সিলেটে আবাসিক হোটেলে চার দিনে ওসমানীনগরের নারীসহ ৩ লাশ উদ্বার
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:১৭:৫৫,অপরাহ্ন ২৩ জানুয়ারি ২০২৩
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
বুধবার নগরীর শাপলা আবাসিক হোটেল থেকে নিলীমা বেগম লিলি নামে এক নারীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশবুধবার নগরীর শাপলা আবাসিক হোটেল থেকে নিলীমা বেগম লিলি নামে এক নারীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ
ষাটোর্ধ্ব নাজিম উদ্দিন। ভিক্ষাবৃত্তিই ছিল যার পেশা। রাত পোহালেই সিলেট নগরীর আনাচে-কানাচে ভিক্ষা করেই চলতো তার জীবন-সংসার। জানা যায়, প্রতিদিনের মতো নাজিম ভিক্ষা শেষে শনিবার রাতে হোটেলে ঘুমিয়ে পড়েন। রবিবার সকালে ডাকাডাকি করে কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে পুলিশকে খবর দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ। পরে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলায় হলেও নাজিম থাকতেন সিলেট নগরীর বন্দরবাজারের হোটেল আল ফয়েজে। কিন্তু রবিবার দুপুরে সেই আবাসিক হোটেলের ১২ নম্বর কক্ষ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ধারণা করছে, স্বাভাবিকভাবেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার পুরো নাম নাজিম উদ্দিন নাজির (৬০)। তিনি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজলার হরিনগর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।
শুধু নাজিম নয়, সিলেটে মাত্র দুদিন আগে শুক্রবার অপর একটি আবাসিক হোটেল থেকে শাহেদ মোশারফ (৩৫) নামে আরও একজন ভিক্ষুকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়াও তার দু’দিন আগে বুধবার নগরীর শাপলা আবাসিক হোটেল থেকে হোটেলের পরিচালক জহির মিয়ার সাবেক স্ত্রী নিলীমা বেগম লিলির (১৯) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
মাত্র চার দিনের ব্যবধানে সিলেট নগরী থেকে তিনটি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় নগরজুড়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আর তিনটি লাশই আবাসিক হোটেল থেকে উদ্ধার করায় এ নিয়ে আলোচনা এখন নগর পেরিয়ে পুরো জেলায়।
তবে তিনটি ঘটনার মধ্যে দুটি মৃত্যুই স্বাভাবিক বলে ধরে নিচ্ছে পুলিশ। তবে সাবেক স্বামীর হোটেল থেকে নিলীমা বেগম লিলির লাশ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য রয়েই গেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। আইনের আওতায় আনতে পুলিশ তার সাবেক স্বামীকে খুঁজছে।
জানা যায়, বুধবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে দক্ষিণ সুরমার বাইপাস রোডের মোমিনখলা এলাকায় শাপলা আবাসিক হোটেল থেকে তার লাশটি উদ্ধার করা হয়। হোটেল কর্মচারীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হোটেলের দ্বিতীয় তলার ১০৫নং কক্ষের দরজা ভেঙে লিলি নামে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত লিলি সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার দুলিয়ারবন্দ গ্রামের নুরুল হকের মেয়ে এবং ওই আবাসিক হোটেলের পরিচালক জহির মিয়ার সাবেক স্ত্রী। আবাসিক হোটেলের পরিচালক জহির মিয়ার সঙ্গে লিলির অনেকদিন আগে ছাড়াছাড়ি হলেও জহিরের সঙ্গে যোগাযোগ বা মেলামেশা ছিল। লাশ উদ্ধারের সময় তার শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন পায়নি পুলিশ।
এ বিষয়ে দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান তালুকদার বলেন, ‘এ ঘটনার পর থেকে হোটেল পরিচালক জহির পলাতক রয়েছেন। তিনি সিলেটের বাইরে অবস্থান করছেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে তৎপর রয়েছে।’ এদিকে এ ঘটনায় লিলির বাবা বাদী হয়ে দক্ষিণ সুরমা থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান তিনি।
অপরদিকে শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে বন্দরবাজারের লালবাজারে অবস্থিত লাভলী হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট থেকে অপর ভিক্ষুক শাহেদ মোশারফের (৩৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। মোশারফ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও মিয়াপাড়া এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে। তিনি লালবাজারে অবস্থিত লাভলী হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছিলেন। শুক্রবার সকাল থেকে তিনি শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করেন। রুমেই বিশ্রামে ছিলেন, কিন্তু ওইদিন দুপুরের দিকে খবর পেয়ে পুলিশ হোটেলের ২৫ নম্বর কক্ষ থেকে লাশ উদ্ধার করে। লাশ উদ্ধারের সময় তার কাছ থেকে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসার বিভিন্ন কাগজ পাওয়া যায়। পুলিশ ধারণা করছে, তিনি যক্ষ্মা রোগী ছিলেন ও শারীরিক অসুস্থতার কারণেই মারা গেছেন।
বাংলা ট্রিবিউন