মাশরাফির অনুপ্রেরণায় ‘সিলেট স্ট্রাইকার্স’
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ অক্টোবর ২০২২, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ
১৯৯৭, আকরাম খানের হাতে ওঠা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বদলে দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের গতিপথ। রূপকথার সেই জয় এদেশের মানুষের মনে এঁকে দিয়েছিল স্বপ্ন। সেই সময় শিশু থেকে বৃদ্ধ সবারই মনের কোণে জায়গা করে নেয় ব্যাট-বলের লড়াই। তেমনই একজন সিলেটের সারোয়ার চৌধুরী। ৯/১০ বছর বয়সেই তার মনে ক্রিকেট গেঁথে যায়। তা থেকে আর বের হতে পারেননি। কিন্তু বাস্তবতা বড় কঠিন। ১৬ বছর বয়সেই পরিবারের সঙ্গে পাড়ি জামিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে গিয়ে প্রফেশনাল ক্রিকেটার হতে পারেননি। তবে হালও ছাড়েননি।
প্রবাস জীবনে কর্মব্যস্ততার মাঝেও মাঠ তাকে টেনেছে সব সময়। কিন্তু তার স্বপ্ন সীমাবদ্ধ থেকেছে লোকাল ক্রিকেটেই। তবে স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি ক্রিকেট নিয়ে বড় কিছু করার। তার সেই প্রত্যয়ের কারণে পেয়েছেন দারুণ সুযোগ। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) তার প্রতিষ্ঠান ‘ফিউচার স্পোর্টস’ বনে গেছে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক। বিপিএলের আগামী ৩ আসরে তার দল সিলেট স্ট্রাইকার্স মাঠ মাতাতে প্রস্তুত। ক্রিকেটে তার আরেক অনুপ্রেরণার নাম বাংলাদেশের সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। দৈনিক মানবজমিনকে তিনি জানিয়েছেন নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশের বিপিএলে আসার গল্প। সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: থাকেন সেই সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে, সেখান থেকে বাংলাদেশের বিপিএলে কীভাবে?
সারওয়ার: আসলে এখানে আমার বিপিএলে আসাটা হঠাৎ করে নয়। আমি প্রায় ৪ বছর ধরে চেষ্টা করছিলাম বাংলাদেশের ক্রিকেটে যুক্ত হওয়ার জন্য। আমি প্রথম বিভাগে একটি দলের সঙ্গে অবদান রাখি প্রথমে। ভাবছিলাম এমন পুটি মাছের মতোই এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু হঠা করেই পেয়ে গেলাম বোয়াল মাছ। মানে বিপিএলে দল পাবো তা ভাবিনি। এটি আমার কাছে বড় পাওয়া।
প্রশ্ন: আপনি ক্রিকেটে কীভাবে এলেন?
সারওয়ার: ১৯৯৭- এ যখন আকরাম খান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় করে নিয়ে আসেন তখন থেকে ক্রিকেট নিয়ে অন্যভাবে ভাবতে শুরু করি। আমার ভাই তখন আমাদের ক্রিকেটের সব কিছু কিনে দিয়েছিলেন। আমি আমার ছোট ভাই মাহবুবকে নিয়ে সারাদিন ক্রিকেট খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। কিন্তু প্রফেশনাল ক্রিকেটার হওয়ার সুযোগ হয়নি। কারণ, মাত্র ১৬ বছর বয়সেই আমি যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসি পরিবারের সঙ্গে। এখানে এসেও নানা ভাবে লোকাল ক্রিকেটে খেলি। আর মনে মনে চিন্তা করি যে বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে কিছু করবো। আমি আসলে ক্রিকেটের জন্য পাগল, এটি ছাড়া ভাবতেই পারি না। আমি মাশরাফি বিন মুর্তজার অনেক বড় ভক্ত। সুযোগটা আসে আসলে তার হাত ধরেই। তার নানা পরামর্শে আমি আমার নিজের দেশের ক্রিকেটের জন্য অবদান রাখার চেষ্টা করি। আর তারই ধারাবাহিকতায় বিপিএলেও দলটি পেয়ে গেলাম।
প্রশ্ন: মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে আপনার ফিউচার স্পোর্টসের সম্পর্ক কি?
সারওয়ার: মাশরাফির সঙ্গে আমার পরিচয়টা তার ছোটবেলার বন্ধু শুভ্রের মাধ্যমে। সে আমারও বন্ধু। আসলে তিনি (মাশরাফি) আমার অনুপ্রেরণা। তিনি আমার ফিউচার স্পোর্টসের কেউ নন। কিন্তু ক্রিকেট নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছেন। আমি চাইবো তিনি যেন আমার দল সিলেট স্ট্রাইকার্সে আইকন ক্রিকেটার হিসেবে খেলেন। আমি তাকে আমাদের দলে খেলার জন্য প্রস্তাব দিয়েছি তিনিও রাজি আছেন। আমি তার এত বড় ভক্ত যে আমি তাকে দলে পেতে মরিয়া।
প্রশ্ন: বিপিএলে আসার পেছনে কারণ কি ব্যবসা না ক্রিকেটে অবদান?
সারওয়ার: আমি আসলে ক্রিকেট নিয়ে কোনো দিন লাভ-ক্ষতির হিসাব করিনি। জীবনে এই ক্রিকেট ক্রিকেট করে অনেক ক্ষতিই করেছি। তাই বিপিএলটাকে আমি শুধু ব্যবসা হিসেবে ভাবতে পারবো না। আমি এটির মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেটে অবদান রাখতে চাই। যদি আমার দল থেকে খেলে তরুণ ক্রিকেটারদের একজনও দেশের জন্য জাতীয় দলের জন্য অবদান রাখতে পারে সেটি হবে আমার জন্য বড় পাওয়া। তবে এখানে অনেক টাকার বিষয়। এত ইনভেস্ট করে লাভ পাওয়া কঠিন। তবে এবার বিপিলে একটা বড় বিষয় হলো তিন বছর একজন ফ্র্যাঞ্চাইজি দল চালাতে পারবে। এই ক্ষেত্রে টিকে থাকার জন্য একটা সুযোগ হবে। প্রথম বছর লাভ না হলে পরের বছর কিংবা তার পরের বছর হবে।
প্রশ্ন: এখন পর্যন্ত সিলেট নিয়ে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির অভিজ্ঞতা সুখকর হয়নি, এমনকি সিলেটের মানুষ দলগুলোকে নিজের করে নিতে পারেনি। এটি ভাবনার কারণ হবে কি?
সারওয়ার: অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। বেশ কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি সিলেট নিয়ে খুব বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেনি। হতে পারে তাদের সুযোগট কম ছিল। তবে আমি এবার তিনটা মওসুম সময় পাচ্ছি। শুরুতে যদি কোনো ভুলও হয় সেগুলো শুধরে নেয়ার সুযোগ পাবো। দ্বিতীয় হচ্ছে আমি আমার সিলেটের ক্রিকেটারদের নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আর এমন কিছু করতে চাই যেন সিলেটের মানুষ আমার দলটাকে আপন করে নেয়, নিজেদের মনে করে। আমি একজন সিলেটি হিসেবে এখনই বলতে পারে এটি হবে সিলেটবাসীর দল।
প্রশ্ন: বার বার বলছেন দেশের ক্রিকেটে অবদান রাখতে চান সেটি কীভাবে?
সারওয়ার: আমি চাই তরুণ ক্রিকেটাদের নিয়ে এগিয়ে যেতে। তাদের জন্য যে কোনো সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। বিশেষ করে সিলেটের ক্রিকেটারদের নিয়ে। যদি আমার দল থেকে একজন ক্রিকেটারও জাতীয় দলে আসে সেটি হবে আমার প্রথম সাফল্য।
প্রশ্ন: বিপিএলে বিদেশি ক্রিকেটার পাওয়া কঠিন হচ্ছে কি?
সারওয়ার: এটি অনেক বড় চিন্তার কারণ। আমরা বিদেশি ক্রিকেটার পেতে হিমশিম খাচ্ছি। যে ভালো ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলছি সেই বলছে আরব আমিরাত বা দক্ষিণ আফ্রিকা লীগের কথা। দেখি চেষ্টা করে যাচ্ছি। আসলে বিপিএলের তারিখটা অনেক পরে ঘোষণা হয়। ভালো ক্রিকেটার আগেই লীগগুলোতে চুক্তি করে ফেলে। আমার মনে হয় এটি নিয়ে ভাবা উচিত। তবে বিদেশি কোচ পেয়েছি। তিনি ওয়াসিম জাফর।
প্রশ্ন: লক্ষ্য কি?
সারওয়ার: বাংলাদেশের ক্রিকেটে যেভাবেই হোক অবদান রাখা।