গণসমাবেশে বাধা নিয়ে বিচলিত নয় সিলেটের নেতারা
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:০৮:৪৪,অপরাহ্ন ১৬ নভেম্বর ২০২২
বিএনপি’র সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশের বাকি আর দু’দিন। শনিবার হবে এ গণসমাবেশ। ইতিমধ্যে প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে। ঐতিহাসিক আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানে অন্তত ৫ লাখ মানুষের সমাগম ঘটাতে চায় বিএনপি। এ কারণে বাধা নিয়ে বিচলিত নয় সিলেট বিএনপি’র নেতারা। এই বাধাকে তারা বাধা হিসেবেও দেখছেন না। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, সরকার তো গণসমাবেশকে ব্যর্থ করতে সব প্রচেষ্টাই চালাবে। আর বাধা ডিঙিয়ে সমাবেশ সফল করাই হচ্ছে বিএনপি’র কাজ। গত ১৪ বছর ধরে একটানা বিএনপি’র কর্মীরা বাধা পেয়েই আসছেন। সুতরাং কোনো বাধাই আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানের জনস্রোতকে দমাতে পারবে না বলে জানান তারা।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে এখন গোটা সিলেট বিভাগজুড়েই চলছে চূড়ান্ত প্রচারণা। মফস্বলে গ্রামে গ্রামে, শহরে পাড়ায় পাড়ায় চলছে প্রচারণা। এর বাইরেও চলছে মাইকিং। সিলেট নগর ছেয়ে গেছে বিলবোর্ড, ব্যানারে। নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এসব সাটানো হয়েছে। আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানে চলছে মঞ্চ তৈরির কাজ।
একইসঙ্গে সমাবেশে আগে চলে আসা নেতাকর্মীদের বসার ব্যবস্থা আগেভাগেই করা হচ্ছে। সিলেট বিএনপি গঠিত ৬টি উপ-কমিটির নেতারা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এদিকে, গতকাল বিকালে দুটি ঘটনা আলোচিত হয় সিলেটে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ওসমানীনগরে। সেখানে বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনার গাড়িতে ছাত্রলীগ হামলা করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ সময় পুলিশের হাতে ৩ ছাত্রদল নেতা আটক হন। হামলার সময় ওসমানীনগর থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ মিসবাহ আহত হয়েছেন। বিয়ানীবাজারে গতকাল দিনভর প্রচারণায় ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপি নেতারা। প্রচারণা শেষে ফিরে আসার পর পৌর শহরে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। দুটি ঘটনার জন্য ছাত্রলীগ ও পুলিশকে দায়ী করেছেন স্থানীয় নেতারা। তবে, এসব ঘটনাকে কমই গুরুত্ব দিচ্ছেন গণসমাবেশের আয়োজকরা। তাদের মতে- এসব তো হবেই। তারা বাধা দিয়ে সমাবেশকে বিতর্কিত করতে চাইবে। সেখানে দমে থাকলে হবে না। বাধা উপেক্ষা করেই নেতাকর্মীরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, আমরা তো জানি সরকারের পক্ষ থেকে কী ধরনের বাধা দেয়া হয়। এসব বাধা উপেক্ষা করেই সিলেট বিএনপি’র গণসমাবেশে জনতার ঢল নামবে।
সিলেটের মাদ্রাসা মাঠমুখী জনতার ঢল কেউ দমাতে পারবে না। তিনি বলেন, আমাদের মূল শক্তি হচ্ছে দেশের মানুষ। গণসমাবেশের দাওয়াত দিতে যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই গণমানুষের স্বতস্ফূর্ত সাড়া পাচ্ছি। এটাই হচ্ছে আমাদের মূল শক্তি। সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী জানিয়েছেন, বাধাকে আমরা বাধা মনে করছি না। পুলিশ তো নানাভাবে চোখ রাঙাচ্ছে। এটা আমরা দেখছি না। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সিলেটের সমাবেশের আয়োজন করছি। এবং এবার সিলেটে সর্বকালের সেরা সমাবেশ হবে। এই সমাবেশ ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখা দখলবাজদের মসনদ কাঁপিয়ে দেবে। তিনি বলেন, আমরা সিলেট জেলা বিএনপি’র নেতারা গোটা জেলায় চষে বেড়িয়েছি। এমনকি ইউনিয়ন পর্যন্ত গণসমাবেশের দাওয়াত নিয়ে ছুটে গেছি। যেখানেই গেছি মানুষ সাড়া দিচ্ছে। এদিকে, সিলেটে বিএনপি’র এই গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে অনেক নেতাকর্মীই ঘরে নেই। কৌশল পাল্টেছে বিএনপি’র নেতারা। কয়েকজন নেতা গতকাল বিকালে জানিয়েছেন, সমাবেশের আগে গ্রেপ্তার হওয়া যাবে না। সব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া হবে। এই নির্দেশনা পালন করে নেতাকর্মীরা অনেকেই রাতে বাড়ি যাচ্ছেন না। আবার অনেকেই মাদ্রাসা মাঠে রাত কাটাচ্ছেন। ফলে সমাবেশ শান্তিপূর্ণ করতে বিএনপি’র তরফ থেকে সব করা হচ্ছে।
কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, সিলেটে পুলিশ নানাভাবে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে। হোটেলে যাতে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের না রাখা হয় সেজন্য কৌশলে হোটেল মালিকদের চোখ রাঙানি দেয়া হচ্ছে। নগরের দরগাহ গেট এলাকার হোটেলগুলোকে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এদিকে, সিলেট নগরে ১০-১২টি কমিউনিটি সেন্টার ১৯শে নভেম্বরের গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বুকিং দেয়া হয়েছে। সিলেট জেলা এবং অপর ৩ জেলার বিএনপি’র নেতাদের পক্ষ থেকে আগেই কমিউনিটি সেন্টার বুকিং দেয়া হয়। শুক্রবার সকাল থেকে ধর্মঘটের আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই সিলেটে দূরবর্তী স্থানের নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন নেতারা। এজন্য বিভিন্ন জেলা ও মহানগর ইউনিটের পক্ষ থেকে বুকিং দেয়া হয়েছে। সিলেটে অবস্থানকালীন সময়ে নিজেদের খাওয়ার ব্যবস্থাও তারা করছেন। এজন্য সেন্টারে সেন্টারে বাবুর্চি রেখে রান্না করার প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ নেতকর্মী গণসমাবেশস্থল আলীয়া মাদ্রাসা মাঠেই দু’দিন আগে থেকেই অবস্থান করবেন বলে ধারণা করছেন বিএনপি নেতারা। এজন্য এসব নেতাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করে রাখা হচ্ছে বলে জানান তারা।
সিলেট জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, সিলেটের আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানের মঞ্চ নির্মাণের কাজ প্রায় ৯০ ভাগ সমাপ্ত হয়েছে। এবার ৭০ ফুট লম্বা মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি জানান, আলীয়া মাদ্রাসা ময়দান এবং তার চারপাশে লক্ষাধিক নেতাকর্মী অবস্থান নিতে পারবেন। এর বাইরে চতুর্দিকে এক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে নেতাকর্মীদের অবস্থান থাকবে। সিলেট নগরে শনিবার শান্তিপূর্ণভাবেই গণসমাবেশ করবে বিএনপি। বিয়ানীবাজারে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া: ১৯শে নভেম্বর বিএনপি’র সিলেটের গণসমাবেশকে সামনে রেখে বিয়ানীবাজার পৌরশহরে বিএনপি ও ছাত্রদল প্রচার মিছিল বের করলে দফায় দফায় ধাওয়া করে উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল দুপুর ২টার দিকে পৌরশহরের দক্ষিণবাজাওে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পৌরশহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এ সময় নিক্ষিপ্ত ইটের আঘাতের মুসলিম মিয়া নামের এক শ্রমিক আহত হন। উপজেলা ছাত্রলীগের ধাওয়া খেয়ে শহরতলীর সুপাতলা এলাকায় অবস্থান নেন উপজেলা ও পৌর বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এদিকে- বিয়ানীবাজারের পথসভায় সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেছেন, বিনা ভোটের সরকার দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। চুরি, দুর্নীতির কারণে এসব হয়েছে। রিজার্ভ খেয়ে ফেলেছে। টাকা পাচার করেছে। সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, বিএনপি নেতা ফয়সল আহমদ চৌধুরী। সিলেট জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, সারা দেশে বিএনপির সমাবেশ সমূহে জনতার স্রোত দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়েছে। এ সময় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপি নেতা এডভোকেট হাসান আহমদ পাটোয়ারী রিপন, ইসতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি এডভোকেট আহমদ রেজা, সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার আহমদ প্রমুখ।
মহানগরের প্রচারনা: সিলেট মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব মিফতাহ্ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘সরকারের সকল অকর্মের জবাব দেয়ার জন্য সিলেটবাসী প্রস্তুত। দেশব্যাপী হত্যা, গুম, খুন, হামলা, মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। তিনি মহানগরীর ২৬নং ওয়ার্ডের কদমতলীতে গতকাল সকাল ১১টার সময় লিফলেট বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই কথাগুলো বলেন। ২৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আকতার রশীদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক এম এ মন্নান এর পরিচালনায় লিফলেট বিতরণ পরবর্তী পথসভায় উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদ হোসেন চৌধুরী, কাউন্সিলর এডভোকেট রোকসানা বেগম শাহানাজ, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মুর্শেদ মুকুল, আফজাল উদ্দিন, আব্দুস ছাত্তার মামুন, ২৭নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নাজিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম প্রমুখ। ওসমানীনগরে ইলিয়াস পত্নীর গাড়ি ভাঙচুর: ওসমানীনগর প্রতিনিধি জানান, সিলেটের ওসমানীনগরে প্রচারপত্র বিতরণকালে নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর পত্নী ও বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা’র গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। ১৯শে নভেম্বরের সিলেট বিভাগীয় সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে পূর্ব ঘোষিত প্রচারপত্র বিতরণকালে তিনি শেরপুর থেকে দয়ামীর পর্যন্ত স্থানে স্থানে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের বাধার সম্মুখীন হন। প্রচারপত্র বিতরণকালে বিএনপি’র ২ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।
সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করার জন্য গতকাল নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ওসমানীনগরে প্রচারপত্র বিতরণ করতে আসেন ইলিয়াস পত্নী লুনা। এ সময় শেরপুর থেকে দয়ামীর পর্যন্ত পুলিশ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের বাধার মুখে পড়লে কর্মসূচি প্রায় পণ্ড হয়ে যায়। গোয়ালাবাজার এলাকায় লুনার গাড়িতে হামলা করে গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ইলিয়াস পত্নী লুনা। হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ মিছবাহ ও উপজেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি আব্দুর রুপ আব্দুল আহত হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। প্রচারপত্র বিতরণকালে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ফয়সল আহমদ মিলন, উমরপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র নেতা নুরুল ইসলামকে আটক করেছে ওসমানীনগর থানা পুলিশ। এদিকে, বিএনপি নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে গোয়ালাবাজারে যুবলীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাবেদ আহমদ আম্বিয়া।
বিএনপি’র হামলায় যুবলীগের ৬ নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে জানান তিনি। ইলিয়াস পত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেন, পূর্ব নির্ধারিত প্রচারপত্র বিতরণ কর্মসূচি চলাকালে গোয়ালাবাজার এলাকায় পুলিশ এবং যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাধা দিয়ে আমার ব্যবহৃত গাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। পুলিশ এখন উল্টো বলছে আমরা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছি। ওসমানীনগর থানার ওসি এসএম মাইন উদ্দিন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২ জনকে আটক করা হয়েছে। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ওপর হামলার ঘটনায় অভিযোগ দেয়া হলে মামলা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।