজার মেট্রিক টন গোয়ালগাদ্দা শিম উৎপাদন হয়। এবার উৎপাদন ৫০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদনের আশা সংশ্লিস্টদের।
বৃহস্পতিবার সিলেটের দক্ষিণ সুরমার রাখালগঞ্জ বাজারে গিরেয় দেখা যায়, বাজারে গোয়ালগাদ্দা শিম বিক্রি করছেন একাধিক বিক্রেতা। প্রতি কেজি শিম ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এই বাজারের বিক্রেতা রতন মনি দাশ বলেন, অন্যান্য শিমের চাইতে সিলেটে গোয়ালগাদ্দা শিমের চাহিদা বেশি। ফলে এর দামও তুলনামূলক বেশি।
রপ্তানাীকারকদের সংগঠন জালালাবাদ ভেজিটেবল অ্যান্ড ফ্রোজেন ফিশ এক্সপোর্টার্স গ্রুপ সূত্রে জানা যায়, গোয়ালগাদ্দা শিম, ইংল্যান্ড, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভ’ক্ত বিভিন্ন দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রপ্তানি হয়।
এই সংগঠনের সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত কয়েকবছর থেকেই গোয়ালগাদ্দা শিম রপ্তানি হচ্ছে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত রপ্তানি হয়। এবার প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার কেজি করে শিম রপ্তানি হচ্ছে।
সিলেটে সরকারি প্যাকিং হাউস থাকলে রপ্তানি আরো বাড়তো জানিয়ে তিনি বলেন, সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে কার্গো হাউস হয়েছে। এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন স্ক্যানার (ইডিএস) মেশিন স্থাপন হয়েছে। কিন্তু সরকারি প্যাকিং হাউস না থাকায় আমরা এর সুফল পাচ্ছি না। এতে সম্ভাবনা থাকলেও আশানুরুপ রপ্তানি হচ্ছে না।
সবজি রপ্তানির জন্য সরকারী প্র্যকিং প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এখন ঢাকায় কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্যাকিং হাউজ থেকে প্যাকিং করাতে হয়। কিন্তু সময় ও খরচ বেড়ে যায়। অনেক সময় সবজি নষ্টও হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের উপ পরিচালক খায়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, সিলেট অঞ্চলের কৃষকরা আগে তেমন সবজি চাষ করতেন না। কৃষি অধিপ্তরের প্রশিক্ষণ ও উদ্যোগের ফলে সবজি নিয়ে তাদের উৎসাহ অনেকে বেড়েছে। ফলে উৎপাদনও বাড়ছে।
তিনি বলেন, সিলেটের সবজির মধ্যে গোয়ালগাদ্দা শিম বেশ সম্ভাবনাময়। এটি ইউরোপসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এই বাজার দিন দিন বড় হচ্ছে।
রপ্তানির ফলে সব কৃষকরাই লাভবান হচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বাজারে এখন অন্য জাতের শিম ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর গোয়ালগাদ্দা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। রপ্তানি হওয়ার কারণেই এর দাম বেশি।