সিলেটে ট্রাক মালিক সমিতিতে যে কারণে দ্বন্দ্ব
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:২৪:২৭,অপরাহ্ন ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
ওয়েছ খছরুঃ
সিলেট জেলা ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির কর্তৃত্ব নিয়ে বিরোধ চরমে। চলছে পাল্টাপাল্টি ও বহিষ্কারও। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে মালিকদের মধ্যেও। তারা জানিয়েছেন- সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপ, তহবিল আত্মসাতের কারণেই এ দ্বন্দ্ব প্রকট হয়েছে। মূলত আর্থিক সুবিধা নিয়ে বিরোধ হওয়ার কারণেই দু’পক্ষ মুখোমুখি। সিলেটে ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি বড় সংগঠন। পরিবহন সেক্টরে তাদের আধিপত্য বেশি। ফলে এই সংগঠনের কর্তৃত্ব নিয়ে লড়াই নাড়া দিয়েছে গোটা পরিবহন সেক্টরকেও। গতকাল একাংশের নেতারা নিজেদের বৈধ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আর এই সংবাদ সম্মেলনে তারা সমিতির সভাপতি গোলাম হাদী ছয়ফুলকে কমিটির ‘বহিরাগত’ নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
সমিতির সমাজকল্যাণ সম্পাদক রিমাদ আহমদ রুবেল জানিয়েছেন- সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপ, তহবিল আত্মসাৎ ও সমিতির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের কারণে গত ১৫ই অক্টোবর সভাপতির দায়িত্বে থাকা গোলাম হাদী ছয়ফুলকে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের উপস্থিতিতে বিশেষ সভায় বহিষ্কার করা হয়। আর বহিষ্কারের বিষয়টি রেজ্যুলেশন করে ১৭ই অক্টোবর তাকে জানানো হয়।
বহিষ্কারের বিষয়টি গোলাম হাদী ছয়ফুলকে জানানো হলেও পরিবহন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকায়, তার সামাজিক অবস্থানের কথা বিবেচনায় গণমাধ্যমে বিষয়টি আমরা প্রেস বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করিনি। আর এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ১৭ই অক্টোবর সমিতির ৩১ সদস্যের কার্যকরী কমিটিতে থাকা তার ১১ অনুসারী নিয়ে কথিত সভার মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক মো. ফয়জুল ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ মো. মোহিদ মিয়াকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠান। একই সঙ্গে সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. কয়ছর আলী জালালীকে সাময়িক বহিষ্কার করার কথাও উল্লেখ করা হয়। গোলাম হাদী ছয়ফুল নিজের অবৈধ কার্যকলাপ, অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামত না নিয়ে সংগঠনের গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে বহিষ্কার বিষয়ক অপপ্রচার চালিয়ে সমিতিকে বিতর্কিত করে যাচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনে মালিক সমিতির নেতারা জানিয়েছেন- দু’টি সংগঠন এক হয়ে সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সমিতি নামে যাত্রা শুরু করে। আর এর অফিস হিসেবে গোলাম হাদী ছয়ফুলের অফিসকে ব্যবহার করা হয়। আর্থিক সাশ্রয়ের জন্য ওই অফিস করা হলেও সমিতির সকল কাগজপত্র, হিসাব নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখেন সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি ১১ অনুসারী নিয়ে বহিষ্কার বিষয়ক যে অপপ্রচার চালাচ্ছেন তাতে সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ করার কথা বললেও সমিতির সকল হিসাব ছিল তার জিম্মায়।
তিনি সদস্যদের চাপে পড়ে অডিটবিহীন একটি হিসাব ব্যাংক স্টেটম্যানসহ দিলেও এতে রয়েছে বেশ ফাঁকি। যেখানে গোলাম হাদী ছয়ফুল নিজেই ছিলেন সমিতির হিসাবের নিয়ন্ত্রক, সেখানে অন্যদের বিরুদ্ধে তহবিল আত্মসাতের বিষয়টি ভিত্তিহীন। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, সমিতির সুনাম নষ্টের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গোলাম হাদী ছয়ফুল ও তার কয়েকজন সুবিধাভোগী। তারা অর্থ আত্মসাৎসহ সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপকে বৈধতা দিতে কার্যকরী কমিটির সদস্যদের নিজেদের দলে টানার অপচেষ্টা করছেন। অনেককে হুমকি, মামলা দিয়ে হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। এদিকে- ট্রাক পিকআপ ভ্যান মালিক সমিতির গোলাম হাদী ছয়ফুল অংশের নেতারা জানিয়েছেন- সাধারণ সম্পাদক মো. ফয়জুল ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ মো. মোহিদ মিয়া সংগঠনের ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাবের আত্মসাতকৃত ৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা দীর্ঘদিনেও পরিশোধ না করায় তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়। ওই সময় সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এক সপ্তাহের মধ্যে ওইটাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। কিন্তু বার বার তাগদা দেওয়া সত্ত্বেও এখনো তারা আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত দেননি। এ কারণে তাদের তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানান নেতারা।