সিলেটে বিএনপি’র সমাবেশের দিন ধর্মঘট: মাঠে বানানো হচ্ছে‘ক্যাম্প’, আসছেন নেতাকর্মীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৩৬:২১,অপরাহ্ন ১৭ নভেম্বর ২০২২
নগরভবনের কাজে এক সপ্তাহের সফরে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। রোববার দেশে ফিরেই এয়ারপোর্ট থেকে সোজা চলে যান সমাবেশস্থল আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানে। এরপর থেকে দিন-রাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সিলেট বিএনপি’র এই শীর্ষ নেতা। আরেক নেতা দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির এক মাস ধরে সিলেটে অবস্থান করছেন। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তিনি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। শুধু সিলেট নগর নয়, জেলার কয়েকটি উপজেলায় গিয়েও তিনি গণসমাবেশের প্রচারণা চালিয়েছেন।
নেতাকর্মীদের নিয়ে সিলেটের এই দু’নেতা এখন ব্যস্ত চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে। গণসমাবেশকে সফল করতে সিলেটে এসে প্রচার- প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও। ঘাম ঝরানো প্রস্তুতি শেষ করতে যাচ্ছেন জেলার সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী। মহানগর আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ূম জালালী পংকি ও সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী চষে বেড়িয়েছেন গোটা নগর। অঙ্গ-সংগঠনের কোনো নেতাই ঘরে নেই।
যে যেভাবে পারছেন গণসমাবেশের প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। কিন্তু বিএনপির সমাবেশের দিন শনিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পরিবহন সংগঠনগুলো। গতকাল এ ঘোষণা দেয় তারা।
ওদিকে কোনো রাজনৈতিক দলের এমন প্রচারণা কেবল নির্বাচনের মাঠেই দেখা যায়। কিন্তু এবার সিলেট বিএনপি’র বিভাগীয় গণসমাবেশের প্রচারণা ছিল ভোটের মাঠ থেকেও বেশি। ১৯শে নভেম্বর গণসমাবেশের আগেই চাঙ্গা শীর্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ের নেতারা। সমাবেশস্থলে প্রতিদিন ঢুঁ-মারা, আয়োজনে শরিক হওয়া, রাতে মাঠে অবস্থান করা নিত্যদিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে। শনিবার সমাবেশের দিন পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন নেতারা। দীর্ঘ এক যুগ পর সিলেটের বড় সমাবেশের আয়োজন করতে যাচ্ছে দলটি।
এতে করে গণসমাবেশকে ঘিরে চাঙ্গা নেতাকর্মীরা। প্রচার প্রচারণায় রীতিমতো চলছে প্রতিযোগিতা। যারা নিশ্চুপ ছিলেন তারাও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। আর সমাবেশকে সফল করতে সবাই ঐক্যবদ্ধ। দ্বন্দ্ব নয়, কাজ নিয়ে ব্যস্ত সবাই। এই অবস্থায় চোখ রাঙ্গানি ও বাধাকে বাধা হিসেবে দেখছেন না নেতারা। সিলেট বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন- সর্বশেষ ২০১৩ সালে সিলেট বিএনপি’র তরফ থেকে নগরীর আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশ করা হয়েছিল। এরপর থেকে এভাবে বড় কোনো আয়োজন হয়নি।
অন্তত প্রতি ৫ বছর পর পর একবার হলেও বিএনপি সিলেটে এভাবে বড় গণসমাবেশের আয়োজন করতো। অথবা নির্বাচনের আগে সমাবেশের আয়োজন করা হতো। কিন্তু বিগত দুই টার্ম নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি’র তরফ থেকে তেমন বড় কোনো সমাবেশের আয়োজন করা হয়নি। ফলে নেতারা একত্রিত হওয়ার সুযোগ পাননি। ২০১৩ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সিলেটে বিএনপি’র পক্ষ থেকে যেসব সমাবেশ হয়েছে সেগুলো আলীয়া মাদ্রাসা মাঠেও হয়নি। নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে এসব সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
এ কারণে এবারের আলীয়া মাদ্রাসা মাঠের গণসমাবেশকে ঘিরে চাঙ্গা নেতারা। ইতিমধ্যে সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বসবাসকারী বিএনপি নেতারা সিলেট নগরে এসে অবস্থান নিয়েছেন। তারা আয়োজনের নানা কাজে শরিক হচ্ছেন। আজ থেকে সিলেটে আসা শুরু করবেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। সিলেটের গণসমাবেশের এবারের আয়োজনের প্রধান বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি এরই মধ্যে কয়েক দফা সিলেট সফর করে গেছেন। তবে- ঢাকায় বসে সমাবেশের সার্বিক দিক মনিটরিং করছেন।
সিলেটের মেয়র ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন- ‘সিলেট বিএনপি’র শক্তিশালী ঘাঁটি। নেতাকর্মীরা মামলায় আক্রান্ত হয়েছেন। কারাগারে গেছেন। পারিবারিকভাবে অনেকেই বিপর্যস্ত। এরপর দলের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করে নেতাকর্মীরা মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এটা আমাদের জন্য আশার খবর।’ তিনি বলেন- ‘আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপি এই সমাবেশের মাধ্যমে আবারো প্রমাণ করবে সিলেট হচ্ছে বিএনপি’র শক্তিশালী ঘাঁটি।
এই সমাবেশ থেকে সিলেটের নেতারা নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করছে বলে জানান তিনি।’ সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘গণসমাবেশের আয়োজনের আগে দলের হাইকমান্ড আমাদের নিয়ে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে আমাদের পক্ষ থেকে মতামত দেয়া হয়। পরবর্তীতে দেশব্যাপী গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সিলেটের এই গণসমাবেশের পর বিএনপি আর পেছনে ফিরে তাকাবে না। আমরা সামনে এগিয়ে যাবো।’ তিনি বলেন- ‘গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে আমরা গোটা জেলায় চষে বেড়িয়েছি। এতে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। বিশেষ করে নিষ্ক্রিয় থাকা নেতারা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।’
মাঠে যুব ক্যাম্প: যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান বলেছেন, আওয়ামী সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যুবদলকে রাজপথেই অবস্থান করতে হবে। আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের যুব-ক্যাম্পে ১৯শে নভেম্বর সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে সিলেট বিভাগীয় যুবদলের উদ্যোগে প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সিলেট মহানগর যুবদলের সভাপতি শাহ নেওয়াজ বখত চৌধুরী তারেকের সভাপতিত্বে ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ এবং মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মির্জা মো. সম্রাট হোসেনের যৌথ উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, সিলেট জেলা যুবদলের সভাপতি এডভোকেট মোমিনুল ইসলাম মোমিন, সুনামগঞ্জ জেলা যুবদলের সভাপতি আবুল মনসুর মো. শওকত, মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জ্বল, হবিগঞ্জ জেলা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জহিরুল ইসলাম সেলিম, মৌলভীবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক এমএ মুহিত, হবিগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক জালাল আহমেদ, সুনামগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মামুনুর রশীদ কয়েছ, হবিগঞ্জ জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বাবুল, মৌলভীবাজার সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ আহমদ মাহমুদ।
লুনার গাড়িতে হামলার নিন্দা: ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজারে পুলিশের উপস্থিতিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনার গাড়িতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালি পংকী, সিলেট জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ও সিলেট মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব মিফতাহ্ সিদ্দিকী।
মঙ্গলবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, পুরো সিলেটজুড়ে যখন আগামী ১৯শে নভেম্বরের গণসমাবেশ নিয়ে প্রচার প্রচারণা চলছে, সিলেটবাসী যখন বিএনপি’র সমাবেশে একাত্মতা পোষণ করেছে এমন সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনার গাড়িতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলার ঘটনা তাদের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। অপর এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বিয়ানীবাজার উপজেলায় বিএনপি’র কর্মসূচিতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এসব হামলার পাশাপাশি বিএনপি’র কর্মসূচি থেকে বিয়ানীবাজার উপজেলায় একজন, কানাইঘাট উপজেলায় একজন এবং ওসমানীনগর উপজেলায় দুই জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানান।