সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভায় যে ক্ষোভ
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:২৩:১৭,অপরাহ্ন ২৭ অক্টোবর ২০২২
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য নেতাদের ক্ষোভের মুখে পড়লেও নীরব ছিলেন সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন। সভায় প্রকাশ্যেই তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়েন অনেকেই। ওয়ার্ড কমিটি গঠন করে দলের তৃণমূলে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে দাবি করেন নেতারা। তবে নিজের বক্তৃতায় জানালেন; তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সভায় ১৮ নং ওয়ার্ডের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া স্থগিতের কথা জানিয়েছেন সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ। এই কমিটি সবশেষে নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি। নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- মহানগরের কার্য নির্বাহী কমিটির সভায় ওয়ার্ড কমিটি গঠন নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের কারণে নানা প্রশ্নের উদ্বেগ হয়। সভার শুরুতে মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে বক্তব্য রাখেন কমিটির ১৮ জন নেতৃবৃন্দ। কেউ কেউ ওয়ার্ড কমিটিতে বিতর্কিতদের স্থান দেয়ায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। এসব বিষয়ে আলোচনার পর ভবিষ্যতে ওয়ার্ড কমিটি গঠনে আরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
সেই সঙ্গে ওয়ার্ড কমিটি গঠনের সময় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদেরও মতামত গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সম্প্রতি ১৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ঘোষিত কমিটির স্থগিতাদেশ বহাল রাখা হয়। সভায় মহানগর সভাপতি বিজিত চৌধুরী, প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য, যুগ্ম সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল, আজাদুর রহমান আজাদ, নির্বাহী সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান সহ কয়েকজন নেতা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আর সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা আচ্ছাদিত স্থানে সভা আহ্বান করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন যুগ্ম সম্পাদক বিধান কুমার সাহা। এ ছাড়া আলোচনায় উঠে আসে গত ৩রা সেপ্টেম্বর নগরীর ২৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য জুমাদিন আহমদ ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের বিষয়টি।
এ সময় উপস্থিত কয়েকজন জুমাদিনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। তবে পরবর্তীতে সম্পাদক মণ্ডলীর এক সদস্যের হস্তক্ষেপে জুমাদিন আহমদ তার ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলে বিষয়টি সমাধান হয়। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সভায় সাংগঠনিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে দু’টি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬ই নভেম্বর মহানগরের বর্ধিত সভা আয়োজন ও ৩রা নভেম্বরের কর্মসূচি পালন। তিনি জানান- দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা থেকে এনে তাকে মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি নির্মূহভাবে সেই দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত সংগঠনকে শক্তিশালী করা।
সদরে আন্দোলনের হুমকি: দলীয় গঠনতন্ত্র না মেনে সিলেট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সাবেক নেতা হীরণ মিয়াকে কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাখা হয়েছে। ‘বির্তকিত ব্যক্তিকে দিয়ে রাতের আঁধারে ঘোষণা দেয়া নতুন কমিটি বাতিল করা না হলে লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দেন তৃণমূলের আওয়ামী লীগ নেতারা। সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আমির উদ্দিন। তিনি সিলেট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন- ‘সিলেট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিলো ২০০৫ সালে। ওই সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুর রহমান বাদশা সভাপতি ও নিজাম উদ্দিন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০১৯ সালের ২৪শে নভেম্বর সম্মেলন হলেও কাউন্সিল হয়নি।
সম্মেলনের একদিন পর নিজাম উদ্দিনকে সভাপতি ও হীরণ মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। তবে সে সময় হীরণ মিয়া যুক্তরাজ্যের কর্টন শহর বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন অভিযোগ উঠলে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তখন ওই কমিটি ঘোষণার দু’দিনের মাথায় বাতিল হয়। এ ছাড়াও কমিটিতে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে জামায়াত-বিএনপিঘেঁষা ব্যক্তিদের পদ-পদবি দেয়ার অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দু’দিনের মাথায় সেই কমিটি বাতিল করে মফিজুর রহমান বাদশাকে ফের সভাপতি ও নিজাম উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদকের পদ দেয়া হয়। এ অবস্থায় দুই বছর পর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের মফিজুর রহমান বাদশা মৃত্যুবরণ করলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নতুন কমিটি গঠনের প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা কিংবা সম্মেলন ছাড়াই গত ২৩শে অক্টোবর রাতে হঠাৎ করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ শাহানুর, কান্দিগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সাহাব উদ্দিন ও শাহাব উদ্দিন আহমদ প্রমুখ।
মানবজমিন