সিলেট বিএনপি: জেলার ৭মাস ও মহানগরের ১৩ মাসেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:২৪:৩৮,অপরাহ্ন ২৫ নভেম্বর ২০২২
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেট জেলা বিএনপি’র পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ ঝুলে আছে ৭ মাস ধরে। ১৩ মাসেও শেষ হয়নি মহানগরের ২৭ ওয়ার্ড সম্মেলন। গণসমাবেশের পর চাঙ্গা সিলেট বিএনপি। তৃণমূলের নেতারাও উজ্জীবিত। দীর্ঘ এক যুগের গ্লানি মুছে সরব নেতারা। বিশেষ করে ত্যাগী ও ঝিমিয়ে পড়া নেতারাও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এই অবস্থায় সিলেটে দল গোছানোর প্রক্রিয়াকে আরও বেগবান করতে যাচ্ছে সিলেট বিএনপি। ঝুলে থাকা কমিটিগুলো গঠনের দিকে নেতারা সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন।
একইভাবে জেলা ও মহানগর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও দুই মাসে গঠন হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকলেও জেলার ব্যানারে ১৮টি ইউনিটের নেতারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন গণসমাবেশে।
নেতারা জানিয়েছেন, মহাসমাবেশের মাধ্যমে সিলেট বিএনপি’র ঝিমিয়ে পড়া নেতারা উজ্জীবিত হয়েছেন। এতদিন পর তারাও এখন দলীয় কর্মকাণ্ডে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ফলে এখন দল গোছানোর প্রক্রিয়ায় সবার অংশগ্রহণ থাকবে। এতে করে চলমান আন্দোলনে আরও গতি পাবে।
এমনকি জেলার নেতারা চষে বেড়িয়েছেন সব ইউনিট। সমাবেশকে কেন্দ্র করে তাদের এই চষে বেড়ানোকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন নেতারা। ২০১৯ সালের শেষদিকে গঠন করা জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির ইতি ঘটে চলতি বছরের ২৯শে মার্চ। ওই দিন নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে সম্মেলন শেষে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে জেলা কমিটির ৩ সদস্য নির্বাচিত করা হয়। সভাপতি নির্বাচিত হন আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী।
এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক হন এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ। জেলার সম্মেলন হওয়ার পরপরই দু’দফা বন্যা হয়। ফলে গঠন করা যায়নি জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি। তবে-এরই মধ্যে কাজ অনেক এগিয়ে রেখেছেন জেলার নেতারা।
আগামী এক মাসের মধ্যে তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ চূড়ান্ত করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী।
তিনি বলেন- কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। সেটি আমরা অব্যাহত রেখেছি। গণসমাবেশ নিয়ে সবাই ব্যস্ত থাকার কারণে কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়েছিলো। এখন নতুন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তিনি বলেন- সমাবেশের পর কমিটি গঠনে হাত দেয়ায় কিছুটা লাভই হয়েছে। আমরা সমাবেশের আগে সিলেট জেলার অধিভুক্ত ১০২টি ইউনিয়ন পর্যন্ত গিয়েছি। অনেক ঝিমিয়ে পড়া নেতারাও দলের জন্য সক্রিয় হয়েছেন। আমরা সবাইকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করতে চাই। ফলে এই সমাবেশ কমিটি গঠনে অনেক বেশি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে জানান তিনি।
এদিকে- সিলেট মহানগর বিএনপি’র বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির বয়স হচ্ছে ১৩ মাস। এই সময়ের মধ্যে মহানগর বিএনপি’র ২৭টি ওয়ার্ডের সম্মেলন ও কাউন্সিল শেষ করা সম্ভব হয়নি। নানা জটিলতায় ওয়ার্ড গঠন করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া সর্বশেষ মহাসমাবেশের কারণে এই প্রক্রিয়া পিছিয়ে পড়ে।
তবে- ইতিমধ্যে মহানগর বিএনপি অধিভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের সম্মেলন ও কাউন্সিল শেষ করতে পেরেছে। সিলেট মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, আমরা ডিসেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে বাকি ওয়ার্ডগুলোর সম্মেলন শেষ করবো। এরপর মহানগর বিএনপি’র সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।
তিনি জানান, সমাবেশ সহ নানা কারণে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া পিছিয়েছে। তবে- একটু সময় বেশি গেলেও সিলেট নগরের তৃণমূলে দল শক্তিশালী হচ্ছে। যার প্রমাণ মিলেছে সমাবেশে। এই সমাবেশে সিলেট বিএনপি’র সব ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে এসে যোগ দিয়েছেন। এবং প্রতিটি মিছিলে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এটি বিএনপি’র জন্য হচ্ছে খুশির খবর। এ ছাড়া সমাবেশকে কেন্দ্র করে মহানগর নেতারা ফের আরেক দফা গোটা নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে চষে বেড়ানোর সুযোগ পান।
দলের নেতারা জানিয়েছেন, মহানগর কমিটির ওয়ার্ড সম্মেলন শেষ করার সর্বশেষ টাইমফ্রেম শেষ হয়েছে দুই মাস আগেই। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে ওয়ার্ড সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। ওয়ার্ড সম্মেলন শেষ না হওয়ার কারণে মহানগর বিএনপি’র সম্মেলন ও কাউন্সিল দ্রুতই শেষ হচ্ছে না।
ওদিকে ১০ই সেপ্টেম্বর সিলেট জেলা যুবদল ও ১১ই সেপ্টেম্বর সিলেট মহানগর যুবদলের সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের পরপরই গ্রেপ্তার হন জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ। তিনি দেড় মাস কারান্তরীণ ছিলেন। সমাবেশের আগে মুক্তি পান। এবারের সমাবেশে সিলেট জেলা যুবদল সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। তিন দিন আগে থেকেই নেতারা মাঠে অবস্থান নেন।
জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ জানিয়েছেন, কারান্তরীণ হওয়ার কারণে দল গোছানোর প্রক্রিয়াটি পিছিয়ে যায়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জেলা যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।
জেলার সভাপতি এডভোকেট মুমিনুল ইসলাম মুমিন জানিয়েছেন, আমরা আগে অধিভুক্ত সংগঠনে কমিটি গঠনের চিন্তা-ভাবনা করছি। এরপর সব গুছিয়ে জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কাজে মনোযোগ দিতে যাই। এর জন্য একটি সময় নিয়ে হলেও আমরা যুবদলকে তৃণমূল পর্যন্ত সাজাতে চাই। সিলেট মহানগর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে এখনো হাত দেয়া হয়নি।
১১ই সেপ্টেম্বর যুবদলের মহানগর কমিটির সভাপতি হয়েছেন শাহ নেওয়াজ বক্ত তারেক ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মীর্জা সম্রাট।
তারা জানিয়েছেন, ২৭ নং ওয়ার্ডে যুবদলকে উজ্জীবিত করা এখন তাদের প্রধান কাজ। এ কারণে মহানগরের পাশাপাশি তারা ওয়ার্ড কমিটি গঠনের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।