মৌলভীবাজারের দুটি বিশেষ মন্দিরসহ ১০০৬টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৩৯:৪৪,অপরাহ্ন ০২ অক্টোবর ২০২২
সনাতন তথা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মহা সপ্তমী বিশেষ পূজার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে দূর্গা পূজা শুরু হয়েছে রোববার (২ অক্টোবর)। গতকাল সন্ধ্যায় মহষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে এ দুর্গা দেবীর বোধণ ও অধিবাস শুরু হয়।
গত দু’বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবে অনেকটাই নিষ্প্রাণ ছিল হিন্দুর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আলোকসজ্জাসহ উৎসব সংশ্নিষ্ট বিষয় পরিহার করে কেবল ‘সাত্তি¡ক পূজায়’ সীমিত রাখা হয়েছিল পূজার আয়োজন। তার সাথে ছিল বাড়তি সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়। তবে এবার করোনার সংকট ও ভয় কাটিয়ে ফিরে এসেছে চিরচেনা সেই উৎসবের আমেজ।
সারাদেশের মন্ডপ-মন্দিরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দূর্গাপূজা শুরু হয়েছে। দুর্গাপূজার নির্ঘণ্ট অনুযায়ী রোববার মহা সপ্তমী দশভুজা দেবী দূর্গার মূল পূজা শুরু হয়েছে। মহা সপ্তমী পূজার প্রথম প্রহরে কুলাউড়া উপজেলা ঐতিহ্যবাহী কাদিপুর শিববাড়ি পূজা মন্দিরে দশভুজা দেবী দূর্গা ও হাজার হাতের প্রতিমা দেখতে দেশ বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত দর্শনার্থী মন্দিরে আসতে শুরু করেছেন। ফলে প্রায় দু’ কি.মি. দীর্ঘ যানজট শুরু হওয়ায় স্থানীয় পুলিশ বাহিনী যানবাহনের বিশেষ নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন। একটি নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ি রেখে পূজারীদের পায়ে হেটে মন্দিরে যেতে হচ্ছে। সিসি ক্যামেরাসহ পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন। রয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি, সন্দেহ ভাজন ব্যক্তিদের দেহ তল্লাশীর ব্যবস্থা।
শিববাড়ি মন্দিরের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান আগামী দুদিন মহা অষ্টমী ও মহা নবমীতে লক্ষাধিক দর্শনার্থী এ মন্দিরে পূজা দিতে আসবেন। প্রধান পুরোহিত কাজল ভট্টাচার্য জানান, এখানে র্নিঘন্ট মেনে বিশেষ সাত্তি¡ক পূজা হয়। বলি হয় শ’শ’ পশু। এখানে দেবী দূর্গার সাথে অন্যান্য শক্তি দেবদেবীর বিশেষ পূজা হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, রাজনগর উপজেলার পাঁচগাও এ উপমহাদেশে প্রথম রক্তবর্ণা দেবীর পূজা চলে আসছে শতাধিক বছর আগ থেকে। দেবী দূর্গাকে এখানে আদি কাঠামোতে ষোড়শ উপাচারে পূজা করা হয়। এই ঐতিহাসিক পূজার গুরুত্ব রয়েছে দেশ বিদেশ জুড়ে। লাখ লাখ পূজারীরা এখানে মায়ের কাছে পূজা দিয়ে নিজেদের মনোষ্কামনা পূর্ণ করেন। রাজনগর উপজেলার পাঁচগাও রাজকর্মচারী শিববাবুর পূর্ব পুরুষরা চলে গেছেন ভারতে তবে পূজার এই বিশেষক্ষণে তাদের অনেকে চলে আসেন পূর্ব পুরুষের ভিটায়, করেন কামাক্ষ্যা মায়ের নির্দেশিত মতে মাতৃ আরাধনা। যা যুগ যুগ ধরে চলমান রয়েছে। লাখ ভক্তের পদচারণায় এ যেন একটা তীর্থক্ষেত্রে রুপ নিয়েছে।
রাজনগর থানার ওসি বিনয় ভুষন রায় জানান, উপজেলার পাঁচগাও রক্তবর্ণা দেবী দূর্গার পূজা দেখতে আসা ভক্তদের নির্বিঘœ যাতায়াতে পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। নিরাপত্তার জন্য রয়েছে বাড়তি ব্যবস্থা। এছাড়া প্রতিটি মন্ডপে পুলিশ ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে, রয়েছে মোবাইল টিমও।
কুলাউড়া থানার ওসি মো. আব্দুছ ছালেক জানান, কাদিপুর শিববাড়ি পূজা মন্দিরে দুর্গাপুজাকে ঘিরে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এই মন্ডপে বিশজন পুলিশের একটি টিম সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া ওই এলাকার জন্য বিশেষ ট্রাফিক পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে যানবাহন নিয়ন্ত্রনে তারা চারদিরই দিবারাত্র কাজ করবে। তার সাথে বিশেষ মোবাইল টিম ও সাদা পোষাকে পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। সারা উপজেলার মন্ডপগুলোতে পুলিশ ও আনসার নিয়োজিত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদুর রহমান খোন্দকার জানান, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা ও কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের ২১ দফা অনুসরণ করে কুলাউড়ায় উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। নিরাপদে ও শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা পালনের জন্য পুলিশের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে।
জেলার শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, রাজনগর, মৌলভীবাজার সদর, কমলগঞ্জ, বড়লেখা ও জুড়িতে প্রতিটি মন্ডপে উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজার প্রথম দিন অতিবাহিত হয়েছে।