দুই দলই মাঠ দখলে মরিয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৫২:৪০,অপরাহ্ন ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২
ঘনিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচনের সময়। বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ। রাজনীতির মাঠ দখলে মরিয়া প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। টানা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সামনে নতুন এক চ্যালেঞ্জ নির্বাচন সামনে রেখে। বিগত দুটি নির্বাচন নিয়ে ছিল নানা আলোচনা-সমালোচনা। সামনে কেমন নির্বাচন হবে এ নিয়ে চলছে আগাম বিতর্ক। তবে নির্বাচন যাই হোক তার আগেই মাঠের পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য নানামুখী কর্মসূচিও হাতে নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে সারা দেশে কাউন্সিল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সহযোগী সংগঠনগুলোর কাউন্সিল করার চিন্তা করা হচ্ছে।
লক্ষ্য হলো নির্বাচনের আগে দল ও সহযোগী সংগঠনকে সক্রিয় করে বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা। অন্যদিকে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও রাজনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়েছে। জ্বালানি তেল ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে সারা দেশে পালিত হচ্ছে বিভিন্ন কর্মসূচি। এসব কর্মসূচি ঘিরে বাড়ছে উত্তাপ।
বিভিন্ন স্থানে এসব সমাবেশে বাধা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে এ পর্যন্ত বিএনপি’র তিনজন কর্র্মীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকে। বিভিন্ন স্থানে মামলার আসামি হয়েছে হাজারো নেতাকর্মী। এমন পরিস্থিতিতেও দলটি মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। এজন্য সারা দেশে নেতাকর্মীদের বার্তা দেয়া হয়েছে। ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবার আঘাত আসলে পাল্টা প্রতিরোধ করা হবে। হামলা ও মামলা করে বিএনপি’র কর্মসূচি বানচাল করা যাবে না। রাজধানীর পল্লবীতে বিএনপি’র সমাবেশে হামলার পর গতকাল মিরপুর এলাকায় সমাবেশ করেছে দলটি। সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগমও হয়। বিকালের এই সমাবেশে দুপুর থেকেই নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আসেন। আগের দিন খিলগাঁও এলাকায়ও সমাবেশ হয়। আওয়ামী লীগের পাল্টা অবস্থান থাকলেও উত্তরায় সমাবেশ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। গতকাল পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশ ঘিরে মুন্সীগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় দলটির নেতাকর্মীদের। সংঘর্ষে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় এক সভায় নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে না জড়াতে নির্দেশনা দেন।
পরের দিন অবশ্য তিনি বলেন, মাঠ কারও কাছে ইজারা দেয়া হয়নি। আমরা মাঠ ছেড়ে যাইনি। দলীয় সূত্র বলছে, বিরোধীদের অবস্থান নজরদারিতে রাখার নির্দেশনা রয়েছে। ওবায়দুল কাদের গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি আবার সন্ত্রাস-সহিংসতা তৈরির পাঁয়তারা করছে। গতকাল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ভয় দেখাতে তাদের তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ। এটা তাদের কাজ নয়। শুধু আতঙ্কের পরিবেশ তৈরির জন্য এটা করা হচ্ছে। সহিংসতা ও সন্ত্রাস সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আন্দোলনের নামে রাজপথে আবারো সহিংসতা ও সন্ত্রাস সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বিএনপি। গতকাল সচিবালয়ে তার নিজ দপ্তরে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি নেতাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকাল বিএনপি’র নেতাকর্মীদের হাতে বাঁশের লাঠির সঙ্গে জাতীয় পতাকা দেখা যাচ্ছে, এটা কিসের আলামত? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের সক্ষমতায় বিএনপি আত্মদহনে দগ্ধ হচ্ছে- এমন দাবি করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতারা এখন মেগা হতাশায় ভুগছে।
বিএনপি নেতাদের তাদের অতীত বক্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা একসময় বলেছিলেন জোড়াতালির পদ্মা সেতু যেকোনো সময় ভেঙে পড়বে, অথচ বিএনপি নেতারা এখন ঠিকই পদ্মা সেতু পার হচ্ছেন। বিএনপি নেতাদের নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন নিয়ে কথা বলা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি জন্মলগ্ন থেকেই প্রহসনের নির্বাচন জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছিল, হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে সামরিক উর্দি পরে, আবার কখনো ভোটারবিহীন নির্বাচন করে, কখনো গায়েবি ভোটার তৈরি করে জনগণের নির্বাচনের অধিকার হরণ করেছিল। তিনি বলেন, বিএনপি’র মুখে নিরপেক্ষ নির্বাচন ভূতের মুখে রাম নাম। বিএনপি সেসব অপকর্ম ভুলে থাকতে চাইলেও জনগণ কিন্তু তাদের অতীত অপকর্ম ভুলে যায়নি। ‘সরকার জনগণ থেকে দূরে সরে গেছে’ বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আসলে সরকার নয়, বিএনপি’র সঙ্গে তৈরি হয়েছে জনগণের যোজন-যোজন দূরত্ব। বিএনপি এদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচনে যেমন ব্যর্থ তেমনি আন্দোলনেও ব্যর্থ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতীতে যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং জনগণের চোখে পড়ার মতো তেমন কোনো উন্নয়ন স্থাপন করতে পারে নাই, যে কারণে জনগণের সঙ্গে তাদের দূরত্ব শুরু হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, শুধুমাত্র লিপ সার্ভিস দিয়ে এবং বক্তৃতা বিবৃতিতে বিষোদ্গার করে জনগণের থেকে দূরত্ব কমানো সম্ভব নয়। তথ্য সংগ্রহের নামে নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে পুলিশ: ফখরুল ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের নামে পুলিশ দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পুলিশ বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করার নামে হয়রানি করছে। এতে দেশে বিরাজমান ভয়ের পরিস্থিতিকে আরও আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলছে। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ রাজনৈতিক কর্মীদের একজনের কাছ থেকে অন্যজনের তথ্য সংগ্রহেও লিপ্ত রয়েছে। এমন কার্যক্রমে সংবিধান, ফৌজদারি কার্যবিধি, পুলিশ আইন বা পুলিশবিধি কিংবা অন্য কোনো আইনে সমর্থনযোগ্য নয়। পুলিশের এমন কার্যক্রম একদিকে যেমন নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুণ্ন করছে, অন্যদিকে নাগরিকের আইনি অধিকার ভোগ এবং তার ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ বলে প্রতীয়মান হয়।
এ ছাড়া এটি সংবিধানের ৩১, ৩২ এবং ৪৩ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ফৌজদারি কার্যবিধির আওতায় যদি একজন পুলিশ কর্মকর্তা কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার এখতিয়ার ধারণ করে বা আমলযোগ্য অপরাধের সম্পৃক্ততার যুক্তিসঙ্গত কারণ পায় এবং সে ব্যক্তি যদি পালানোর চেষ্টা করে কিংবা তার শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার কোনো আশঙ্কা থাকে বা সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বা ৪৪ ধারায় উল্লিখিত দণ্ডবিধির কোনো অপরাধ সংঘটনের তথ্য থাকে তবেই কেবল ওই পুলিশ কর্মকর্তা একজন নাগরিকের সহযোগিতা চাইতে পারে, অন্য কোনো কারণে নয়। ৪২ এবং ৪৪ ধারা প্রয়োগ করতে গেলেও আগে প্রমাণ করতে হবে যে, নাগরিকের কাছ থেকে কোনো তথ্য বা সহযোগিতা চাইতে হলে যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে হবে এবং সে কারণ অবশ্যই উল্লিখিত আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। তিনি বলেন, চলমান অবস্থায় এটা দৃশ্যত প্রতীয়মান হয়, পুলিশ বিএনপিসহ ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনের উদ্দেশ্যে তাদের গণহারে শুধু নাম- ঠিকানা নয়, তাদের পেশা, সন্তান ও সম্পত্তির বিবরণসহ চৌদ্দ গোষ্ঠীর যাবতীয় বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে যা দেশে বিরাজমান আতঙ্কের পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলছে।
বিএনপি এ অবস্থার অবসান চায়। ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা পুলিশ কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি, এভাবে সাধারণ নাগরিক, রাজনৈতিক কর্মীদের হয়রানি বন্ধ করে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য তারা তাদের সংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সভায় যোগ দেয়ায় ভাবমূর্তি রক্ষায় লোক দেখাতে বিএনপি’র কর্মসূচিতে হামলা না করার কথা বলছে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। এ সময় সাফ জয়ী নারী ফুটবলারদের দেশের জন্য গর্ব বয়ে আনায় বিএনপি’র পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান মির্জা ফখরুল। রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার পরও আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ জাতির সঙ্গে মশকরা করছে কমিশন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এ সময় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
মানবজমিন