বড়দিনসহ টানা ছুটিতে মৌলভীবাজারে পর্যটকের প্রচুর ভীড়, হোটেল রিসোর্টে খালি নেই সিট
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ৯:১৮ অপরাহ্ণ
বড়দিনের ছুটিসহ টানা তিনদিনের ছুটিতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ,বড়লেখা, কুলাউড়াসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক স্পটে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। সবচেয়ে সুন্দর পর্যটন এলাকা জেলার শ্রীমঙ্গলে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত পর্যটক আসায় তিল ধারণের ঠাঁয় নেই জেলার হোটেল-রির্সোটেগুলোতে।
শনিবার সরেজমিনে জেলার বেশ কিছু পর্যটন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দল বেঁধে পর্যটকরা প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য ঘুরে দেখছেন আর প্রিয়জনদের নিয়ে ছবি ওঠছেন। এসময় দেশিবিদেশি পর্যটকদেরও দেখা যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
জানা যায়, প্রতি বছর শীতের শুরু থেকেই এখানে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আসেন। একদিকে পর্যটন মৌসুম আর অন্যদিকে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিনকে কেন্দ্র করে বাড়তি একদিন ছুটি যুক্ত হওয়ায় সারাদেশের পর্যটন এলাকাতে ছুঠছেন ভ্রমন পিপাসুরা। ব্যতিক্রম ঘটেনি মৌলভীবাজারের পর্যটন এলাকাগুলোতে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট অঞ্চলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের প্রথম পছন্দই হচ্ছে শ্রীমঙ্গল। ৯০ শতাংশ পর্যটক’ই শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে রাত্রী যাপন করে থাকেন। বাকি ১০ শতাংশ পর্যটক জেলা সদরসহ অন্যান্য উপজেলায় অবস্থান করে থাকেন। তারা এখানে অবস্থান করে পূরো জেলার দর্শণীয় স্থান দর্শনের পাশাপাশি সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন আকর্ষনীয় স্থান ঘুরে বেড়ান এবং জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন।
শ্রীমঙ্গলের আবাসন সংস্থা জানায়, বড়দিন উপলক্ষে পাওয়া ছুটিতে ইতিমধ্যে শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে ৯০-৯৫ শতাংশ কক্ষ রিজার্ভ হয়ে গেছে। গত (২২ ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার থেকেই হোটেল রিসোর্টগুলোতে পর্যটকরা অবস্থান করছেন। যে কোন ছুটিতে’ই পর্যটকদের ভিড় থাকে চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে। সবুজ গালিচা চা বাগান আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান শ্রীমঙ্গল।
এখানে যেসব এলাকা পর্যটকরা ঘুরে দেখেন তা হলো, শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের বাইক্কা বিল, উঁচু-নিচু পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সবুজের গালিচায় মোড়ানো চা-বাগান, খাসিয়া পুঞ্জি, মণিপুরি ও ত্রিপুরাদের গ্রাম, বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, বধ্যভূমি ৭১, শংকর টিলা লেক, ভাউাউড়া লেক, জাগছড়া লেক, ফুলছড়া গারো লাইনের লেক, নির্মাই শিববাড়ী, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান।
কমলগঞ্জের মাধবপুর লেক, ধলই চা বাগানে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, খাসিয়া পল্লী, হাম হাম জলপ্রপাত, কলাবন, বড়লেখার মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, হাকালুকি হাওর। রাজনগরের কমলা রাণীর দীঘি, কাউয়াদীঘি হাওর, জলের গ্রাম অন্তেহরি।
এছাড়া মৌলভীবাজার সদরে ৫০০ বছরের প্রাচীন স্থাপত্যের খোজার মসজিদ, বর্ষিজোড়া ইকো পার্ক। জুড়ীর সারি সারি কমলা ও আগরের বাগানসহ লাঠিটিলা সংরক্ষিত বন। কুলাউড়া উপজেলার গগনটিলা, কালাপাহাড়, মূরইছড়া ছড়া ইকো পার্ক ইত্যাদি।
জানা যায়, মৌলভীবাজার দুসাই রিসোর্ট এন্ড স্পা, রাঙ্গাউটি রিসোর্ট, বর্ষিজোড়া বাগান বিলাস রিসোর্ট, শ্রীমঙ্গল রাধানগর গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ, চা বোর্ডের টি রিসোর্ট এন্ড মিউজিয়াম, টি হ্যাভেন, লেমন গার্ডেন, বালিশিরা রিসোর্ট, নবেম রিসোর্ট, গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্ট, হীড বাংলাদেশসহ এখানে প্রায় শতাধিক হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিকেট কাউন্টার ম্যানেজার শাহিন মাহমুদ জানান, শুক্রবার সকাল নয়টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বার শতাধিক পর্যটক টিকিট কেটে লাউয়াছড়া বনে ভেতরে প্রবেশ করেছেন। দেশিয় পর্যটকের পাশাপাশি কয়েকজন বিদেশি পর্যটকও রয়েছেন।
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান থাকায় যেকোনো ছুটি কিংবা উৎসবে প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে এখানে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পর্যটন-সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ২০০৮ সাল পর্যটন জেলা মৌলভীবাজার হিসেবে ঘোষণা হওয়ার পর থেকে চাহিদা অনুযায়ী আবাসন গড়ে উঠেনি। রাস্তাঘাটের তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। এ পর্যন্ত যে অবকাঠামো গড়ে উঠেছে, তার বেশির ভাগই করেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ’র নির্বাহী অফিসার দিশারী বলেন, বড়দিনের ছুটিতে ইতিমধ্যে আমাদের রিসোর্ট হাউসফুল বুকিং হয়ে গেছে।
শ্রীমঙ্গল জোনের ট্যুরিষ্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, পর্যকদের নিরাপত্তা দিতে প্রত্যেকটা স্পটেই আমাদের লোক নিয়োজিত আছে। এছাড়া মোবাইল টিমসহ বিভিন্ন স্পটে স্পটে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে আমি নিজেও মাঠে কাজ করছি।
মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, পর্যটকদের হয়রানি কমাতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলার প্রতিটি পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি আমরা সাদা পোশাকে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছি।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, ট্যুরিজম বোর্ড এবং পর্যটন মন্ত্রনালয়ের সাথে আমরা যোগাযোগ করে একটা সমন্বিত জায়গা তৈরী হয়েছে ট্যুরিষ্টদের জন্য যাতে পর্যটন স্পটে আমরা সব সুযোগ উপহার দিতে পারি।