গ্রেপ্তার ১৭ নেতাকর্মী: সিলেটে গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ৯ মামলা
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:১৭:২৯,অপরাহ্ন ২১ নভেম্বর ২০২২
বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে নানা ঘটনা ঘটেছে সিলেটে। এ সময় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৭ নেতাকর্মী। মামলা করা হয়েছে ৯টি। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে সিলেট জেলায় এবং গ্রেপ্তার সংখ্যাও বেশি। গতকাল সিলেটে সমাবেশ পরবর্তী প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপি’র তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে সিলেট বিভাগে দায়ের করা এসব মামলায় আসামির সংখ্যা প্রায় ১৪শ’। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এসব মামলা করেছেন। হবিগঞ্জে মামলায় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সমবায় সম্পাদক জিকে গউছকে আসামি করেছে। এ ছাড়া নবীগঞ্জে গ্রেপ্তার হয়েছেন হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব আহমদ চৌধুরী। তবে- গতকাল বিকালে সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী জানিয়েছেন- গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সিলেট বিভাগে তাদের ১৯ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এখন তারা কারাগারে রয়েছেন।
সমাবেশ বানচাল করতে পুলিশের পক্ষ থেকে এসব মামলা করা হয় বলে অভিযোগ তার। এ ছাড়া সমাবেশের আগের রাতে সিলেট জেলার বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে সিলেটমুখী নেতাকর্মীদের ফিরিয়ে দিয়েছে। পুলিশের এই কর্মকাণ্ড সিলেটবাসীকে ক্ষুব্ধ করেছে।
এ কারণে গত শনিবার সিলেটের গণসমাবেশে সবচেয়ে বেশি মানুষের উপস্থিতি ছিল বলে দাবি করেন তিনি। গত বুধবার রাতে হবিগঞ্জের লাখাইয়ে জিকে গউছের উপস্থিতিতে গণসমাবেশের প্রচারণা চালাচ্ছিলেন নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার লাখাই থানায় পুলিশ বাদী হয়ে ২০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে। তবে- লাখাইয়ের ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাতে নবীগঞ্জে প্রচারণাকালে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ জেলা বিএনপি নেতা শিহাবসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। একই রাতে বানিয়াচংয়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীর সংঘর্ষ হয়। ওই সময় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বুধবার সিলেটের ওসমানীনগর ও গোয়ালাবাজারে বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও গুম হওয়া নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনার গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে উপজেলার দয়ামীরে একই ঘটনা ঘটে। তবে- দয়ামীরে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছিল।
এ সময় পুলিশ ওই এলাকা থেকে যুবদল ও ছাত্রদলের দুই কর্মীকে আটক করে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে ওসমানীনগর থানায় ২০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। আর ওই মামলায় আটক হওয়া দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। ওসমানীনগরে হামলার এবং পরবর্তীতে গ্রেপ্তারের বিষয়টি গত শনিবার গণসমাবেশে বক্তৃতাকালে উপস্থাপন করেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা। তিনি অভিযোগ করেন- সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ অনেককেই গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। অন্যায়ভাবে তাদের গ্রেপ্তার এবং মামলা দায়ের করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। গত বুধবার কানাইঘাটে প্রচারণাকালে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পুলিশ বিএনপি’র ৬ নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে গিয়েছিল। এরমধ্যে উপজেলা পর্যায়ের কয়েকজন সিনিয়র নেতাও ছিলেন। পরে একজনকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় অন্তত দেড়শ’ নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।
সমাবেশের আগে ৬ই নভেম্বর সিলেটের বিএনপি নেতা আফম কামাল হত্যার পরবর্তী সময়ের চৌহাট্টার ঘটনায় ২০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। এ ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া গত বুধবার বিকালে বিয়ানীবাজারে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল সংঘর্ষের ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়। সেখানেও মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া গোলাপগঞ্জেও মামলা ও একজনকে আসামি করা হয়। এদিকে- মৌলভীবাজারে প্রচারণাকালে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় পুলিশ ছাত্রদল সভাপতি রুবেলকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় দেড়শ’জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতা। সিলেট জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, সমাবেশ বানচাল করতে সবই করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করে ভীতির সঞ্চার করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু মানুষ কোনো বাধাই মানেনি। সব বাধা উপেক্ষা করে মানুষ আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানে এসে উপস্থিত হয়েছিল। তিনি জানান- শুধু মামলা গ্রেপ্তার নয়, সিলেটেও বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি ও ভয়ভীতি দেখিয়েছে। মহানগর নেতা মিফতাহ সিদ্দিকী, ফরহাদ চৌধুরী শামীমসহ কয়েকজনের বাসায় পুলিশ একাধিকবার গেছে বলে দাবি করেন তিনি।
বিএনপি’র সংবাদ সম্মেলন: গণসমাবেশ শান্তিপূর্ণ হওয়ার কারণে সিলেটে বিএনপি’র নেতারা গতকাল দুপুরে একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এ সময় সমাবেশে সার্বিক সহযোগিতা করায় সিলেটবাসীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি জানিয়েছেন- সমাবেশে লোকসমাগম ঘটেছি কিনা- সেটি তো দেশবাসী দেখেছে। আমি সমাবেশের দিন ছাড়াও প্রস্তুতি দেখতে আগের দু’দিন গিয়েছিলাম। কিন্তু মানুষ বেশি থাকায় একা হাঁটতে গিয়েও চাপাচাপি হয়েছে। তবে- গণতান্ত্রিক সমাবেশে বাধা প্রদান করে সরকার অনুচিত কাজ করছে বলে দাবি করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সিলেটের মেয়র ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ইনামুল হক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, জেলার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগরের সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।