সিলেটে আবাসন চেয়ারম্যান শেরিন যে কারণে গ্রেপ্তার
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৫৪:৪০,অপরাহ্ন ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে সিলেটের আবাসন এসোসিয়েটের চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক শেরিনের বিরুদ্ধে। প্রায় ১৪ বছর ধরে আম্বরখানার ওই প্রকল্প নিয়ে অনেক পানি ঘোলা হয়েছে। প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা এখানে অন্তত ২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে কোনো সুরাহা পাচ্ছিলেন না। কারও কারও নাম কোম্পানির পরিচালকদের তালিকায় থাকলেও অনেকের নাম নেই। অথচ তাদেরকে পরিচালক করা হচ্ছে জানিয়ে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আর এসবই করেছেন কোম্পানির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক শেরিন। তার মূল বাড়ি জগন্নাথপুরে। তিনি জগন্নাথপুরের মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও। নগরীর আম্বরখানা পয়েন্টের পাশেই আবাসন হাউজিং। ২০০৬ সাল থেকে ব্যস্ততম আম্বরখানা পয়েন্টের পাশে এ প্রকল্পের সাইনবোর্ড রয়েছে।
সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানকে দিয়ে উদ্বোধন করে এটির যাত্রা শুরু হয়েছিলো। কোম্পানির প্রবাসী পরিচালকরা জানিয়েছেন- ইতিমধ্যে আবাসন এসোসিয়েট ও আবাসন ডেভেলপার কোম্পানির নামে মোট ৬৭ জনকে পরিচালক করা হয়েছে। এরমধ্যে আবাসন এসোসিয়েটে রয়েছেন ৩৭ জন। আর বাকিদের ডেভেলপার কোম্পানিতে পরিচালক করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় সবাই হচ্ছেন প্রবাসী বিনিয়োগকারী। আবাসনে ফ্ল্যাট কিংবা প্লটের লোভনীয় অফার দিয়ে তাদের কোম্পানির পরিচালক করা হয়।
প্রথম দিকে করা পরিচালকদের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা করে নেয়া হয়। পরবর্তীতে ২৫ লাখ টাকা এবং শেষ দিকে কারও কারও কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। বর্তমানে এ প্রকল্পের মধ্যে ৯৬ শতক ভূমি বিদ্যমান রয়েছে। এর বাইরে প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি নেই। বিভিন্ন সময় প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা এসে প্রকল্পের অগ্রগতিসহ নানা বিষয় নিয়ে চেয়ারম্যান শেরিন ও এমডি আব্দুল হামিদের কাছে জানতে চাইলে কোনো উত্তর পাননি। চলতি বছরের বিভিন্ন সময় সিলেটের এয়ারপোর্ট থানায় চারজন প্রবাসী বিনিয়োগকারী আবাসন এসোসিয়েটের চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক শেরিন, এমডি নয়াসড়কের অপরূপা টাওয়ারের বাসিন্দা আব্দুল হামিদ, পরিচালক গোলাপগঞ্জের বাসিন্দা নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও হুমকির অভিযোগে মামলা করা হয়। এসব মামলা এখনো তদন্তাধীন রয়েছেন। এয়ারপোর্ট থানার ওসি খান মোহাম্মদ মাইনুল জাকির জানিয়েছেন- অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর মামলাগুলো রেকর্ড করা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশ সক্রিয়। এরমধ্যে সিআইডি’র হাতে চেয়ারম্যান শেরিন ধরা পড়েছে। তবে- সন্ধ্যা পর্যন্ত সিআইডি শেরিনকে থানায় হস্তান্তর করেনি বলে জানান তিনি। এদিকে- গতকাল সিআইডি সিলেটের বিশেষ পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে- চেয়ারম্যান শেরিন’র বিরুদ্ধে সিলেট নগরস্থ আম্বরখানা পয়েন্ট সংলগ্ন ‘আম্বরখানা আবাসন এসোসিয়েট প্রাইভেট লি. কোম্পানি’ নামে একটি কোম্পানিতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়ে মামলার বাদীসহ বহু প্রবাসীকে কোম্পানির পরিচালক করা হবে এমন শর্তে তাদের নিকট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ মামলাসহ সিলেটের এয়ারপোর্ট থানায় আরও ৩টি প্রতারণার মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। মামলা দায়ের করার পর শেরিন বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদান করে যাচ্ছেন।
এসব অপরাধ করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে চেয়ারম্যান শেরিনকে গ্রেপ্তার করতে গতকাল দুপুর আড়াইটায় জগন্নাথপুরের মিরপুর ইউনিয়নের শ্রীরামসি গ্রামস্থ নিজ বাড়িতে অভিযান চালান অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-এর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শেখ মোহাম্মদ রুবেল ও পুলিশ পরিদর্শক শাহ মুহাম্মদ মুবাশ্বির। নিজ বাড়ি থেকে শেরিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে সিআইডিকে সহায়তা করে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ। গত ২৩শে মার্চ থানায় মামলা করেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফেঞ্চুগঞ্জের আশিঘর গ্রামের আনিসুল হক চৌধুরী। একই সময় ছাতকের ফয়সল আহমদসহ আরও তিনজন একই ভাবে টাকা আত্মসাতের মামলা করেছেন। মামলার এজাহারের ভাষ্যও প্রায় একই। তারা এজাহারে জানিয়েছেন- ২০০৬ ও ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যে গিয়ে আবাসন এসোসিয়েটের চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক শেরিন প্রলোভন দেখিয়ে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সিলেটের আম্বরখানার ওই প্রকল্পে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করেন। তার কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রবাসীরা এতে বিনিয়োগ শুরু করেন। তিনিসহ আরও কয়েকজন প্রবাসী দেশে এসে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু সর্বশেষ কোম্পানির যে রেজিস্ট্রেশন করা হয় সেখানে তাদের নাম রাখা হয়নি। এ ব্যাপারে বার বার যোগাযোগ করা হলেও কোনো সদুত্তর মেলেনি।
তিনি জানান- কোম্পানির পরিচালক হতে সর্বমোট ২৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। একই অভিযোগ করেছেন ছাতকের ফয়সল আহমদও। তারা জানিয়েছেন- বিনিয়োগের টাকা নিয়ে যখনই কথা উঠানো হয়, তখনই শেরিন ও হামিদ এবং তাদের সহযোগীরা প্রাণনাশেরও হুমকি দেয়। এ কারণে তারা থানায় নিরাপত্তা চেয়ে মামলাও করেছেন। এদিকে- আবাসন এসোসিয়েটের কয়েকজন প্রবাসী বিনিয়োগকারী গতকাল জানিয়েছেন- ১৪ বছর আগে তারা বিনিয়োগ করেছিলেন। তাদেরকে বলা হয়েছিলো স্বল্পতম সময়ের মধ্যে বিল্ডিং নির্মাণ করে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু এখনো তারা পাননি। যোগাযোগ করেও সদুত্তর পাচ্ছেন না। সবাইকে আবাসন এসোসিয়েটে পরিচালক করার কথা বলে টাকা গ্রহণ করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে অনেককে আবার আবাসন ডেভেলপার কোম্পানির পরিচালক করা হয়। যারা ডেভেলপার কোম্পানির পরিচালক হয়েছেন তারা কোনো জমির মালিকানা পাননি। ফলে গোটা প্রকল্প নিয়ে এখন অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বিনিয়োগকারী শতাধিক প্রবাসী।