সিলেটের কয়েক হাজার নেতাকর্মী এখন ঢাকায়
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:০৬:০৯,অপরাহ্ন ০৯ ডিসেম্বর ২০২২
রাজধানী ঢাকার নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের খবর ছড়িয়ে পড়া মাত্র সিলেটে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। রাতেই সিলেটে বিএনপি’র পক্ষ থেকে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। এরপর রাতের মধ্যে দলে দলে সিলেট ছেড়েছেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গতকাল বিকাল পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢাকা যাত্রা অব্যাহত ছিল। সিলেটে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনে নেতাদের একাংশ সিলেটে অবস্থান করছেন। ইতিমধ্যে ঢাকায় অবস্থান করা সিলেটের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে; ১০ই ডিসেম্বরের সমাবেশ সফল করতেই তারা ঢাকায় গেছেন। সমাবেশ হবে, এ কারণে তারা গ্রেপ্তার এড়িয়ে নিরাপদে অবস্থান করছেন। তবে- সিলেট মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, সিলেটে অবস্থান করা নেতাকর্মীদের মধ্যে দু’জন ইতিমধ্যে আটক হয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপি কার্যালয়ের ভেতর থেকে আটক হন সিলেট মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক জাহিদুল তালুকদার। গতকাল সকালে নয়াপল্টন থেকে আটক হয়েছিলেন ছাত্রদল নেতা খান রাসেল।
তবে বিকালে নয়াপল্টন থানা পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে। নয়াপল্টনের আশপাশের এলাকায় সিলেট বিএনপি’র নেতাকর্মীরা অবস্থানে রয়েছেন বলে জানান তিনি।
বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, বেগম তাহসিনা রুশদীর লুনা, ড. ইনামুল হক, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জিকে গৌছ, মৌলভীবাজার সভাপতি নাসের রহমান সহ সিলেট বিভাগের বিএনপি নেতারা এরই মধ্যে ঢাকায় পৌঁছে গেছেন। সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরীর বাসা ঢাকায়। এ কারণে তিনি দু’দিন আগেই সিলেট থেকে ঢাকায় চলে গেছেন। এখন তিনি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। গতকাল বিকালে তিনি জানিয়েছেন, আমরা ঢাকায় আছি। ইতিমধ্যে কয়েক হাজার নেতাকর্মী সিলেট থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। নেতাকর্মীরা হোটেলে না থেকে নিরাপদ স্থানে রয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ১০ই ডিসেম্বরের সমাবেশ সফল করা। এবং শান্তিপূর্ণভাবে এ সমাবেশে উপস্থিত থাকা। সুতরাং কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মতো সিলেটের নেতারা ঢাকায় এসে অবস্থান করছেন।
এদিকে সিলেট থেকেই অনেকেই দলবেঁধে যাচ্ছেন ঢাকায়। বুধবার রাতের ট্রেনে সিলেট থেকে কয়েকশ’ নেতাকর্মী ঢাকায় গিয়েছিলেন। সিলেট জেলা যুবদলের সিনিয়র নেতা লিটন আহমদ প্রায় ৫০ জনের বহর নিয়ে ট্রেনে ভোরে ঢাকায় গিয়ে পৌঁছেন। সিলেট থেকে শান্তিপূর্ণভাবে গেলেও তাদের অর্ধেক বিমানবন্দর স্টেশনে নেমে যান। আবার অনেকেই কমলাপুর যান। গন্তব্যে পৌঁছতে তাদের দফায় দফায় তল্লাশির মুখে পড়তে হয়েছে বলে জানান লিটন। এরপর নিজেরা নিজেদের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন। ঢাকায় অবস্থান করা সিলেট জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ জানিয়েছেন, সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের অন্তত ৩শ’ নেতাকর্মী এখন ঢাকায়। আজ রাতে ট্রেন ও গাড়িযোগে আরও ৪-৫শ’ নেতাকর্মীর ঢাকায় যাওয়ার কথা রয়েছে।
ট্রেন ও বাস সার্ভিস চালু থাকলে তারা সহজেই ঢাকায় পৌঁছতে পারবেন। এসব নেতাকর্মী হোটেলে অবস্থান না করে আত্মীয়স্বজন কিংবা পরিচিত জনের বাসায় অবস্থান করবেন বলে জানান মকসুদ আহমদ। তিনি জানান, সিলেট থেকে আগত নেতাকর্মীরা যেসব সহযোগিতা চাচ্ছে তাদের দেয়া হচ্ছে। সবাই সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তবে তিনি সহ যুবদলের নেতাকর্মীরা যে এলাকায় অবস্থান করছেন সেখানেও পুলিশ কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এদিকে- সিনিয়র বেশ কয়েকজন নেতা এখন সিলেটে রয়েছেন। তারা সিলেটে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালন করছেন। গতকাল দুপুরে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিলেট নগরীর ক্বীন ব্রিজ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে সিলেট জেলা বিএনপি। সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা নগরীতে এ কর্মসূচি পালন করেন।
সিলেটে অবস্থান করছেন মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ূম জালালী পংকি। তার নেতৃত্বে মহানগর বিএনপি’র নেতারা সিলেটেও তাদের কর্মসূচি পালন করছেন। এ দু’নেতা গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘আমরা আজকের মধ্যে ঢাকায় যাবো। সিলেটে যাতে কর্মসূচি পালন করা যায় সে কারণে সিনিয়র নেতাদের পরামর্শে বিএনপি’র একটি অংশ রয়ে গেছেন। তবে- শেষ মুহূর্তে তারাও সিলেট ত্যাগ করবেন।’ এদিকে- বিএনপি নেতাদের ঢাকায় যাওয়ার ব্যাপারে সিলেটে বাস ও ট্রেনে কড়াকড়ি রয়েছে। ইতিমধ্যে বাস কাউন্টারে বুধবার রাত থেকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ঢাকায় অবস্থান করা কয়েকজন বিএনপি নেতা জানিয়েছেন, সিলেটের বাস কাউন্টারে যারা টিকিট কিনছেন তাদের পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। ঢাকায় কেন যাচ্ছেন, কোথায় যাচ্ছেন- এমন প্রশ্নও করা হচ্ছে। এ ছাড়া, প্রাইভেট গাড়িতে পথে পথে তল্লাশি করা হচ্ছে। তবে ইতিমধ্যে নেতাকর্মীদের বড় বহরটি ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। তারা জানিয়েছেন, যারা ঢাকায় পৌঁছেছেন তারা ১০ই ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশে যোগ দেবেন। জেলা ও মহানগর নেতাদের নেতৃত্বে তারা একত্রিত হয়ে যোগ দিতে পারেন, আবার সমাবেশ সফল করতে বিচ্ছিন্নভাবেও যোগ দিতে পারেন। সবকিছু নির্ভর করছে পরিবেশ, পরিস্থিতির উপর বলে জানিয়েছেন নেতারা।
স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ: বিএনপি’র নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী পুলিশ লীগের নগ্ন হামলা, গুলি, হত্যাযজ্ঞ ও জাতীয় নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সিলেট নগরীতে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। নগরীর কোর্ট পয়েন্ট থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে জিন্দাবাজার সিটি সেন্টারের সামনে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিল ও পরবর্তী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মিফতাউল কবির মিফতার পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর জেলা স্বেচ্ছাসেবক সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহিদ সুহেল, সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মুনিম, আহসান মাহবুব, তোফায়েল চৌধুরী উজ্জল, আব্দুর রউফ, সৈয়দ সরওয়ার রেজা, এমদাদ বক্স, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রজব আহমদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক যুগ্ম আহ্বায়ক কায়ছার মাহমুদ সুমন, টিটন মল্লিক, জাহাঙ্গীর মিয়া, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সদস্য আলী আকবর খান, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আমিনুর রহমান আমিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুস সালাম আজাদ, মনিরুজ্জামান মনির, খন্দকার ফয়েজ আহমদ, রুমেল আহমদ রুশন প্রমুখ।