সিলেটে ‘ঝুলে’ আছে শতকোটি টাকার কাজ
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:১২:২৭,অপরাহ্ন ১৩ অক্টোবর ২০২২
মে ও জুন মাসে পরপর দু’দফা বন্যা হয় সিলেটে। দুটি বন্যাই ছিল ভয়াবহ। নগরসহ প্রতিটি উপজেলার ৯০ শতাংশ সড়ক ছিল পানির নিচে। এতে ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে যায় প্রতিটি রাস্তা। যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় সরকারের তরফ থেকে বন্যায় ভেঙে যাওয়া রাস্তা সংস্কারের জন্য দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হয়। মেরামত কাজের জন্য টাকাও ছাড় দেয়া হয়। সিলেট জেলায় এ টাকার পরিমাণ প্রায় শতকোটি টাকা। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। কবে হবে কেউ জানেন না।
এর কারণ, ঠিকাদাররা টেন্ডারে অংশ নিচ্ছেন না। ফলে ঝুলে আছে সিলেটে শতকোটি টাকার কাজ। ঠিকাদারদের দাবি- বন্যায় নির্মাণাধীন প্রকল্পে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ঠিকাদারদের। এরমধ্যে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি। দুটো মিলে তারাও বিপর্যস্ত। যে রেট সিডিউল দেয়া হয়েছে সেটি দিয়ে তারা কাজ করলে ফের ক্ষতির মুখে পড়বেন। এ কারণে তারা টেন্ডারে অংশ নিচ্ছেন না। এদিকে- গত দেড় মাস ধরে সিলেটের এলজিইডি ভবনের দেয়ালে ঝুলছে ঠিকাদারদের দাবি সম্বলিত কয়েকটি ব্যানার। একইভাবে শিক্ষা ভবনের মূল ফটকেও ঝুলে আছে ওই ব্যানার। চলতি বছরের জুন মাসে ঠিকাদারদের জন্য নির্মাণ সামগ্রীর নতুন রেট সিডিউল ঘোষণা করা হয়।
এতে দেখা গেছে, প্রতি কেজি রডে ২৩ টাকা, প্রতি ব্যাগ সিমেন্টে ১৪৫ টাকা, প্রতিটি ইটে ৪ টাকা, প্রতি লিটার বিটুমিনে ১৫ টাকা ও প্রতি লিটার ডিজেলে ২৯ টাকা ঠিকাদারদের পকেট থেকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এতে করে লভ্যাংশের টাকা থাকে না। বরং লোকসান দিয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হয়। এ কারণে গত ২৫শে আগস্ট সিলেটের এলজিইডি’র ঠিকাদাররা বৈঠক করে টেন্ডারে অংশ না নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। পরে তারা এ সংক্রান্ত একটি ব্যানারও টানিয়ে দেন এলজিইডি’র কার্যালয়ের প্রধান ফটকে। তাদের সিদ্ধান্তের পর গত ৩০শে আগস্ট এলজিইডি’র তরফ থেকে কাজের যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল সেটিতে কোনো ঠিকাদার অংশ নেননি। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে তারা কোনো কাজের টেন্ডারে অংশ নেননি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মেরামত কাজের জন্য ইতিমধ্যে ৭২ কোটি টাকার কাজের টেন্ডার করা হয়েছে। প্রথম টেন্ডারে সিলেটের কোনো ঠিকাদার অংশ নেননি। এ কারণে দ্বিতীয় দফা টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আজ হচ্ছে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করার শেষদিন। যদি এতেও ঠিকাদাররা অংশ না নেন তাহলে বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবগত করা হবে। এ ছাড়া, আইআরআইডিপি, এসডিরিপসহ আরও কয়েকটি প্রকল্পের কাজের টেন্ডার হয়েছে। এসব প্রকল্পেও টিকাদাররা অংশ নেননি। ফলে সব প্রকল্পের কাজ এখন ঝুলে আছে।
সব মিলিয়ে এলজিইডিতেই শতকোটি টাকার কাজ ঝুলে আছে। সিলেট জেলা এলজিইডি কন্ট্রাক্টর ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ জানিয়েছেন, ‘ঠিকাদাররা বৈঠক করে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেই সিদ্ধান্তে আমরা অটল আছি। এ কারণে সিলেট জেলার কোনো ঠিকাদারই টেন্ডারে অংশ নিচ্ছেন না। শতকোটি টাকার কাজের টেন্ডার হলেও আমরা অংশ নেইনি।’ তিনি বলেন, ‘টেন্ডারে অংশ নিয়ে তো লাভ নেই। বরং ক্ষতি হবে। এ কারণে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা ফের সাধারণ সভার আয়োজন করছি। সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। একইসঙ্গে সরকারের উচ্চ মহলকে আমরা বিষয়টি অবগত করছি।’ এদিকে, শিক্ষা ভবনের কাজেও ঠিকাদাররা অংশ নিচ্ছেন না। গত আগস্ট মাস থেকে সব ধরনের টেন্ডার ঠিকাদাররা বয়কট করেছেন। এ সংক্রান্ত একটি ব্যানারও ঝুলছে অফিসের প্রধান ফটকে। গত ৭ই সেপ্টেম্বর শিক্ষা ভবনে ৩৪ গ্রুপের প্রায় দুই কোটি টাকার টেন্ডারে অংশ গ্রহণের শেষদিন ছিল। কিন্তু ওই টেন্ডারে কেউ অংশ নেননি। সিলেট শিক্ষা অধিদপ্তরে কন্ট্রাক্টর এসোসিয়েশনের সভাপতি নিরেশ দাস গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে আছি।
যদি নতুন রেট সিডিউল না দেয়া হয় তাহলে কেউ টেন্ডারে অংশ নেবে না। চলতি মাসেও কয়েকটি টেন্ডার আছে সেখানেও আমরা অংশ নেবো না।’ এদিকে, এলজিইডি সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস জানিয়েছেন, নতুন রেট সিডিউলে ঠিকাদাররা কাজে অংশ না নেয়ার কারণে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ঝুলে আছে। তবে, আগের প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। এখন বাজারে নির্মাণ সামগ্রীর দাম একটু বেশি। কিন্তু আমরা তো আর রেট সিডিউল পরিবর্তন করতে পারি না। এর জন্য সরকারি প্রক্রিয়া রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় রেট সিডিউল পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ থাকতে পারে। তবে, বিষয়টি নিয়ে কন্ট্রাক্টরদের সঙ্গে আলোচনা করছি। ইতিমধ্যে হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের কিছু কিছু ঠিকাদার টেন্ডারে অংশ নিচ্ছেন। সেখানে বন্যার পর মেরামত কাজ শুরু হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সিলেটের কন্ট্রাক্টররা এখনো টেন্ডারে অংশ নেননি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। আশা করি দ্রুত আমরা সিদ্বান্তে পৌঁছতে পারবো।’