ইসলামী ফিকহের মধ্যেই আমাদের জীবন সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:০৩:৩৩,অপরাহ্ন ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
একুশ শতকে আমরা মুসলমানরা এক নতুন পৃথিবীতে বসবাস করছি। সমাজের চেহারা পালটে গেছে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে। মূল্যবোধগুলো যথার্থ ফর্মে নেই। অনেক ওলট পালট হয়ে গেছে। সভ্যতার বিবর্তন। একটি সভ্যতার আধিপত্য ব্যাহত করে আর একটি সভ্যতার উত্থান। মুসলমানরা নতুন নতুন সমস্যার মুখোমুখি বিগত দেড় দুশো বছর থেকে। কিন্তু তার সমাধান নিজেদের জীবন বিধানে সন্ধান না করে আমরা বিজয়ী সভ্যতার পক্ষপুটে আশ্রয় নিয়েছি। আমাদের কাছে একটা জীবন বিধান আছে আল্লাহর দেয়া। যার সত্যতা বিশুদ্ধতা ও সার্বিক ক্ষমতায় সামান্যতম সন্দিহান হলেও আমাদের ঈমান খতম হয়ে যায়।
আমরা আর মুসলমান থাকতে পারি না। অথচ আমরা তাকে স্থগিত রেখেছি। অন্যের দ্বারস্থ হয়েছি। জীবন পরিচালনা করছি ইউরোপীয় খৃষ্টবাদীদের তৈরি আইনের আওতায়। আইন নিয়ে আমরা নাড়াচাড়া করছি। কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের এ আইন পড়াচ্ছি ও শেখাচ্ছি। এ আইন নিয়ে গবেষণা করছি। মোটা মোটা বই কেতাব লিখছি। পার্লামেন্টে এ আইন নিয়ে বিতর্ক করছি। দেওয়ানী ফৌজদারী আদালতে লোয়ার কোর্ট হায়ার কোর্টে সর্বত্রই এ আইনের আওতায় মামলা মোকদ্দমার ফায়সালা দিয়ে দিলে কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার থাকবে না। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অমান্য করলে সে তো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।” (আল আহযাব ঃ ৩৬)
আল্লাহর কিতাব কুরআন আমাদের জীবন ও জীবনের বিভিন্ন কর্ম তৎপরতা সম্পর্কে চূড়ান্ত ও অভ্রান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। রসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ও সাল্লাম সেই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে জীবন সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করে গেছেন। পরবর্তী হাজার বছরের অধিককাল সে ব্যবস্থা থেকে মুসলমানদের বিচ্যুতি ঘটেনি। অথচ হাজার হাজার বছরে জীবনে সমাজে রাষ্ট্রে পরিবর্তন কম আসেনি। এসব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলার জন্য ইসলামী ফিকহ্ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এই ফিক্হ ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব ও রসূলের সুন্নাহ। আল্লাহর কিতাব যে বিধান দিয়েছে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেটিই বাস্তবায়ন করেছেন। সেটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যদি আরো কিছুর প্রয়োজন হয়ে থাকে তাহলে তা তিনি আল্লাহর হুকুমে নিজের তরফ থেকে সংযুক্ত করে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, তোমাদের সংগী বিভ্রান্ত নয়, বিপথগামীও নয় এবং মনগড়া কথাও বলে না। সে যা বলে তা তার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট ছাড়া আর কিছুই নয়।’ (আন নাজম ঃ ২-৪) আল্লাহ আরো বলেছেন, ‘রসূল তোমাদের যা কিছু দেয় তা গ্রহণ করো এবং যা থেকে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাকো। আল্লাহকে ভয় করো, আল্লাহ কঠোর শাস্তি দাতা।’ (আল হাশর ঃ৭)
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও বলেছেন, ‘আমি যখন কোনো বিষয়ে তোমাদের নির্দেশ দেই, তা যথাসাধ্য পালন করো আর যে বিষয়ে বিরত থাকতে বলি তা থেকে বিরত থাকো।’ (বুখারী ও মুসলিম)। আল্লাহ ও তাঁর রসূলই হচ্ছেন ইসলামী শরীয়া এবং ইসলামী ফিক্হ ও আইন ব্যবস্থার মূল প্রবক্তা, উদ্ভাবক ও পরিচালক। এজন্য আল্লাহ নিজের নিছিদ্র ব্যবস্থাপনায় তাঁর কিতাব কুরআনকে যেমন সংরক্ষণ করেছেন সকল প্রকার ভুল ক্রটি অবক্ষয় থেকে তেমনি তাঁর রসুলের বানী ও কর্মকান্ডকেও মানবিক ব্যবস্থাপনায় সংরক্ষণ করার দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবস্থা করেছেন। এরপর এই ফিক্হ ব্যবস্থাপনার মধ্যে এমন একটি গতিশীলতা সৃষ্টি করে দিয়েছেন যার ফলে কিয়ামত পর্যন্ত শত শত হাজার হাজার বছর তা সক্রিয় ও কার্যকর থাকতে সক্ষম।
এক্ষেত্রে মু’আয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীসটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে ইয়ামনে প্রশাসক নিযুক্ত করে পাঠাবার সময় শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হলে কিভাবে তার সমাধান করবেন এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি প্রথমে আল্লাহর কিতাব থেকে সমাধান খুঁজবো। সেখানে সমাধান না পেলে রসূলের সুন্নাতে সমাধান খুঁজবো। সেখানে সমাধান না পেলে নিজের বুদ্ধিবৃত্তিক ফায়সালা দান করবো। নবী স. তাঁর এ সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেন। অর্থাৎ আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন, পর্যালোচনা ও গবেষণা এবং রসূলের বাণী ও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে হযরত মু’আযের যে মানসিক প্রবণতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক মেজাজ গড়ে ওঠে তার ভিত্তিতে তিনি নতুন নতুন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। এক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহ এবং এই উভয়ের অনুগত বুদ্ধিবৃত্তিক সিদ্ধান্ত তথা ইজতিহাদ এই তিনটিই হয় ইসলামী ফিকহের পরিচালিকা শক্তি।
মানুষের জীবন যেমন জীবন্ত ও গতিশীল ইসলামী ফিক্হও অনুরূপ একটি জীবন্ত ও গতিশীল আইন ব্যবস্থা। তাই জীবনের গতিশীলতার সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাবার ক্ষমতা তার আছে। পরিবর্তিত অবস্থায় এই আইনের প্রয়োগ তাই একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যামানা ও অবস্থার পরিবর্তন সত্তে¡ও মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য ফকীহ ও মুজতাহিদগণ কুরআন ও সুন্নাহর ব্যাখ্যা করে কিছু মূলনীতি প্রণয়ন করেছেন। প্রতি যুগে এরি ভিত্তিতে তাঁরা পরিবর্তিত অবস্থায় ফিকহী বিধান প্রয়োগ ও প্রবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। বিগত চৌদ্দ’শ বছরে ইসলাম এমন একটা সময় অতিক্রম করে এসেছে যখন মুসলমানদের মধ্যে এই ধরনের সর্বগুণ সম্পন্ন ফকীহ মুজতাহিদ ও ইসলামী ব্যক্তিত্বের কমতি ছিল না। তাঁরা কুরআন ও সুন্নাহর যথাযথ ব্যাখ্যায় পারদর্শী ছিলেন। কুরআন ও সুন্নাহ থেকে মূলনীতি উদ্ভাবন করে পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও পরিস্থিতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে জীবনের নতুন নতুন সমস্যার সমাধান করে গেছেন। ইসলামী শরীয়তের মানবিক ও সার্বিক কল্যাণকামিতা এবং ফিক্হী আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ও লক্ষের ওপর তাঁদের দৃষ্টি প্রসারিত ছিল। তাঁরা ছিলেন যামানার অশ্বারোহী। যামানা তাঁদের ওপর সওয়ার হতে পারেনি। তারা যামানার পিঠে সওয়ার হয়েছিলেন। ইসলামী মনন ও ইসলামী চিন্তা এবং আল্লাহ ও রসূলের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য ও তাকওয়া তাঁদের সমগ্র কর্মকান্ডের মধ্যে প্রাণশক্তির মতো সক্রিয় ও সচল ছিল। মানুষকে তাঁরা আল্লাহর বান্দায় পরিণত করে রেখেছিলেন। প্রবৃত্তি শয়তান ও তাগুতের বন্দেগী থেকে মানুষকে দূরে রেখেছিলেন। এই ফকীহ ও মুজতাহিদগণের ফতওয়া এবং তাঁদের রচিত ফিক্হী সিদ্ধান্ত গুলো সমকালীন মুসলিম সমাজে প্রতিষ্ঠিত সরকারের আইনের মতো ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। তাঁদের ইলমী শ্রেষ্ঠত্ব, ঈমানী বলিষ্ঠতা, তাকওয়া, চারিত্রিক দৃঢ়তা, নিস্বার্থপরতা এবং অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে আপোশহীন ভূমিকার ফলে এটা সম্ভব হয়েছিল।
যামানা পরিবর্তনশীল। কালের চাকা ঘুরছে অবিরাম গতিতে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানুষ একই অবস্থায় থাকতে পারে না। লক্ষচ্যুত আদর্শচ্যুত হয়েছে মানুষ। মুসলমানদের মধ্যে অবক্ষয় নেমে এসেছে। কুরআন সুন্নাহ বিধৃত পথ থেকে তারা বিচ্যুত হয়েছে। ফলে তাদের ওপর চেপে বসেছে আল্লাহর বিধান বিরোধী বিজাতির শাসন। সমগ্র মুসলিম বিশ্ব তলিয়ে গেছে অন্ধকারে। আল্লাহদ্রোহিতা ও আল্লাহর বিধানের প্রতি সংশয়ের বীজ বপন করে গেছে বিজাতীয় শাসকরা সমস্ত মুসলিম দেশে, বিশেষ করে তাদের প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে। আর যে দু’একটি দেশ তাদের শাসনের আওতায় আসেনি তারাও পরবর্তীকালে উন্নত বিশ্বের সাথে সমান তালে চলার তাগিদে নিজেদের মেধাবী সন্তানদেরকে সেখান থেকে শিখিয়ে পড়িয়ে এনে নিজেদের ইসলামী বিধান থেকে বিচ্যুতির দায়িত্ব সম্পন্ন করেছে।
এভাবে স্বাধীন মুসলিম বিশ্ব আজ এক সংশয় এবং ঈমান ও কুফরীর দ্ব›েদ্বর কাল অতিক্রম করছে। ইসলামের কিছু আনুষ্ঠানিকতা বজায় আছে। নামায পড়ার জন্য মসজিদ আছে। মসজিদে আযান হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামায হয়। মুসলমানদের একটা ক্ষুদ্র অংশ এই মসজিদগুলোয় যায়। বৃহত্তম অংশ নামায না পড়েও মুসলমান থাকছে। রমযানে মুসলমানদের একটা অংশ রোযা রাখে। তবে ঈদের নামাযে যায় সবাই। যাকাত দেবার প্রতি মুসলিম ধনীদের আগ্রহ কম। কেউ কেউ যাকাত দেয় হিসাব না করেই। কাপড়ের কয়েকটা গাঁটরী এনে ফকির মিসকিনদের মধ্যে বিলি করে দায়মুক্ত হয়। হজ্জ্বের মওসূমে সারা মুসলিম বিশ্বে হজ্জ্ব করার রেওয়াজটা জারি আছে উৎসবের আমেজে।
এভাবে ইসলামের এই আনুষ্ঠানিকতার দিক দিয়ে মুসলমানদেরকে কিছুটা চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু বাকি সমগ্র জীবনের কর্মকান্ডের কোনো পরোয়া নেই তাদের। সেখানকার করে কর্তৃত্ব চলছে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের, না প্রবৃত্তির শয়তানের ও তাগুতের? তা দেখার প্রয়োজন বোধ করে না তারা। অথচ মুসলমান থাকতে চায় সবাই। সারা বিশ্বে ইসলাম ও মুসলমানদের ওপর কুফরীর আক্রমনকে সবাই অনুভব করে। কিন্তু দুর্বল ও সংশয়িত ঈমান তাদেরকে দুর্বলচিত্ত করে দিয়েছে। কুফরের আক্রমনকে কুফরীর পায়ে মাথা ঠেকিয়ে ঠেকানো যাবে না। আল্লাহ পূর্বাহ্নেই বলে দিয়েছেন দ্ব্যর্থহীন ভাষায়, ‘ইহুদি ও খৃষ্টানরা তোমার প্রতি কখনোই সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মাদর্শ অনুসরণ করো।’ (আল বাকারা ঃ ১২০)
কাজেই পাশ্চাত্য তথা পশ্চিমা বিশ্বের ইহুদি ও খৃষ্টান চক্রের আধিপত্য থেকে মুসলমানদের পরিত্রান লাভ করতে হবে। এ আধিপত্য বিশেষ করে শিক্ষা ও আইনের ক্ষেত্রে। আমাদের আইন প্রণয়নের ও সমাজ গঠনের নিজস্ব উন্নত অত্যাধুনিক ব্যবস্থা আছে। হাজার বারো’শ তেরো’শ বছর পর্যন্ত আমরা আমাদের দেশ ও মিল্লাতকে এর মাধ্যমে পরিচালিত করে এসেছি। আমাদের মধ্যে অনেক ঘাটতি আছে। অনেক কিছুর অভাব আছে আমাদের। কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দেয়া মূল সম্পদ কুরআন ও সুন্নাহ এখনো আমাদের কাছে অপরিবর্তিত অবস্থায়। এর প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস এখনো স্থায়ী। আর সবচাইতে বড় কথা হচ্ছে, বিগত হাজার বারো’শ বছরের ফকীহ মুজতাহিদ কাজী ও মুফতীগণের ফতওয়া, ইজতিহাদ, ফিক্হ চর্চা ও সিদ্ধান্ত দানের নজির কেতাবের বড় বড় ভলিউম আকারে আমাদের এখানে মওজুদ আছে। এগুলো ধ্বংস ও অন্তরহিত হয়ে যায়নি। এখনো এগুলোর চর্চা আছে। মুসলিম জনগণের একটা বিশাল অংশ এখনো এর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখে। তারা এর মাধ্যমে নিজেদের জীবন পরিচালনা করার প্রয়াসী। শতাব্দী ব্যাপী বিজাতীয় শাসন ও আইন ব্যবস্থার প্রচন্ড দাপটের মধ্যেও মুসলিম পারিবারিক আইনের নিরবচ্ছিন্ন জনপ্রিয়তা এরই প্রমাণ।
কাজেই আজকের স্বাধীন পরিবেশে যেখানে আমরা মুসলমানরা নিজেরাই নিজেদেরকে শাসন করছি সেখানে আমাদের জীবনের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, নৈতিক, সাংস্কৃতিক তথা সকল ক্ষেত্র গড়ে তোলায় এবং সকল ক্ষেত্র শাসন ও পরিচালনায় অন্যের দ্বারস্থ না হয়ে আমাদের নিজস্ব ফিক্হী ব্যবস্থাকে ব্যবহার করা উচিত। পাশ্চাত্য আইনের তুলনায় ইসলামী ফিক্হী ব্যবস্থার ব্যাপকতা অনেক বেশি। পাশ্চাত্য আইন যেখানে ধর্মীয় ও নৈতিক এবং এই ধরনের জীবনের অনেক একান্ত বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে অক্ষম এবং এগুলোকে মানুষের প্রাইভেট লাইফ আখ্যায়িত করে সমাজ ও মানুষের মধ্যে বিভেদ ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করে সেখানে ইসলামী ফিক্হ ধর্মীয় ও নৈতিক সহ জীবনের সকল ক্ষেত্রকেই নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে। ফলে ধর্মে ধর্মে, মানুষে মানুষে এবং দেশি বিদেশির মধ্যে কোনো বিভেদ বিশৃংখলা সৃষ্টি হয় না। বিগত বারো’শ বছর ইসলামী বিশ্বে ইসলামী শরীয়া ও ইসলামী ফিকহের শাসন এর জ্বলন্ত প্রমাণ। এই বারো’শ বছরের পৃথিবী আমাদের সা¤প্রতিক কালের দু’শ বছরের পৃথিবীর মতো এমন অশান্ত, অস্থির ও জ্বলন্ত অংগার সদৃশ্য ছিল না।
ইসলামী ফিকহের মূল লক্ষ্য হলো মানুষের ও মানবতার কল্যাণ। মানুষকে দায়িত্ব সচেতন করা, মানুষের অধিকার পুরোপুরি আদায় করা, জুলুম না করা এবং জুলুম থেকে মানুষকে রক্ষা করা। জালেমকে প্রতিহত করা, মজলুমকে সহায়তা করা এবং ইনসাফ ও সামাজিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত করাই ইসলামী ফিকহের উদ্দেশ্য। মুসলমানদের জন্য এক মানদন্ড এবং অমুসলমানদের জন্য আর এক মানদন্ড এ ফিক্হী ব্যবস্থায় কল্পনাই করা যায় না। কারণ এখানে আল্লাহর কাছে জবাবদিহির ভাবধারা সব সময় কার্যকর থাকে। একুশ শতকের সচেতন বিশ্ব সমাজের সামনে আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র গুয়ানতানামোয় মুসলিম বন্দীদের সাথে যে বর্বরোচিত অমানবিক ব্যবহার করছে এবং আল্লাহর পাক কালাম কুরআনের অবমাননা করে একটি ভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি তাদের ঘৃণা প্রকাশের যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছে তা কেবল পাশ্চাত্যের অমানবিক ও জুলুমতান্ত্রিক আইনের কারণেই সম্ভব হয়েছে। মুসলমানদের এ থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। আমাদের নিজস্ব আইনের দিকেই আমাদের ফিরে আসা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। ইসলামী ফিকহের মধ্যে আমরা আমাদের জীবনের ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ভারসাম্যপূর্ণ সমাধান খুঁজে পাবো এতে কোনো সন্দেহ নেই।