ফেঞ্চুগঞ্জে নির্মমতা: রানার ভয়ে বাড়ি ছাড়া হোসাইন
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০৯:০০,অপরাহ্ন ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
হাফেজ মাওলানা হোসাইন আহমদ। ফেঞ্চুগঞ্জের মানিককোনা গ্রামে বাড়ি। পার্শ্ববর্তী সুলতানপুর মসজিদের খতিব। গত ১৯শে আগস্ট প্রকাশ্য দিবালোকে হোসাইন আহমদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। হামলা দৃশ্য খুবই করুন। ভাইরাল হওয়া ভিডিও যারাই দেখেছেন তারাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। হামলা গুরুতর আহত মাওলানা হোসাইন আহমদ প্রথমে জকিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ। কিন্তু বাড়ি ফিরতে পারছেন না। ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা।
গেলেই প্রাণে মেরে ফেলা হবে- এমন হুমকির কারণে গত ২৫ দিন ধরে তিনি সিলেট নগরেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মসজিদের দায়িত্বও পালন করতে পারছেন না। গত বৃহস্পতিবার বিকালে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনের দ্বারস্থ হয়েছেন খতিব হোসাইন। জানিয়েছেন, নিরাপত্তাহীনতার কথা। এসপি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। মাওলানা হোসাইন আহমদ জানিয়েছেন, ফেঞ্চুগঞ্জের মানিককোনা গ্রামে খাস জমিতে অন্য ব্যবসায়ীদের মতো তার একটি দোকান কোটা রয়েছে। তিনি দোকান কোটা ভাড়া দিয়েছেন। সম্প্রতি গ্রামের সন্ত্রাসী ও ভূমিখেকো রানা মিয়া ওই দোকানটির সামনের অংশ তার দাবি করে এবং সেখানে টিন দিয়ে ঘেরাও করে দেয়। ফলে তার চালু হওয়া দোকানটি বন্ধ হয়ে যায়।
এ নিয়ে স্থানীয় মানিককোনা বাজার বণিক সমিতির কাছে তিনি বিচার প্রার্থী হন। সেখানে বণিক সমিতির নেতারা সালিশ বৈঠক ডেকে অযৌক্তিভাবে ২৫ হাজার টাকা রানা মিয়াকে দেয়ার কথা জানিয়ে রায় ঘোষণা করেন। এরপরও সেই রায় মেনে নেন মাওলানা হোসাইন আহমদ। কিন্তু মানেনি রানা মিয়া ও তার সহযোগীরা। বণিক সমিতির রায় মানতে টালবাহানা করায় মাওলানা হোসাইন আহমদ গত ১৯শে আগস্ট নিজেই প্রতিবন্ধক দেয়া টিন সরাতে যান। এ সময় রানা মিয়া ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাওলানা হোসাইন আহমদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। একপর্যায়ে রানার সহযোগী একই গ্রামের রুহুল আমিন রুহেল, পঙ্কি মিয়া, জালাল আহমদও তাকে মারধর করেন। ঘটনার দিনই হোসাইনের বোন কলসুমা বেগম বাদী হয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ থানায় রানা মিয়াসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার আসামি গ্রেপ্তার করতে গিয়ে মানিককোনায় রানা ও তার লোকজনের হাতে আক্রান্ত হয় পুলিশও। একপর্যায়ে পুলিশের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। তবে পুলিশ চ্যালেঞ্জের মুখে মানিককোনা বাজার থেকে রানার সহযোগী পঙ্কি মিয়া ও জালাল আহমদকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে। পরে তাদের আদালতে চালান দেয়া হয়।
পরবর্তীতে রানা ছাড়া ৩ আসামি আদালত থেকে জামিন পেয়ে এলাকায় ফিরে গেছে। মাওলানা হোসাইন আহমদ জানিয়েছেন, প্রধান আসামি রানা মিয়া এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। তার সহযোগীরা বাইরে। ফলে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি এলাকায় ফিরতে পারছেন না। ঘটনাটি জানিয়ে বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেছেন। আবেদনে তিনি প্রধান আসামি রানা মিয়া এলাকার ‘অভ্যাসগত সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। জানিয়েছেন, রানা মিয়া কুখ্যাত ভূমিখেকো। তার ভয়ে এলাকায় কেউ কথা বলে না। রানা মিয়া মানিককোনা বাজারে সুলতানপুর মৌজার জেএল নং ২৫ এর ৩০৮৭ নম্বর দাগের দেবোত্তর সম্পত্তির দেবালয় দখল করে রেখেছে। প্রায় ১০ ডিসিমিল ভূমির মূল্য অর্ধকোটি টাকা। জোরপূর্বক দেবালয়ের জায়গা দখল করে ভোগদখল করার পর এলাকার সনাতন ধর্মালম্বীদের ক্রমাগত হুমকির মুখে রাখা হয়েছে। ফলে সনাতন ধর্মের লোকেরা তাদের ভূমি নিয়ে কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পান না। একইসঙ্গে গ্রামের পাশে কুশিয়ারা নদীর জেগে ওঠা চরও দখল করে রেখেছে রানা মিয়া। এতে গাছ সৃজন করে রেখেছে। প্রকৃতপক্ষে ওই চরের মালিক গ্রামের লোকজন। কিন্তু রানা মিয়া ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে ওই জমি দখলে রেখেছে। নদীতেও করে চাঁদাবাজি। হাওরে মৎস্য খামার দখল রেখেছে রানা মিয়া। এ নিয়ে গ্রামের লোকজন প্রতিবাদ করলে উল্টো তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে।